সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোট গণনার শেষ পর্যায়ে এসে সব পদে ভোট পুনর্গণনার আবেদন করেছেন বিএনপি-সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
Advertisement
শনিবার (৯ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টায় ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী আবুল খায়ের বরাবর এই আবেদন করেন।
আবেদনে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আমি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। গত ৬ ও ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে সভাপতি পদের একজন প্রার্থী। আমার নিয়োজিত এজেন্টরা ভোট গণনার সময় অনিয়মের বিষয়ে মৌখিক আপত্তি ও অভিযোগ জানান।’
তিনি বলেন, ‘আজ ভোট গণনাকালে আমার প্রাপ্ত অনেকগুলো ভোট আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ভোট হিসেবে গণনা করে ফলাফল শিট প্রস্তুত করা হয়। উল্লেখ্য, তাৎক্ষণিক আপত্তি দাখিল করলে নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা আমার এজেন্টের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন এবং অভিযোগ আমলে না নিয়ে ভোট গণনা সম্পন্ন করেন। এছাড়াও ১০০ বান্ডেলের অনেক বান্ডেলে ১৩০টি পর্যন্ত ব্যালট পাওয়া যায় ও গণনা করা হয়। এ প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে সভাপতি এবং সম্পাদকসহ সব পদে ভোট পুনর্গণনার আবেদন জানাচ্ছি।’
Advertisement
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুদিনব্যাপী নির্বাচনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের পর ফলাফল ঘোষণা নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্যপট তৈরি হয়। বৃহস্পতিবার রাতেই ভোট গণনার পক্ষে সোচ্চার হন সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী। তবে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সম্পাদক প্রার্থী শাহ মনজুরুল হক শুক্রবার বিকেল ৩টায় ‘দিনের আলোতে’ ভোট গণনা চাচ্ছিলেন। এ বিষয় নিয়েই একপর্যায়ে দুপক্ষের সমর্থকদের মাঝে হট্টগোল শুরু হয়।
আরও পড়ুন• ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল গ্রেফতার
শুক্রবার ভোরে মারামারির ঘটনাও ঘটে। যেখানে একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলকে আক্রমণ করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। যেটি ‘বহিরাগতের হামলা’ হয়েছে বলে অনেকে দাবি করেন। একপর্যায়ে গণনা ছাড়াই শুক্রবার সকালে নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী আবুল খায়ের সম্পাদক পদে নাহিদ সুলতানা যুথীকে বিজয়ী ঘোষণা করে বলেন, ‘শুধুমাত্র নাহিদ সুলতানা যুথী সম্পাদক প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন, তাই তাকে সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণা করা হলো।’
তবে গণণা ছাড়া সম্পাদক পদে এক প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণার বিষয়টি শনিবার প্রত্যাহার করে নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘‘একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভোট গণনার পূর্বেই দুঃখজনকভাবে বহিরাগত মস্তানশ্রেণি কর্তৃক আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করে লিখিত দিতে বাধ্য করা হয়। যদিও এটি অর্থহীন ঘোষণা, তবুও কূটতর্ক নিরসনের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাহা ‘ইগনোর’ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ভোট গণনা করেই ফলাফল ঘোষণা করা হবে।’’
Advertisement
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলার পর বিএনপি-সমর্থিত এক আইনজীবীকে গ্রেফতার ও কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার ভোরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে আক্রমণের শিকার হয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুর রহমান চৌধুরী সাইফ তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শুক্রবার রাতে মামলাটি করেন। যেখানে এই নির্বাচনের স্বতন্ত্র সম্পাদক প্রার্থী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথী ও বিএনপির প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ ২০ জনকে আসামি করা হয়।
শুক্রবার রাতেই এই মামলার আসামি বিএনপি-সমর্থিত ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আর নাহিদ সুলতানা যুথীর বাসায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) অভিযান চালিয়ে কয়েজনকে আটক করে। এরপর শনিবার সন্ধ্যায় বিএনপি-সমর্থিত সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ১৪ জনের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি, দুজন সহ-সভাপতি, সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, দুজন সহ-সম্পাদক এবং সাত জন সদস্য নির্বাচিত হবেন। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন সাত হাজার ৮৮৮ জন। আর প্রার্থী ছিলেন ৩৩ জন।
এফএইচ/ইএ