ভ্রমণ

আমিয়াখুমে ঘুরতে যাওয়ার সেরা সময় কখন, পৌঁছাবেন কীভাবে?

দেশের সবচেয়ে সুন্দর এক জলপ্রপাত। বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলায় অবস্থিত একটি অসাধারণ জলপ্রপাতের নাম আমিয়াখুম। এটি যেমন সুন্দর এক স্থান ঠিক তেমনই দেশের দুর্গম জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম। সবুজে মোড়া পাহাড় আর পাথরের বাঁধা পেরিয়ে তুমুল বেগে নিচে নেমে আসা শীতল পানির ধারার অপূর্ব এক দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন সেখানে গেলে।

Advertisement

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা আমিয়াখুম জলপ্রপাত অনেকের কাছে পেয়েছে বাংলার ভূ-স্বর্গ নামেও পরিচিত। পর্যটকরা এই ঝরনার রূপে মুগ্ধ হয়ে একে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর জলপ্রপাত হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।

কখন যাবেন আমিয়াখুম?

আমিয়াখুমের সৌন্দর্য দেখতে সব সময়ই পর্যটকরা ভিড় করেন। তবে বর্ষায় আমিয়াখুমের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়। তখন আবার পাহাড়ের দূর্গমতার মাঝে আমিয়াখুমে পৌঁছানোও কষ্টকর।

Advertisement

একই সঙ্গে ভরা বর্ষায় সাঙ্গু নদীর পানি বেশি থাকে ও ফ্লাশ ফ্লাড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে বিবেচনা করে তবেই যাওয়া উচিত। ট্রেকিং করতে হয় বলে শীতকালে যাওয়া কিছুটা সুবিধাজনক।

আমিয়াখুম কীভাবে যাবেন?

প্রথমেই যেতে হবে বান্দরবানে। এরপর থানচি উপজেলা হয়ে আমিয়াখুম যেতে হয়। থানচি থেকে দুইপথে আমিয়াখুম যাওয়া যায়। থানচি-পদ্মঝিরি-থুইসাপাড়া-দেবতাপাহাড়-আমিয়াখুম। অন্যটি হলো থানচি-রেমাক্রি-নাফাখুম-জিনাপাড়া-থুইসাপাড়া-দেবতাপাহাড়-আমিয়াখুম।

প্রথম পথে শুধু পদ্মঝিরিতেই প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা ট্রেকিং করতে হয়, এমনকি রাতের বেলাতেও ট্রেকিং করতে হতে পারে। প্রথম রুট দিয়ে অনেকে গেলেও দ্বিতীয় রুট তুলনামূলক সুবিধাজনক। এছাড়া আপনি পদ্মঝিরি দিয়ে গিয়ে রেমাক্রি হয়ে আসতে পারবেন।

Advertisement

বান্দরবান শহর থেকে বাস বা জীপে চড়ে থানচি উপজেলা যেতে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা সময় লাগে। সেখানে গিয়ে একজন গাইডকে সঙ্গে নেবেন। কারণ গাইড ছাড়া আমিয়াখুম যাওয়ার অনুমতি পাওয়া যাবে না। এরপর থানচি হতে নৌকা রিজার্ভ নিয়ে চলে যেতে হবে রোমাক্রি বাজারে।

যদি দুপুরের মধ্যে রোমাক্রির পৌঁছাতে পারেন তাহলে দ্রুত ২-৩ ঘণ্টা ট্রেকিং করলেই নাফাখুম ঝরনায় পৌঁছাতে পারবেন। সেখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে থুইসা পাড়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ুন। থুইসা পাড়া পৌঁছাতে রাত হলে জিনাপাড়াতেই রাত কাটিয়ে নেবেন।

আরও পড়ুন

পিরামিড তৈরির পেছনে লুকিয়ে আছে যে রহস্যএকদিনে ভ্রমণের জন্য সেরা এক গন্তব্য ‘মুছাপুর ক্লোজার’

সেখানে রাত কাটিয়ে থানচি গাইডসহ আরও একজন লোকাল গাইড নিয়ে খুব সকালে বেড়িয়ে পড়ুন আমিয়াখুমের পথে। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা সময় লাগবে আমিয়াখুম ঝরনায় পৌঁছাতে।

সেখানে গেলে ভেলাখুম ও সাতভাইখুমেও ঘুরে আসতে পারেন। দুপুরের খাবারের জন্যে আগেই ব্যবস্থা করে রাখুন। ফিরতি পথে আমিয়াখুম থেকে থুইসা পাড়ায় রাত কাটিয়ে আগের মতো করে অথবা ভিন্ন রুট ধরে থানচি ফিরে আসুন। সেখান থেকে বান্দরবান ফিরে নিজ গন্তব্যে চলে আসুন।

কোথায় থাকবেন ও খাবেন?

থানচির পর যেখানেই থাকতে চান তাহলে আপনাকে স্থানীয় আদিবাসীদের ঘরে থাকতে হবে। আমিয়াখুমে যেতে আদিবাসী পাড়া মধ্য দিয়েই যেতে হবে। সাধারণত থাকতে হলে রেমাক্রি, নাফাখুম পাড়া, জিনাপাড়া ও থুইসা পাড়ায় রাত্রীযাপন করা হয়। থাকার ব্যাপারে আপনার গাইডই সব ব্যবস্থা করে দিবে।

স্থানীয় আদিবাসীদের ঘরেই খেতে হবে। পর্যটকদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন প্যাকেজে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। কোথায় কি খাবেন তার জন্যে গাইডের সঙ্গে আগেই পরামর্শ করে নিন। জুম চালের ভাত, সবজি, ডাল, পাহাড়ি মুরগী, আলু ভর্তা এরকম খাবারের প্যাকেজ অনুযায়ী খেতে পারবেন।

আর সঙ্গে অবশ্যই শুকনো খাবার যেমন- বিস্কুট, চকলেট, চিড়া, মুড়ি, খেজুর এমন সব খাবার নিয়ে যাবেন। পুরো যাত্রাপথে কঠিন পরিশ্রমের ট্রেকিং করতে হবে।

সূত্র: ভ্রমণ গাইড

জেএমএস/এএসএম