আইন-আদালত

সর্বোচ্চ বিচারালয়ে আলো ছড়ানো ১০ নারী বিচারপতি

দেশের সবকাজে পুরুষের পাশাপাশি এগিয়ে নারীও। এগিয়ে চলছে নারী, এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। বর্তমান সমাজে নারী সেকালের বৃত্তে বন্দি নেই। অর্থনীতি, শিক্ষা, কৃষিসহ সবক্ষেত্রে সমানতালে অবদান রাখছেন নারীরা। নিজের দক্ষতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে পুরুষের সঙ্গে বিভিন্ন কাজ করছেন তারা। তেমনি দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় সুপ্রিম কোর্টেও আলো ছড়াচ্ছেন নারী বিচারপতিরা।

Advertisement

দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে নিজেদের মেধা, যোগ্যতা আর প্রজ্ঞা দিয়ে বিচক্ষণতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন তারা। নিজেদের পেশায় স্বমহিমায় উদ্ভাসিত তারা।

এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে অবসর নিয়েছেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ। এছাড়া হাইকোর্ট বিভাগে দক্ষতা, যোগ্যতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন সাত নারী বিচারপতি।

তারা হলেন- বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি কাশেফা হোসেন, বিচারপতি ফাতেমা নজিব, বিচারপতি কাজি জিনাত হক ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদের।

Advertisement

সর্বোচ্চ আদালতের শীর্ষ পর্যায়ে আসতে তাদের পার করতে হয়েছে নানা প্রতিকূলতা, বাধা-বিপত্তি। তবে সবকিছু জয় করে তারা এখন দেশের ও বিচার বিভাগের ইতিহাসের অংশ।

দেশের সবক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছেন নারীরা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর থেকে স্পিকার, বিচারপতি, সরকারের কর্ম-কমিশন, সেনা, পুলিশ থেকে বাহিনীর সর্বত্র নারীর অগ্রযাত্রা হচ্ছে বলে জাগো নিউজকে জানান রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল) আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ইতিহাসে প্রথম নারী বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। তিনি ২০১৭ সালের ৮ জুলাই অবসরে যান। আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘অনুভূতি অনেক ভালো। আমি আমার কাজের স্বীকৃতি পেয়েছি। প্রথম নারী বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলাম। হাইকোর্টেও প্রথম বিচারপতি হিসেবে এসেছিলাম। এবার আপিল বিভাগে প্রথম বিচারপতি হিসেবে এলাম। আমি মনেকরি, আমার এ নিয়োগ দেশে নারীর ক্ষমতায়নে অবদান রাখবে।’

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা১৯৫০ সালের ৮ জুলাই মৌলভীবাজারে জন্মগ্রহণ করেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। বাবার নাম মরহুম চৌধুরী আবুল কাশেম মইনুদ্দিন। মায়ের নাম মরহুমা বেগম রাশিদা সুলতান দ্বীন।

Advertisement

শৈশব কাটিয়েছেন ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে। পরে ময়মনসিংহ সদরের বিদ্যাময়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৬৭ সালে মুমিনুন্নেসা উইমেন্স কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ময়মনসিংহ ল’ কলেজে থেকে ১৯৭২ সালে এলএলবি ডিগ্রি নেন।

১৯৭৫ সালের আগে বিচার বিভাগে কোনো নারীর চাকরির সুযোগ ছিল না। নাজমুন আরা সুলতানাই প্রথম ১৯৭৫ সালের ২০ ডিসেম্বর সহকারী জজ হিসেবে নিয়োগ পান। তিনিই দেশের প্রথম নারী বিচারক। নিম্ন আদালত থেকে ধীরে ধীরে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে তিনি পা রাখেন।

মুনসেফ হিসেবে নাজমুন আরা সুলতানা খুলনা, নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ সালে সাবজজ হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে তিনি টাঙ্গাইল, চাঁদপুর ও ফরিদপুরে কাজ করেন। কয়েক দফা পদোন্নতির পর ১৯৯১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা জজ হিসেবে যোগ দেন। কোনো নারীর জেলা জজ হওয়ার ঘটনা সেটাই প্রথম। ২০০০ সালের ২৮ মে তিনি হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এর দুই বছর পর হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হন তিনি। সর্বশেষ ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি আপিল বিভাগের প্রথম নারী বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন।

সেনানিবাসে খালেদা জিয়ার বাড়ি নিয়ে মামলা, বিএনপির আমলে বাদ পড়া ১০ বিচারপতির মামলা, আপিল বিভাগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মামলায়ও তিনি বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়া তিনি আন্তর্জাতিক নারী আইনজীবী সংস্থায় দু’বার সদস্য সচিব নিযুক্ত হন। তিনি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মেলনে ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড, ইতালি, জাপান, আমেরিকা, ইরান, ইরাক ও ইংল্যান্ড সফর করেন।

আরও পড়ুন☞ ১০ মন্ত্রণালয়-বিভাগে নারী সচিব, নারী ডিসি ৭ জনজয়িতা সম্মাননা পেলেন সংগ্রামী ৫ নারীপ্রথমবার ফ্লাইট পরিচালনায় পাইলট থেকে শুরু করে সবাই নারী

অবসর প্রাপ্ত বিচারপতি জিনাত আরাবিচারপতি জিনাত আরা মরহুম এইচএমআর সিদ্দিকী ও মরহুম বেগম আয়েশা সিদ্দিকীর মেয়ে। তিনি ১৯৫৩ সালের ১৫ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল আব হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন।

তিনি ১৯৭৮ সালের ৩ নভেম্বর বিচার বিভাগে মুনসেফ হিসেবে চাকরি শুরু করেন। এরপর ১৯৯৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে তিনি পদোন্নতি পান। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক নিযুক্ত হন। ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি হাইকোর্টের বিচারক পদে নিয়োগ পান। ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ পান। পরে ২০২০ সালের ১৪ মার্চ তিনি অবসরে যান।

তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন স্কুল ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট কোর্স করেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক সেমিনার ও ট্রেনিংয়ের জন্য বেইজিং, সাংহাই, আমেরিকা, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ভারত, পাকিস্তান, পানামা, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড সফর করেন।

রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে তিনি বেলজিয়াম, ইরাক, কুয়েত, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, জর্দান, সিরিয়া, সিঙ্গাপুর ও ইংল্যান্ড সফর করেন।

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথকিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পুড্ডায় দীনেশ চন্দ্র দেবনাথের গ্রামের বাড়ি। তবে বাবার কর্মস্থল রাজবাড়ী মুনসেফ কোয়ার্টারে ১৯৫৫ সালের ১০ অক্টোবর জন্ম নেন কৃষ্ণা দেবনাথ। ১৯৭০ সালে সিলেট গার্লস স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন (মাধ্যমিক) পাস করেন তিনি। রংপুর বেগম রোকেয়া কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন।

তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরে রাজশাহী জেলা আইন সমিতিতে আইন পেশা শুরু করেন। এরপর ১৯৮১ সালের ৮ ডিসেম্বর জুডিসিয়াল সার্ভিসে মুনসেফ (সহকারী জজ) হিসেবে নিয়োগ পান কৃষ্ণা দেবনাথ। ১৯৯৮ সালের ১ নভেম্বর জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি।

২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি ঢাকার জেলা জজ হিসেবে দায়িত্ব পান। তিনি ঢাকা জেলার প্রথম নারী জেলা জজ। পরবর্তীতে ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। দুই বছর পর তিনি স্থায়ী হন। এরপর একই বছরের ৯ জানুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন তিনি। ২০২২ সালের ৯ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে অবসরে যান বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ।

বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরীআপিল বিভাগের মতো হাইকোর্ট বিভাগেও পিছিয়ে নেই নারী বিচারপতিরা। হাইকোর্টের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী তাদের একজন। সাবেক বিচারপতি এটিএম মাসুদ ও আমিনুন নেসার বড় সন্তান তিনি। ১৯৫৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন সালমা মাসুদ চৌধুরী।

১৯৮১ সালের ২২ আগস্ট সালমা মাসুদ চৌধুরী ঢাকা জেলা জজ আদালতে আইন পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৮৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হন। ১৯৯৬ সালের ১৪ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।

সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০০২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সালমা মাসুদ চৌধুরী হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক নিযুক্ত হন। এর দুই বছর পর তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

সালমা মাসুদ চৌধুরী আইন চর্চার জন্য কমনওয়েলথ সচিবালয় কর্তৃক আয়োজিত মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে আইনসভা বিষয়ক ড্রাফটিং কোর্স করেন। পাকিস্তানের লাহোরে আন্তর্জাতিক নারী আইনজীবী সম্মেলনে তিনি তার লেখা ‘মুসলিম পারিবারিক আইন ও বাংলাদেশের নারী’ শিরোনামের গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন।

বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ২৩তম আন্তর্জাতিক নারী আইনজীবী সংস্থা আয়োজিত সম্মেলনে ‘ড্রাগ অ্যাবিউস অ্যান্ড রেমিডিয়াল মেজার্স ইন বাংলাদেশ’ রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। এ রিপোর্ট তিনি কেনিয়ায়ও উপস্থাপন করেন।

বিচারপতি হওয়ার পর সরকারি উদ্যোগে তিনি ‘ইসলাম ও নারী’ শীর্ষক সম্মেলনে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর, ইন্দোনেশিয়ার জার্কাতা ও দক্ষিণ এশিয়ার ইসলামী আইনবিদদের সম্মেলনে যোগ দেন। এছাড়া কাঠমান্ডু ও লন্ডনে আন্তর্জাতিক নারী বিচারক সংস্থা আয়োজিত সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ হার্ট ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি ও নির্বাহী সচিবের দায়িত্বে আছেন।

আরও পড়ুন☞ ‘নারী সব পারে, যদি সে উদ্যোগী হয়’শখ থেকে মাইমুনার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প‘নারীর ক্ষমতায়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা জরুরি’

বিচারপতি ফারাহ মাহবুববিচারপতি ফারাহ মাহবুব ১৯৬৬ সালের ২৭ মে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মাহবুবুর রহমান। মায়ের নাম বেগম ফিরোজা বেগম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও এলএলএম পাস করেন।

১৯৯২ সালে তিনি জেলা আদালতে আইন পেশা শুরু করেন। তিনি ১৯৯৪ সালের ১৫ অক্টোবর হাইকোর্টে এবং ২০০২ সালের ১৫ মে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০০৪ সালের ২৩ আগস্ট তিনি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি নিযুক্ত হন। ২০০৬ সালে তিনি হাইকোর্ট বিভাগে পূর্ণাঙ্গ বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

তিনি ২০১০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেন। এছাড়া ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দুবাই, জার্মানি ও সৌদি আরব সফর করেন তিনি।

বিচারপতি নাইমা হায়দারবিচারপতি নাইমা হায়দার সাবেক বিচারপতি মরহুম বদরুল হায়দার চৌধুরী ও বেগম আনোয়ারা চৌধুরীর মেয়ে। তিনি ১৯৬২ সালের ১৯ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে পড়াশুনা করেন। এছাড়া কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কেল বিশ্ববিদ্যালয় ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন।

তিনি ১৯৮৯ সালে জেলা আদালতে আইন পেশায় যোগ দেন। ১৯৯৩ সালে হাইকোর্টে আইনজীবী এবং ২০০৪ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন।

তিনি ২০০৯ সালের ৬ জুন হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০১১ সালের ৬ জুন হাইকোর্টের পূর্ণ বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান।

তিনি বর্তমানে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

নাইমা হায়দার দেশে-বিদেশে অন্তত ২০টি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেন। এছাড়া তিনি আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, সৌদি আরব, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, পর্তুগাল, অস্ট্রিয়া, পোল্যান্ড, তুরস্ক, চায়না, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা সফর করেন।

বিচারপতি ফাতেমা নজীবঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএলবি) ডিগ্রি অর্জন করা ফাতেমা নজীব ১৯৮৪ সালের ১২ নভেম্বর জুডিশিয়াল সার্ভিসে মুনসেফ (সহকারী জজ) হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ২০১১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর নরসিংদীর জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান।

বেগম ফাতেমা নজীব ২০১৮ সালের ৩১ মে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০২০ সালের ৮ জুন তাকে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

বিচারপতি কাশেফা হোসেনহাইকোর্টের বিচারপতি কাশেফা হোসেন। তিনি ইংরেজি বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া লন্ডনেও একই বিষয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর ১৯৯৫ সালে জেলা আদালতে আইন পেশায় যোগ দেন।

২০০৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন কাশেফা হোসেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

আরও পড়ুন☞ ‘নারীর কাজের সুযোগ হয়েছে, কিন্তু সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়নি’দেশ পেরিয়ে এখন বিদেশেও যাচ্ছে সুমির পাটের ব্যাগকর্মজীবী নারীরা বিশ্বের কোনো দেশেই সমানাধিকার পান না: বিশ্বব্যাংক

২০১৩ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট তিনি হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

বিচারপতি কাজী জিনাত হককাজী জিনাত হক একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাসৈনিক সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কাজী এবাদুল হক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. শরীফা খাতুনের কনিষ্ঠ কন্যা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে প্রথম বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর লাভ করেন। এরপর ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও এলএলএম করেন।

তিনি লন্ডনের সাউথ ব্যাংক ইউনিভার্সিটি থেকে আইনে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা এবং লন্ডনের ইনস অব কোর্ট স্কুল অব ল’ থেকে বার ভোকেশনাল কোর্সে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। এরপর জিনাত হক লন্ডনের সোসাইটি অব মিডল টেম্পল থেকে ব্যারিস্টার অ্যাট ল’ হিসেবে ডাক পান।

১৯৯৭ সালের ৬ আগস্ট অধস্তন আদালতের আইনজীবী হিসেবে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। ২০০০ সালের ১৮ জুন হাইকোর্টে তালিকাভুক্ত হন। এরপর ২০১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিসের অনুমতি পান।

তিনি দুই মেয়াদে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর কাজী জিনাত হক হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

বিচারপতি কাজী জিনাত হক বাবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কাজী এবাদুল হকের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে বই লিখেছেন। ২০১৯ সালে হাক্কানি পাবলিশার্স থেকে বইটি প্রকাশিত হয়।

বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরহাইকোর্টের বিচারপতি ফাহমিদা কাদের। ৩২ বছর দেশের বিভিন্ন আদালতে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮১ সালে ঢাকার অগ্রণী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৮৩ সালে হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (সম্মান) ডিগ্রি নেন। তিনি আইন বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।

১৯৯১ সালের ১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসে সহকারী জজ (প্রবেশনার) হিসেবে যোগদান করেন। বিচারক নিয়োগের ওই পরীক্ষায় তিনি তৃতীয় স্থান অর্জন করে নিজ মেধার সাক্ষর রাখেন।

সহকারী জজ হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাঁচ বছর পরই ১৯৯৬ সালে প্রথম পদন্নোতি পেয়ে সিনিয়র সহকারী জজ হিসেবে কুমিল্লার আদালতে যোগদান করেন। ২০০৩ সালে দ্বিতীয় পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে যুগ্ম জেলা জজ হিসেবে চাঁদপুরে যোগ দেন। ২০০৪ সালে অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০১৪ সালে সিলেটের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বিভাগীয় স্পেশাল জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তাকে ২০১৭ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০২০ সালের জুলাই মাস থেকে গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত টাঙ্গাইলের জেলা জজ ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে বিচারিক দায়িত্ব পালন করার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২২ সালের ৩১ জুলাই তাকে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাকে এ নিয়োগ দেন। বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ উইমেন জাজেস অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ভারত, ইউএসএ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সভা-সেমিনারে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

এফএইচ/এমএএইচ/এএসএম