ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পশ্চিমা বিশ্ব। এরপরই রাশিয়ার অর্থনীতি নিয়ে নেতিবাচক পূর্বাভাস দেওয়া হয়। ২০২২ সালের বসন্তের সময় রাশিয়ার অর্থনীতিতে ধস নামবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই দিন কখনোই দেখেনি ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ।
Advertisement
যদিও দেশটির অর্থনীতি মন্দার কবলে পড়েছে কিন্তু সেটা কখনই মারত্মক পর্যায়ে ছিল না, এমনকি বেশি দিন স্থায়ীও হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় মূল্যস্ফীতি। গত বছর দেশটিতে বেশি দাম বাড়ে। তবে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ফেব্রুয়ারিতে পুতিন কর্মকর্তাদের মূল্যস্ফীতির দিকে বিশেষ নজর দিতে বলেন।
মনে করা হচ্ছে, আবারও হতাশাবাদীদের ভুল প্রমাণ করবে রাশিয়ার অর্থনীতি। ধারণা করা হচ্ছে, মাসেরভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। যদিও তা গত বছরের শেষের দিকের তুলনায় এক দশমিক এক শতাংশ কম। অনেক অর্থনীতিবিদই বলছেন, রাশিয়ার মূল্যস্ফীতি কমে ৪ শতাংশে নেমে আসতে পারে। রাশিয়ার আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় তারপরও এতে খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না পুতিন।
আরও পড়ুন>
Advertisement
ইউক্রেনে হামলা জোরদার করেছেন পুতিন। অস্ত্র সরঞ্জাম থেকে শুরু করে সেনাদের বেতন পর্যন্ত বাড়িয়েছেন তিনি। সবকিছু মিলিয়ে রিয়াল টার্মে সরকারে ব্যয় বেড়েছে ৮ শতাংশ পর্যন্ত। দেশটিতে অর্থনীতির চেয়ে পণ্য ও সেবার চাহিদা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।
ফলে চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছে দাম। তাছাড়া যুদ্ধের মধ্যে থাকার কারণে রাশিয়ায় কর্মী পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ হাজার হাজার মানুষকে যুদ্ধের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং একই সঙ্গে বহু রাশিয়ান দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। বার্ষিকভিত্তিতে গত অক্টোবরে মজুরি বাড়ে ১৮ শতাংশ, যা গত বছরের শুরুর দিকের ১১ শতাংশের তুলনায় বেশি। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নানা ধরনের মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্য দেশের তুলনায় রাশিয়া এক্ষেত্রে এখনো ভালো অবস্থানে রয়েছে। অর্থনীতির ওপর বড় কোনো চাপ ছাড়াই ধীরে ধীরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনছে রাশিয়া। দেশটির অর্থনীতি ইউক্রেন যুদ্ধের প্রায় আগের পর্যায়ে চলে গেছে। গত বছর রিয়াল টার্মে প্রবৃদ্ধি হয় ৩ শতাংশের বেশি। বেকারত্বের পরিমাণও কম। করপোরেট ক্ষেত্রে নেই তেমন কোনো হতাশা।
অতীতের উদ্দীপনা থেকে সুবিধা পেয়েছে রাশিয়ার অর্থনীতি। করপোরেশন থেকে শুরু করে হাউজহোল্ডগুলো অর্থ জমাতে পেরেছে। ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ও তারা ব্যয় করতে পেরেছে। তাছাড়া উচ্চ সুদ হারের মধ্যেও কেউ ঋণখেলাপি হয়নি।
পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিকে রাশিয়া বেকায়দায় থাকলেও ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় নেয়নি। বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মাধ্যমে দেশটি তাদের সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে পেরেছে। চাহিদার অর্ধেকের বেশি পণ্য চীন থেকে আমদানি করে পুতিন প্রশাসন, যা ইউক্রেন যুদ্ধের আগের চেয়ে দ্বিগুণ।
Advertisement
পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চীন ও ভারতের কাছে মূল্যছাড়ে তেল বিক্রি করছে রাশিয়া। বিশেষ করে চীনের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্য বেড়েছে কয়েকগুণ। শুধু তেল নয়, চীনে আইসক্রিম রপ্তানিও বাড়িয়েছে মস্কো।
এমএসএম