নারীদের সমঅধিকার নিশ্চিত করা হচ্ছে মানবাধিকার নিশ্চিত করা, এমন মন্তব্য করে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেছেন, দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানিতে অন্তত একজন নারী স্বতন্ত্র পরিচালক থাকা উচিত।
Advertisement
রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কার্যালয়ে ‘রিং দ্যা বেল ফর জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ডিএসই, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি), ইউএন গ্লোবাল কমপ্যাক্ট, সানটেনেবল স্টক এক্সচেঞ্জ, ইউএন ওম্যান এবং দ্যা ওয়াল্ড ফেডারেশন অফ এক্সচেঞ্জ যৌথভাবে এ সেমিনার আয়োজন করে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবুর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
Advertisement
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার নারীদের উন্নয়নে কাজ করছে। একই সঙ্গে সমাজের মনস্তত্ত্বও পরিবর্তন করতে হবে। পাশাপাশি পুরুষ সহকর্মী যারা আছেন তাদেরও নারীদের প্রতি সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। নারীদের যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে নারী-পুরুষের সমতার কথা বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেয়েদের ক্ষমতায়নে খুবই আন্তরিক। আমি যখন ১০ বছর আগে প্রথম পার্লামেন্টে নির্বাচিত হয়ে আসি, তখন তিনি এনার্জি-পাওয়ার সেক্টরসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কাজে লাগিয়েছেন আমাকে। নারীদের উন্নয়নে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানিতে অন্তত একজন নারী স্বতন্ত্র পরিচালক থাকা উচিত। নারীদের সমঅধিকার নিশ্চিত করা হচ্ছে মানবাধিকার নিশ্চিত করা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সেই কাজ করেছেন বলেই আজকে দেশের বিভিন্ন সর্বোচ্চ পর্যায়ে নারী রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাওয়ায় আমরা অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। তাই আজকের নারীদের আত্মবিশ্বাসী হওয়া খুবই জরুরি।
তিনি বলেন, নারী ক্ষমতায়ন শুধু সরকার বা নীতির মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এটা সমাজ থেকেই করতে হবে। সরকার হয়ত নীতি তৈরি করে দেবে, কিন্তু সেটা আমাদেরই বাস্তবায়ন করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। নারীরা স্বল্প সময়ে একাধিক কাজ করার যোগ্যতা রাখে। কর্মক্ষেত্রে যদি তারা কাজের ভালো পরিবেশ পায় তবে তাদের দিয়ে অনেক কঠিন কাজও করানো সম্ভব হয়।
Advertisement
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, আল্লাহ পৃথিবীতে নারী ও পুরুষকে আলদা আলাদা যোগ্যতা দিয়ে তৈরি করেছেন। শুধু সঠিক বিষয়টি করলেই হবে না, সেটা স্মার্টভাবে শেষ করতে হবে। আজকের যে আলোচনার বিষয় তা একেবারে সময়োপযোগী।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব ক্ষেত্রে নারী সমতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কর্মক্ষেত্রে তাদের কাজের ও যোগ্যতা প্রকাশের পাশাপাশি অধিকারও নিশ্চিত করা হচ্ছে। লেখক বলেছেন, নারীরা যদি সফল হন তবে তারা নিজেকে নিরাপদ ও সফল মনে করেন। কেউ যদি এক চোখ দিয়ে কোনো কিছু দেখে তবে তার ধারণা যেরকম হবে, সেটা দু-চোখ দিয়ে দেখলে আলাদা ধারণা পাওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সব ক্ষেত্রে নারীদের এগিয়ে নিয়ে আসার জন্য কাজ করছি। উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে কোনো প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র পরিচালক পর্যন্ত এখন নারীরা কাজ করছেন। করপোরেট গভর্নেন্সের কোড অনুযায়ী নারীদের আমরা প্রাধান্য, সুযোগ, দায়িত্ব দিচ্ছি। পুরুষদের পাশাপাশি তাদের জন্য আলাদা বিনিয়োগ এবং উদ্যোক্তাদের ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। নারীরা যেন বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারেন আমরা সে সুযোগ করে দিয়েছি এবং কাজ করে যাচ্ছি।
সভাপতির বক্তব্যে ডিএসই চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ হাসান বাবু বলেন, আজকে আমরা আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করছি। যেখানে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা আমাদের দেখিয়ে গেছেন কীভাবে একটি স্বাধীন দেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখা যায়।
তিনি বলেন, যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জেলে ছিলেন তখন বঙ্গমাতা বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন জাতিকে। সেখানে দেখা গেছে কীভাবে একজন নারী নেতৃত্ব গ্রহণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু দেশকে স্মার্ট করেননি, বরং দেশে যে লিঙ্গ বৈষম্য ছিল তা-ও দূর করেছেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে নারীরা বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করছেন। অনেক ক্ষেত্রে একটি কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যেগুলো মূলত শহর পর্যায়ে। তবে এখনো গ্রাম এবং পুরো সমাজে অনেক ক্ষেত্রে নারীদের কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যা দূর করতে প্রধানমন্ত্রী কাজ করছেন।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, যতক্ষণ না নারীদের সঠিক ভূমিকা নিশ্চিত করা যায় ততক্ষণ দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। যে জন্য প্রধানমন্ত্রী সব ক্ষেত্রে নারীদের কাজের পরিবেশ নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে এখন পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও কাজ করছেন। তাই আমাদেরও উচিত প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের কাজের পরিবেশ নিশ্চিতে নীতিগুলো সেভাবে তৈরি করা।
ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, প্রতি বছরের ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এটি একটি আন্তর্জাতিক দিবস, যা নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক অর্জনকে স্বীকৃতি দিতে পালিত হয়। নারীদের জন্য বিনিয়োগ, তাদের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা এবং এমন একটি বিশ্ব গড়ে তুলতে কাজ করা যেখানে লিঙ্গ বৈষম্য নির্বিশেষে প্রত্যেক ব্যক্তির উন্নতির সুযোগ রয়েছে। এটি লিঙ্গ সমতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ন প্রচারের একটি দিন।
তিনি বলেন, এ বছর নারী দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘নারীতে বিনিয়োগ: অগ্রগতি ত্বরান্বিত করুন’। লিঙ্গ সমতা অর্জন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নারীদের বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীরা যখন শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, আর্থিক সংস্থান এবং কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ পায়, তখন তারা সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি ও সমাজে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।
ডিএসই এমডি বলেন, নারী নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে, সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়ন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর জন্য সমর্থন করেছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক কল্যাণ, নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশগত স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি চিহ্নিত করা হয়েছে। তার প্রচেষ্টা বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং স্থিতিস্থাপকতায় অবদান রেখেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় একটি গতিশীল ও দূরদর্শী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান তৈরি করেছে।
এমএএস/এমকেআর/জিকেএস