ছোটবেলা থেকেই নিজে কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন সুমি খন্দকার। আর সেই স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যেই মায়ের দেওয়া তিন হাজার আর টিউশনি করে পাওয়া তিন হাজার মোট ছয় হাজার টাকা দিয়ে শুরু করেন পাটের ব্যাগের ব্যবসা। উদ্যোক্তা হিসেবে তার পথচলা শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে। বর্তমানে তিনি পড়ালেখার পাশাপাশি ব্যবসাও করছেন মন দিয়ে।
Advertisement
দেশ পেরিয়ে তার ব্যাগ আমেরিকা-ইতালির মতো দেশেও যাচ্ছে। তবে তার মূলধন বেশি না থাকায় লাভের পরিমাণটুকু বেশ কম। তবুও নিরাশ নন সুমি। আশা করছেন ভবিষ্যতে দুস্থ ও অসহায় নারীদেরকে নিয়ে পাটের ব্যাগ তৈরিকে কাজ করবেন। আর সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন ‘হোয়াড়ি’ নামক পেইজ নিয়ে।
বরিশালের মেয়ে সুমি খন্দকার। বরিশালের ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজে ফাইন্যান্স এন্ড মার্কেটিং বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। পড়ালেখার পাশাপাশি অনেকটা সাহস নিয়েই উদ্যোক্তা হিসেবে পথচলা তার। প্রথম থেকে তিনি পাশে পেয়েছেন মা ও তার বোন রুমি খন্দকারকে। তারা পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন ও সাপোর্ট করেছেন বলেই আজ তিনি উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পেরেছেন বলে জানান সুমি।
সুমি কীভাবে উদ্যোক্তা হয়ে উঠলেন এ বিষয়ে তিনি জাগোনিউজ টোয়েন্টি ফোরকে বলেন, ‘একদিন আমি নিজেই একটি পাটের ব্যাগ কেনার জন্য অনলাইন সার্চ করতে থাকি। তবে তেমন ভালো কোয়ালিটি বা ডিজাইনের ব্যাগ না পেয়ে মনক্ষুন্ন হয়ে পড়ি।’
Advertisement
‘যেহেতু আমার আগে থেকেই উদ্যেক্তা হওয়ার ইচ্ছে ছিল, আর এ নিয়ে অনেক রিসার্চও করেছি ঠিক কোন পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করা যায় তা খোঁজার চেষ্টা করেছি। যখন পাটের ব্যাগ কিনতে গিয়েও অনলাইনে তেমনটি খুঁজে পেলাম না, ঠিক তখনই আমার মাথায় আইডিয়া আসে, চাইলেই তো আমি পাটের ব্যাগ নিয়ে কাজ করতে পারি। আর এভাবেই শুরু করলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সব সময় এমন কোনো পণ্য নিয়ে কাজ করতে চেয়েছি যা আমার দেশের ঐতিহ্য। আর পাটের তৈরি সব কিছুরই গ্রহণযোগ্যতা আছে বিশ্বজুড়েই। তাই পাটের ব্যাগ নিয়ে কাজ শুরু করি, তাও আবার মাত্র ছয় হাজার টাকা দিয়ে। এরই মধ্যে আমার ১০০ ব্যাগ আমেরিকায় ও আরও বেশ কিছু ব্যাগ ইতালিতে পৌঁছে গেছে।’
আরও পড়ুন
সুস্থ থাকতে নারীর যে ৯ কাজ করা জরুরি নারীদের যেসব সমস্যা কঠিন রোগের ইঙ্গিত দেয়যারা উদ্যোক্তা হতে চান তাদেরকে বার্তা দিতে গিয়ে সুমি বলেন, ‘উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা বেশ কষ্টের। তবে যারা মন থেকে চান, তাদের উচিত দেরি না করা। অর্থাৎ আপনি যত দেরি করবেন ততই পিছিয়ে পড়বেন। ব্যবসা করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন হয়, এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সামান্য অর্থ নিয়েও কিন্তু আপনি কাজ শুরু করতে পারেন।’
Advertisement
‘তবে তাড়াতাড়ি লাভবান হওয়ার আশা করা যাবে না, যদি না আপনার মূলধন বেশি থাকে। সব সময় উচিত নিজের প্রোডাক্টের কোয়ালিটি ভালো রাখার চেষ্টা করা ও ক্রেতাদের সামনে পণ্যটি নতুনভাবে রিপ্রেজেন্ট করা, যাতে তারা আকর্ষিত হন।’
ব্যবসা করতে গেলে ঝুঁকি নিতেই হবে এমনটি জানিয়ে সুমি বলেন, ‘আমার পেইজে যে ব্যাগগুলো পাওয়া যায় সেগুলোর বেশিরভাগই একটু বড় সাইজের, যাতে করে সবাই তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাগে করতে পারেন। এগুলোর পাশাপাশি ছোট পার্সও ব্যাগগুলোও আছে। যখন এই ব্যাগগুলো আনি, তখন আমার ছোট বোন বলেছিল ‘আপু এই ব্যাগগুলো যদি সেল না হয়!’। তবে আমি নিরাশ হয়নি, আলহামদুলিল্লাহ পরবর্তী সময়ে দেখলাম ব্যাগগুলো ভালোই সেল হচ্ছে।’
তবে সুমি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি স্বপ্নপূরণের উদ্দেশ্যেই উদ্যেক্তা হয়ে উঠেছি ঠিকই, তবে আমার মূলধন অনেক কম। আর এ কারণে লাভের পরিমাণও কম। তবে যতটুকু সেল হচ্ছে, তাতেই আমি সন্তুষ্ট। তবে মূলধন বাড়াতে আর অসহায় নারীদের কল্যাণে ব্যবসায়ের পরিধি আরও বাড়াতে পড়ালেখা শেষ করে চাকরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
সুমির ‘হোয়াড়ি’তে ২৫০ থেকে শুরু করে ৬৭০ টাকা পর্যন্ত পাটের ব্যাগ আছে। সবাই যেন তার ব্যাগগুলো কিনতে পারেন, তাই দাম সাধ্যের মধ্যেই রেখেছেন তিনি। পাটের ব্যাগের পাশাপাশি তিনি জামদানি ও সিল্ক মোমবাটিকের শাড়িও বিক্রি করছেন এখন। তবে তার সিগনেচার পণ্য হলো পাটের ব্যাগ। আর এটি নিয়েই তিনি ব্যাপকভাবে স্বপ্ন দেখছেন।
জেএমএস/জিকেএস