অর্থনীতি

বাংলাদেশ ব্যাংককে ক্ষমতায়ন করার সময় এসেছে: এ কে আজাদ

দেশ থেকে টাকা পাচার এবং খেলাপি ঋণ আদায় না হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্ষমতাকে দায়ী করলেন সংসদ সদস্য ও ব্যবসায়ী নেতা এ কে আজাদ। রোববার (১০ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা চেম্বার আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নেন এফবিসিসিআইর সাবেক এ সভাপতি। এসময় এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।

Advertisement

আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কে আজাদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে ক্ষমতায়ন করতে হবে। এখানে এক ব্যক্তি একটি ব্যাংক থেকে ১২০০ কোটি টাকা নিয়ে দেশের বাইরে চলে গেলেন। এটা নিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এটা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘ওই ব্যক্তি ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে গেলেন, তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো? এখন পর্যন্ত জানা গেল না। অথচ দেশে ডলার সংকট চলছে। ডলারের দাম নিয়ে বাজারের যে দর আছে সেটাতে ডলার পাওয়া যায় না। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম দিয়েছে ১০৯ টাকা, আর আমি বাজার থেকে ডলার কিনেছি ১২৪ টাকায়। তার ওপরে ভ্যাট, ট্যাক্স, চার্জ দেওয়া হয় সেটাও পরিশোধ করেছি। এগুলো হয়েছে মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতায়ন ঘাটতির কারণে। আবার বলা হয় সব দোষ ব্যবসায়ীদের। তবে এসব সমস্যা দূর করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে ক্ষমতায়ন করার সময় এসেছে।’

সরকারের কিছু ব্যয় অপচয় ইঙ্গিত করে এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ২৫ শতাংশের ওপরে। আবার এসব ব্যাংকে সরকারি বাজেট থেকে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। এসব টাকা জনগণের করের টাকা। কেনো এ টাকা ভর্তুকি দেবে, এর কারণ কি?’

Advertisement

রাজস্ব আয় নিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে যেভাবে রাজস্ব বাড়াতে কথা বলা হচ্ছে এখানে এনবিআরের একা রাজস্ব আহরণ সম্ভব না। এজন্য দরকার রাজনৈতিক সাপোর্ট।

তিনি বলেন, দুর্বল ও সবল ব্যাংক নিয়ে যত কথা হয়েছে কিন্তু সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন ব্যাংকে কাকে বসাবো। মুহিত সাহেব আক্ষেপ করে বলেছিলেন জনতা ব্যাংক অনেক ভালো ছিল, বিশ্বাস করে আবুল বারাকাতকে যোগ্য মনে করে দিলাম। কিন্তু তিনি সবল জনতা ব্যাংকে শেষ করে দিলেন।

আমদানি-রপ্তানি নিয়ে তিনি বলেন, জনগণের জন্য বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করা হয়। কারণ আমরা আমদানিনির্ভর একটি দেশ। আমরা ভারত থেকে ১২ বিলিয়ন ও চীন থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করি। প্রতিবেশী দেশে রপ্তানিতে তাদের উৎসাহিত করা হয়, ডলার সহায়তা দেওয়া হয়। আমাদের দেশে ডলার পাওয়া যায় না। ভারত একটি প্রদেশে বিনিয়োগের জন্য ৮০ ভাগ খরচ বহন করবে, এতে বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হচ্ছে। আমাদের দেশেও বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দেওয়া দরকার।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাডেমিক কারিকুলামের কঠোর সমালোচনা করেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার পার্থক্য তুলে ধরেন। উদাহারণ দিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শত বছর ধরে পালি ও তার কাছাকাছি কিছু বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে। এসব বিষয় যেখানে পড়ানো হয়, জনগণের করের টাকায় সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তুকি দেওয়া হয়। এসব অর্থ অপচয়ের মানে হয় না। আমাদের এখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) দরকার। সেগুলো না করে কেনো বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ। এগুলোর বাস্তবতার মিল কোথায়, এগুলো ভেবে দেখা দরকার। দেশে বেকারের সংখ্যা ২ কোটি, কিন্তু দক্ষ জনবল পাচ্ছে না দেশ। বাইরের ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ আমাদের দেশে চাকরি করছেন। তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ এ দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছেন।

Advertisement

ইএআর/এমআইএইচএস/জিকেএস