জাতীয়

জাহাজে খাবার আছে ২৫ দিনের, পরিবহনরত কয়লা নিয়ে শঙ্কা

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ’য় ২০ থেকে ২৫ দিনের মতো খাবার আছে। এছাড়া বিশুদ্ধ পানি রয়েছে ২০০ টন। তবে দাহ্য হওয়ায় জাহাজে পরিবহনরত ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।

Advertisement

জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা মো. আতিকউল্লাহ খান এক অডিও বার্তায় জাহাজটির মালিকপক্ষ এস আর শিপিং’র কর্মকর্তাদের এসব তথ্য জানিয়েছেন। ভারত মহাসাগরে জলদস্যুরা যখন এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছিল, তখন কৌশলে তিনি এই বার্তা পাঠান।

আতিকউল্লাহ খান বলেন, ‘প্রক্সিমেটলি ২০–২৫ দিনের প্রোভিশন (রসদ) আছে স্যার। ২০০ মেট্রিক টন ফ্রেস ওয়াটার আছে। আমরা অলরেডি সবাইকে বলছি ফ্রেস ওয়াটার সেফলি ব্যাবহার করতে। প্রোভিসনও (রসদ) আমরা ওভাবে হ্যান্ডেল করবো।’

জাহাজে থাকা ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের একটা প্রবলেম হচ্ছে, আমাদের জাহাজে কোল কার্গো আছে। অ্যাবাউট ফিফটি ফাইভ থাউজ্যান্ডস। এটি একটু ডেইঞ্জারাস কার্গো, এটা হেজার্ড আছে। এটার মিথেন কনসেনট্রেশন বাড়ে। সর্বশেষ অক্সিজেন লেভেল ৯-১০ পার্সেন্ট ছিল। এটা রেগুলার আপডেট নিতে হয়। ইনক্রিজ হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন হবে।’

Advertisement

এসময় তিনি কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান।

ওই অডিও বার্তায় জাহাজে জলদস্যুদের হামলার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘গ্রিনিচ মান সময় ৭টা ৩০ মিনিট (বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা)। এই সময় একটা হাই স্পিডবোট (দ্রুতগতির স্পিডবোট) আমাদের দিকে আসতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে আল্যার্ম দেই। আমরা সবাই ব্রিজে গেলাম। ক্যাপ্টেন স্যার আর জাহাজের দ্বিতীয় কর্মকর্তা ব্রিজে ছিলেন তখন। আমরা এসওএস (জীবন বাঁচানোর জরুরি বার্তা) করলাম। ইউকে এমটিওতে (যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন) যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। তারা ফোন রিসিভ করেনি। এরপর ওরা (জলদস্যুরা) চলে এলো।’

আতিক উল্লাহ খান বলেন, ‘তারা ক্যাপ্টেন স্যার ও দ্বিতীয় কর্মকর্তাকে ঘিরে ফেললো। আমাদের ডাকলো। আমরা সবাই এলাম। এ সময় কিছু গোলাগুলি করলো। সবাই ভয় পেয়েছিলাম। সবাই ব্রিজে বসে ছিল। তবে কারও গায়ে হাত দেয়নি। এর আগে জিম্মি করা ইরানের মালিকানাধীন একটি মাছ ধরার জাহাজ দিয়ে তারা সাগরে বড় জাহাজ খুঁজতেছিল। আমাদের জাহাজটি থামিয়েছে তারা। জাহাজের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমাদেরও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’

আরও পড়ুন

Advertisement

জিম্মি নাবিকের শেষবার্তা: টাকা না দিলে মেরে ফেলবে, শুনে মূর্ছা যাচ্ছেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী

সর্বশেষ বুধবার (১৩ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে নাবিকদের একজন ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ পরিবর্তিত পরিস্থিতির অবস্থা জানিয়ে তার ভাতিজাকে ভয়েস মেসেজ করেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সোমালিয়া নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা আগামীকাল সেখানে পৌঁছাবো। যতটুক কথা হয়েছে, সেখানে আমাদের অপর একটি পার্টির কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

সোমালিয়া নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জিম্মি জাহাজ/সূত্র: বিএমএমওএ

মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহতে জিম্মি আছেন ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে জাহাজটি জলদস্যুর কবলে পড়ে। এরপর বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জাহাজটি ভারত মহাসাগর থেকে সোমালিয়া নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে দস্যুরা। বর্তমানে নাবিকদের ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

এমভি আব্দুল্লাহ দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজ। এর দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্ত ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। প্রথমে জাহাজটির নাম ছিল ‘গোল্ডেন হক’। বাংলাদেশের কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পর এর নাম হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’। এটি একটি বাল্ক কেরিয়ার।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশি জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে, দায়িত্ব নেবে অন্য জলদস্যুরা

বুধবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে এমভি আবদুল্লা সোমালিয়া উপকূল থেকে প্রায় ২৭৫ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল। আগামী ২৪ থেকে ৩০ ঘণ্টার মধ্যে সোমালিয়ার কোনো বন্দরে নোঙর করা হতে পারে জাহাজটি।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন ‘জলদস্যুদের নিজস্ব চ্যানেল আছে। কয়েকটি গ্রুপ ভাগ হয়ে এ কাজটি করে। যারা জাহাজ ছিনতাই করেছে তারা সোমালিয়া বন্দরে নিয়ে গিয়ে অন্য পার্টির কাছে দিয়ে দেবে। তারাই মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।’

‘আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এখন পর্যন্ত সেই ধরনের মেসেজ আসেনি। তাদের পদক্ষেপ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। বাংলাদেশি নাবিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।’ বলেন মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন।

এএজেড/ইএ/এএসএম