অর্থনীতি

বাংলাদেশের শিল্পায়নের অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা আমজাদ খান: অর্থমন্ত্রী

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল (অব.) আমজাদ খান চৌধুরীকে বাংলাদেশের শিল্পায়নের ক্ষেত্রে অন্যতম একজন স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

Advertisement

তিনি বলেন, আমজাদ খান চৌধুরী উত্তর বাঙালির একজন সম্মানিত প্রতিনিধি। উত্তর বাংলায় শিল্পায়নের জন্য তিনি কাজ করছিলেন। সেখান থেকে আমি অনেকটাই শিক্ষাগ্রহণ করি এবং সেটা পরবর্তী সময়ে আমার কাজে লাগে। সেজন্য আমি সবসময় ঢাকা চেম্বার এবং অন্য চেম্বারগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলি।

রোববার (১০ মার্চ) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘প্রাক-বাজেট আলোচনা : বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোর যৌথভাবে এ সভা আয়োজন করে।

আরও পড়ুন

Advertisement

কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করেছেন আমজাদ খান চৌধুরী ব্যবসায়ীদের অভিভাবক ছিলেন আমজাদ খান চৌধুরী

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতেই অর্থমন্ত্রী বলেন, ঢাকা চেম্বারের সঙ্গে আমার পরিচয় বহুদিনের। আমি রাষ্ট্রদূত হয়ে জার্মানি যাচ্ছি, তখন তাদের সঙ্গে আমার একটা বিশেষ বৈঠক হয়, যেখানে জেনারেল আমজাদ আমাকে ব্রিফ করেছিলেন, অন্য সদস্যরাও ছিলেন।

তিনি বলেন, এই যে বাংলাদেশ, আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ, স্বাধীন বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ- এ দেশটার উন্নয়নের জন্য যার যার অবস্থান থেকে কিন্তু সাহায্য করা যায়। সব জায়গা থেকে সাহায্য করা যায়। আমার কর্মজীবনে দেখেছি এটা কতটা সত্যি। যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন অত্যন্ত জরুরি।

অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে আগামী জাতীয় বাজেট নিয়ে কিছু ভাবনার কথাও জানান। তিনি বলেন, আমাদের সরকার বেসরকারি খাতকে অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করে। বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের জন্য সরকার বরাবরই সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রেও বেসরকারি খাতের মতামত ও প্রত্যাশাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।

তিনি বলেন, আমাদের সরকারের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও টেকসই স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। এ লক্ষ্য অর্জনে বেসরকারি খাতের অংশীদারত্ব অপরিহার্য। আমরা বিশ্বাস করি বেসরকারি খাতের উন্নয়নের মাধ্যমেই দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন সম্ভব হবে।

Advertisement

আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, আমাদের সরকার বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও প্রসারে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আয়কর, মূসক ও শুল্ক সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন ও সংস্কারের মাধ্যমে কর কাঠামোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, অটোমেশন, কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ, ঋণের সুদ হার যৌক্তিক করা, অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং ব্যবসায়ীদের জন্য নানা ধরনের প্রণোদনার ব্যবস্থা করা।

তিনি বলেন, আমাদের এই পদক্ষেপগুলো আরও কীভাবে সুচারুভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশাকরি পদক্ষেপগুলো বেসরকারি খাতের উন্নয়নে সহায়ক হবে। আমরা চাই বেসরকারি খাত আরও বেশি বৃদ্ধি পাক এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও বেশি ভূমিকা পালন করুক।

অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের অবদান ক্রমশ বাড়ছে। বেসরকরি খাতের উন্নয়ন ও প্রসারে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে গেলেও কিছু কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়ন প্রয়োজন। আমরা বাজেটে সে বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করছি। এ লক্ষ্যে আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। এরই মধ্যে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে ৫০ লাখ টাকার পরিবর্তে ১০ লাখ বা তার বেশি মূসক পরিশোধে ই-পেমেন্ট, ই-চালান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

আমজাদ খান চৌধুরী মেমোরিয়াল হাসপাতালে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প বাপার নিজস্ব কার্যালয় দেখে বেশি খুশি হতেন আমজাদ খান চৌধুরী

তিনি বলেন, পাইকারি পণ্য ও সেবা পর্যায়ে ইএফডিএমএস’র মাধ্যমে মূসক জাল সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রাথমিক পর্যায়ে সাত হাজার এবং ক্রমান্বয়ে তিন লাখ ইএফডিএমএস মেশিন স্থাপনের লক্ষ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়ন, কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন, সহজ ও দ্রততম সময়ে সেবা প্রদান, কার্যকর অবকাঠামগত ও মানবসম্পদ উন্নয়নের কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য রাজস্ব বৃদ্ধি, সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, দেশের আর্থিক খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আমদানির বিকল্প শিল্প প্রতিষ্ঠাসহ অন্য উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডগুলোকে এ বছর বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, আমরা আশাকরি এই পদক্ষেপগুলো বেসরকারি খাতের প্রসারসহ আমাদের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আগামী জাতীয় বাজেট বেসরকারি খাতের জন্য একটি উৎসাহব্যঞ্জক বাজেট হবে। আমরা বেসরকারি খাতের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে তাদের সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছি।

ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ’র সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম প্রমুখ।

এমএএস/এমকেআর/জিকেএস