☞ দেশের সব কর্মক্ষেত্রেই বাড়ছে নারীর অংশগ্রহণ☞ অধস্তন আদালতের বিচারকের এক-তৃতীয়াংশই নারী
Advertisement
দেশে বিচারিক কাজে নারীর অংশগ্রহণ ক্রমশ বাড়ছে। অর্ধশত বছর আগে দেশে নারী বিচারক ছিলেন মোটে একজন। বর্তমানে দেশের বিচারিক (অধস্তন) আদালতে বিচারকাজে নিয়োজিত আছেন ৫৯২ জন নারী বিচারক। যদিও এক বছর আগে দেশের বিচারিক আদালতে বিচারকাজে নিয়োজিত ১০ থেকে ১২ জনের মতো কম ৫৮০ জন ছিলেন। এ সংখ্যা চলতি বছরে বেড়েছে। অফিসিয়াল হিসাবে ৫৯২ জন। সেটি ছয় শতাধিক হবে।
তবে বিচারকাজে নারীরা দক্ষতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। অধস্তন আদালতে এখন নারী বিচারকের সংখ্যা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। সংশ্লিষ্টরা আশা করেন এ সংখ্যা ভবিষ্যতে (নারী-পুরুষ) সমান সমান না হলেও আরও বাড়াবে নারী বিচারক।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানা গেছে, বর্তমানে অধস্তন আদালতে বিচারকের সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে পুরুষ বিচারকের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার আর নারী বিচারকের সংখ্যা প্রায় ৬ শতাধিক।
Advertisement
‘গত কয়েক বছরে বিচারিক আদালতে নারী বিচারকের সংখ্যা বেড়েছে। বিচারকাজে ভালো করছেন নারীরা। তবে, উচ্চ আদালতে আরও নারী বিচারক হওয়া দরকার।’— আইনমন্ত্রী
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের স্পেশাল অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোছাইন জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে জেলা জজ থেকে শুরু করে সহকারী জজ পদ পর্যন্ত ৫৯২ জন নারী বিচারক কর্মরত আছেন। অর্থাৎ অধস্তন আদালতের মোট বিচারকের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অধস্তন আদালতে নারী বিচারকের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। সেই হিসেবে দেশে নারী বিচারকের এ সংখ্যা পর্যাপ্ত। তবে, তাদের প্রত্যাশা এ সংখ্যা আরও বাড়বে। এছাড়া দেশের সব কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে বলে জানান রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন☞ সর্বোচ্চ বিচারালয়ে আলো ছড়ানো ১০ নারী বিচারপতি☞ ১০ মন্ত্রণালয়-বিভাগে নারী সচিব, নারী ডিসি ৭ জন☞ জয়িতা সম্মাননা পেলেন সংগ্রামী ৫ নারী
তবে, উচ্চ আদালতে নারী বিচারক তুলনামূলক কম হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তারা। তারা বলেন, উচ্চ ও সর্বোচ্চ আদালতে আরও বেশি নারী বিচারক আসা উচিত। উচ্চ ও সর্বোচ্চ আদালতে বিচারপতি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন, এমন অনেক নারী বিচারক অধস্তন আদালতে কর্মরত আছেন।
Advertisement
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘গত কয়েক বছরে বিচারিক আদালতে নারী বিচারকের সংখ্যা বেড়েছে। বিচারকাজে ভালো করছেন নারীরা। তবে, উচ্চ আদালতে আরও নারী বিচারক হওয়া দরকার।’
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, দেশের উচ্চ আদালতে আরও নারী বিচারক আসা উচিত। নারীরা বিচারক হিসেবে খুব ভালো করছেন। এ জন্য জুডিসিয়ারিতে নারীদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আমার ধারণা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারী বিচারকের সংখ্যা পুরুষের সমান হয়ে যাবে। এক সময় হয়তো সংখ্যার দিক দিয়ে পুরুষদের ছাড়িয়েও যেতে পারে। নারীরা জুডিসিয়ারিতে অনেক ভালো করছে।
‘নারী বিচারকরা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের স্কিল ডেভেলপের চেষ্টা করছি। উন্নত বিচার বিভাগ তৈরিতে সবার সঙ্গে আমরাও থাকতে চাই। মূলত নারী বিচারকরা অনেক বেশি স্বাধীনতার সঙ্গে বিচারকাজ পরিচালনা করে থাকেন। যার কারণে নিষ্পত্তি ও রায় আদেশ সবই কোয়ালিটিফুল হয়। তবে, নারী বিচারকরা সুন্দর কর্ম-পরিবেশ প্রত্যাশা করেন।’— মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব আবেদা সুলতানা
দেশের বিচারিক নিম্ন আদালতে কত সংখ্যক নারী বিচারক কর্মরত আছেন জানতে চাইলে বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও আইন কমিশনের লেজিসলেটিভ ড্রাফটসম্যান (অতিরিক্ত জেলা জজ) আবেদা সুলতানা বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের হিসেবে ৫৯২ জন। অফিসিয়াল হিসাব এটা। আর যারা নতুন জয়েন্ট করেছেন, তাদের গেজেট দেখে দেখে কাউন্ট করি। হয়তো অনেকে সুইচ করতে পারে কেউ কেউ জয়েন্ট করতে নাও পারে ছুটিতে থাকার কারণে। কিন্তু আমাদের জয়েন্টলি আমরা ৬ শতাধিক বিচারক। গত বছর আমরা ছিলাম ৫৮০ জনের মতো। এর মধ্যে তো অনেকে অবসরে গেছেন। যদিও আমাদের কাছে কোন সঠিক তথ্য নেই। তারপরেও তিন-চারজন অবসরে চলে যান বলেও জানান তিনি। এখন হয়তো অবসরে কম যাচ্ছেন, ভবিষ্যতে বেশি যাবে। এটা হয়তো নির্ভর করে কোন ব্যাচে কতজন নারী জয়েন্ট করেছেন।
আরও পড়ুন☞ নারী সুরক্ষার প্রধান অন্তরায় ভুক্তভোগীর বিচার না চাওয়া☞ ফেব্রুয়ারিতে নারী-শিশুর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে☞ ধর্ষণকাণ্ডে জড়িতদের বিচার দাবিতে উত্তাল জাহাঙ্গীরনগর
তিনি বলেন, অন্যসব বিচারকরা যেভাবে কাজ করেন আমরাও সেভাবে করি। নারী বিচারক যারা আছি, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের স্কিল ডেভেলপের চেষ্টা করছি। উন্নত বিচার বিভাগ তৈরিতে আমরাও সবার সঙ্গে থাকতে চাই। আমরা চাইবো বিচার বিভাগে নারীর সংখ্যা বাড়ুক। জুডিসিয়ারির প্রতি নারীরা আরও বেশি আকৃষ্ট হোক। বেশি করে জয়েন্ট করুক। নারী বিচারকরা অনেক বেশি স্বাধীনতার সঙ্গে বিচারকাজ পরিচালনা করে থাকেন। যার কারণে নিষ্পত্তি ও রায় আদেশ সবই কোয়ালিটিফুল হয়। তবে, নারীরা সুন্দর কর্ম-পরিবেশ প্রত্যাশা করেন বলেও জানান তিনি।
‘বিচার বিভাগ, প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী প্রত্যেক ক্ষেত্রেই নারীরা এগিয়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা টপ লেভেলেই বসছেন। প্রধানমন্ত্রী নারীর অগ্রযাত্রা ও ক্ষমতায়নে সবধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন।’— অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথমে ক্ষমতায় আসার পরে একজন নারীকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে মনোনীত করেন। ওনার মতামত অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ দেন। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন নারী হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। পরে তিনি পরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে অবসরে যান।
তিনি বলেন, দেখেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নারীদের উনি (প্রধানমন্ত্রী) অন্তর্ভুক্ত করেছেন। দেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবেও উনি একজন নারীকে মনোনীত করেছেন। সচিবালয়ে কয়েকজন নারী সচিব আছেন। এছাড়া বিচার বিভাগ, প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী প্রত্যেক ক্ষেত্রেই নারীরা এগিয়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা টপ লেভেলেই বসছেন। প্রধানমন্ত্রী নারীর অগ্রযাত্রা ও ক্ষমতায়নে সবধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
এফএইচ/এমএএইচ/এএসএম