জাতীয়

‘প্রশাসনে নীতি-নির্ধারণী পদের যোগ্য অনেক নারী কর্মকর্তা আছেন’

প্রশাসনে নীতি-নির্ধারণী পদের যোগ্য অনেক নারী কর্মকর্তা আছেন। তাই এসব পদে আরও বেশি সংখ্যক নারী কর্মকর্তার পদায়নের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন ক্যাডার সার্ভিসের নারী কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের মহাসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানা।

Advertisement

জাগো নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সায়লা ফারজানা প্রশাসনে নারী কর্মকর্তাদের অবস্থান মূল্যায়ন করে বলেন, ‘প্রশাসনে ১০ জন সচিব, ৭ জন জেলা প্রশাসক, তিনজন পুলিশ সুপার নারী। গত ৫/৬ বছর এভাবেই যাচ্ছে। সংখ্যা খুব একটা বাড়েনি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের ডিসিশন মেকিংয়ে (নীতি-নির্ধারণী পদ) যাওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। সেই সুযোগটা প্রসারিত করেছেন আমাদের মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব, জনপ্রশাসন সচিবসহ সিনিয়র স্যাররা। সেজন্যই নারী কর্মকর্তারা এ সুযোগগুলো পাচ্ছেন। সেজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী ও স্যারদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘আরও অনেক যোগ্য নারী কর্মকর্তা আছেন, যারা এসব নীতি-নির্ধারণী পদে যাওয়ার মতো। আমরা আশা করছি এ সংখ্যা আরও বাড়বে। বাড়ার মতো অনেক কম্পিটেন্ট নারী অফিসার আছেন। নারীদের দায়িত্ব দিলে তারা কিন্তু কন্ট্রিবিউট করছে। সবশেষ নারী অর্থ সচিব (ফাতিমা ইয়াসমিন) কাজ করেছেন, ইআরডির একজন নারী সচিব ছিলেন। কয়েকজনের কথা বলতে পারবো। তারা অত্যন্ত সুনাম ও যোগ্যতার সঙ্গে কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী দেখেশুনেই তাদের নিয়োগ দিয়েছিলেন।’

আমরা নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে নারী কর্মকর্তাদের বলি, আপনারা বলার অভ্যাস করেন। বলেন, আমি ওর দ্বারা বুলিং বা জেলাসির শিকার। তবে যিনি বুলিং করেন তিনি কিছুটা হলেও নিরুৎসাহিত হবেন। মনে করবেন ঘটনা তো প্রকাশ হয়ে যাবে। এ কাজগুলো আমরা নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে করি।

Advertisement

নারী দিবসে তার প্রত্যাশার কথা জানিয়ে বলেন, আমরা চাই, আরও পদায়ন করা হোক। সচিব, ডিসি ও এসপি পদে এ সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে। নীতি-নির্ধারণী জায়গায় যারা আছেন, তারা যদি আরেকটু বিবেচনায় নেন যে, নারী কর্মকর্তাদের দিলে আউটকাম ভালো আসবে, তাহলে দেওয়ার মতো আরও আছে। আমরা আশা করছি ভবিষ্যতে এসব জায়গায় আরও নারী কর্মকর্তা পাবো। আমাদের স্যাররাও জানেন যে দেওয়ার মতো আরও ভালো কর্মকর্তা আছেন। আশা করি আস্তে আস্তে বাড়বে।’

নারী কর্মকর্তাদের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে সায়লা ফারজানা বলেন, ‘নারীদের ওয়ার্কপ্লেসে কাজ করতে হয়, সে কিন্তু পরিবারের কাজগুলোও ইগনোর করতে পারে না। দুটোকেই সমান গুরুত্ব দিতে হয়, এজন্য নারীকে বেশি অ্যাফোর্ট দিতে হয়। এজন্য মানুষ হিসেবে, কর্মী হিসেবে...সে একজন কর্মকর্তা আবার বাসায়ও তার দায়িত্ব আছে। তাই নারীকর্মীকে পুরুষের চেয়ে বেশি অ্যাফোর্ট দিতে হয়।’

আরও পড়ুন• প্রশাসনে সততা-শৃঙ্খলা চর্চায় এগিয়ে নারীরামাঠ প্রশাসনে চ্যালেঞ্জে নারী কর্মকর্তারানারী পুরুষের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ চাই

বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের কার্যক্রমের বিষয়ে মহাসচিব বলেন, ‘এ দুটো জায়গা সমন্বয় করতে গিয়ে কোথাও যাতে ঘাটতি না হয়, সেজন্য তাদের মোটিভেট করি আমরা বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে। আরও বেশি অ্যাফোর্ট দিয়ে কীভাবে দুই জায়গাকে ব্যালেন্স করা যায়, সে বিষয়গুলো আমরা আলোচনা করি। গল্প করি, গল্প করতে করতে অনেকের মোটিভেশন, কনফিডেন্স চলে আসে।’

Advertisement

‘রিয়েল লাইফ ঘটনাগুলো নিয়ে আমরা যখন গল্প করি, একজনের সফলতার গল্প বলি তখন একজন উৎসাহিত হয়, হ্যাঁ এটা তো করা যায়, এত ভেঙে পড়া যাবে না।’

নারী কর্মকর্তারা অনেক সময় প্রতিহিংসা ও হয়রানির শিকার হন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এসব ক্ষেত্রে নারী কর্মকর্তারা মুখ খোলে না, চুপ করে থাকে। মনে করে, আমি প্রকাশ করলে মনে হয় আমি বিব্রত হবো, আমারা দোষ হবে। এক্ষেত্রে হয় কী- যিনি বুলি বা জেলাস করেন তিনি আরও উৎসাহিত হন। আমরা নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে নারী কর্মকর্তাদের বলি, আপনারা বলার অভ্যাস করেন। বলেন, আমি ওর দ্বারা বুলিং বা জেলাসির শিকার। তবে যিনি বুলিং করেন তিনি কিছুটা হলেও নিরুৎসাহিত হবেন। মনে করবেন ঘটনা তো প্রকাশ হয়ে যাবে। এ কাজগুলো আমরা নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে করি।’

নারীরা পরিচ্ছন্নভাবে ও আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করতে চায়। অন্যায় কিছু করার ক্ষেত্রে তাদের লজ্জার ভয় থাকে। কিন্তু পুরুষ সহকর্মী হয়তো এটা সেভাবে ভাবেন না। তাই হয়তো নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে হয়তো দুর্নীতি করার প্রবণতা কম। এছাড়া মেয়েদের প্রমাণ করে দেখাতে হয় যে, সে ভালো কর্মকর্তা, আমি দুর্নীতি করি না।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘খুব দৃশ্যমান কিছু করছি না। তারপরও কর্মকর্তারা উইমেন নেটওয়ার্কে এলে কিছুটা হলেও রিচার্জ হয়ে যায়। অনেকে আমাদের ভুল বুঝে মনে করে আমরা বার্গেনিং অ্যাসোসিয়েশন। আসলে কিন্তু তা নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা এখন দূর-দূরান্তে গিয়ে কাজ করে। পাহাড়ে, নদীতে, উপকূলীয় জেলায় গিয়ে কাজ করে। আমরা তাদের খোঁজ-খবর রাখি, তাদের ফোন দেই। সে একটু উৎসাহিত হয়।’ এ প্রশ্নের জবাবে বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের মহাসচিব বলেন, ‘নারীরা পরিচ্ছন্নভাবে ও আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করতে চায়। অন্যায় কিছু করার ক্ষেত্রে তাদের লজ্জার ভয় থাকে। কিন্তু পুরুষ সহকর্মী হয়তো এটা সেভাবে ভাবেন না। তাই হয়তো নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে হয়তো দুর্নীতি করার প্রবণতা কম। এছাড়া মেয়েদের প্রমাণ করে দেখাতে হয় যে, সে ভালো কর্মকর্তা, আমি দুর্নীতি করি না।’

প্রশাসনের নারী কর্মকর্তাদের কর্মপরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘সচিবালয়ে যদি বলি সেখানে ভালো কর্মপরিবেশ আছে। একটা কলেজের কথা যদি বলি, সেখানে অনেক সময় পরচর্চা হয়, প্রতিযোগিতাটা পরিচ্ছন্ন হয় না। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় না পেরে নারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটা বাজে মন্তব্য করে দিলো। এভাবে কোথাও কোথাও কর্মপরিবেশ নষ্ট হয়। মাঠ পর্যায়ে অনেক ক্ষেত্রে কর্মপরিবেশের ঘাটতি দেখা যায়। নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নেই। আমরা উইমেন নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে এগুলো নিয়েও কাজ করি। ওইসব সংস্থার স্যারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করি। বলি, এই সমস্যা রয়েছে, একটু সহযোগিতা করবেন। শুধু মেয়ে নয়, কোথাও কোথাও কর্মপরিবেশ পুরুষ কর্মকর্তাদের জন্যও চ্যালেঞ্জিং।’

আরএমএম/এএসএ/এএসএম