এস ডি সুব্রত
Advertisement
রহিম ইবনে বাহাজ একজন কবি। বিবেকবোধ সম্পন্ন বাস্তববাদী কবি। তবে প্রাবন্ধিক এবং কলাম লেখক হিসেবেও তিনি জানান দিয়েছেন। তার প্রবন্ধের বই ‘দিন যাপনের গ্লানি’। লেখালেখির বিভিন্ন শাখায় তার বিচরণ। বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন কবিতায়। তার কবিতায় ফুটে ওঠে সমাজ বাস্তবতার নিখুঁত প্রতিচ্ছবি। যেখানে সমাজের অন্তরালের কথা উঠে আসে অবলীলায়। সমাজের নানা অসংগতি ধরা দেয় কবিতা, প্রবন্ধ ও কলামে। তার কলমে উঠে আসে সমাজের নানা অসংগতি, দুর্নীতি, অন্যায় ও অবিচারের প্রতিবাদ।
আজ আলোচনা করবো তার প্রবন্ধগ্রন্থ ‘দিন যাপনের গ্লানি’ নিয়ে। ২০২৩ সালে অমর একুশে বইমেলায় হরিৎপত্র প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয় বইটি। মোট ২৩টি প্রবন্ধ আছে। প্রবন্ধগুলো হলো—‘বইমেলার ক্ষণ গণনা’, ‘ভুঁইফোড় সংগঠনও ও ত্রিভুজের সমান কোণ’, ‘কণ্টক জীবনে আমার লেখালেখি’, ‘বই প্রকাশের আগে পরে’, ‘বাল্যবিয়ে: ছেলেরা কেন কম বয়সী মেয়ে খোঁজে’, ‘জীবনের চাকা আঁকাবাঁকা’, ‘সূর্যদীপ্ত অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান’, ‘সমাজের অসঙ্গতি নানাবিধ অনাচার’, ‘প্রতারণার আরেক নাম তন্ত্রমন্ত্র’, ‘উন্নত জীবনের জন্য বই’, ‘ক্যামেরার পেছনের সাদা-কালো ও রঙিন’, ‘মানুষ কবে মানুষ হবে’, ‘বাংলা ভাষার বিকৃতি ও যথেচ্ছাচার’, ‘মানুষ নিজেই কেন মৃত্যুর ঘণ্টা বাজায়’, ‘ঢাকাই চলচ্চিত্র ও নায়িকার জন্মোৎসব’, ‘পোস্টার-প্রচারণা ব্যবহার ও অপব্যবহার’, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুরা কতটুকু সুরক্ষিত’, ‘প্লেব্যাক সম্রাট অ্যান্ড্রু কিশোর’, ‘দেশীয় চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা’, ‘বয়ানের নামে কী হচ্ছে’, ‘ধর্ষণের লাগাম টানা কীভাবে সম্ভব’, ‘অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’, ‘একজন শব্দশ্রমিক রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’।
সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একজন লেখক সমকালকে নানা আঙ্গিক ও দৃষ্টিকোণ থেকে চিহ্নিত করেন। মানুষের মৌলিক অধিকার, নাগরিক অধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসেন। কবির কল্পনার সঙ্গে নানা রং মিশিয়ে রহিম ইবনে বাহাজ যে চিত্র-সন্নিবেশ ঘটান, তা ছুঁয়ে যায় সমাজ বাস্তবতাকে অবলীলায়। তিনি কলাম লেখক হিসেবেও পরিচিত। বইয়ের দ্বিতীয় প্রবন্ধে সমসাময়িক রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতার কথা তুলে ধরেছেন। সমকালীন রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক অবক্ষয় ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেছেন। পাপিয়া কাহিনি, ক্যাসিনোকাণ্ড, করোনার ভুয়া রিপোর্ট প্রদানের সঙ্গে জড়িত ডা. সাবরিনা ও রিজেন্ট শাহেদের কথা উঠে এসেছে। লেখক অপরাজনীতির অবসান কামনা করেছেন। ভুঁইফোড় সংগঠন নির্মূলের পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাধ্যমে জাতির পিতার সোনার বাংলা বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা কামনা করেছেন।
Advertisement
আরও পড়ুন
বিষাদের ছায়া: শফিক রিয়ানের জীবন-দর্শন উদার আকাশ: সত্যনিষ্ঠতায় তুলনাহীনলেখকের তৃতীয় প্রবন্ধের শিরোনাম ‘কণ্টকাকীর্ণ জীবনে আমার লেখালেখি’। এতে তার লেখালেখির শুরুর দিকের স্মৃতিচারণ করেছেন। সেটি ১৯৯৮ সালের কথা। লেখক তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। লেখক বলেছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মির্জা মহিউদ্দিন বাচ্চুর স্বরচিত ছড়া কবিতা শুনে মুগ্ধ হতেন। সে বছর ৪ জুন রহিম ইবনে বাহাজের প্রথম লেখা ছড়া ‘পুতুলের বিয়ে’ জামালপুর থেকে সাপ্তাহিক সচেতন কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় মির্জা মহিউদ্দিন বাচ্চুর অনুপ্রেরণায়। লেখক অষ্টম প্রবন্ধ ‘সমাজের অসঙ্গতি ও নানাবিধ আচার’ এ সাহিত্যের গুরুত্ব নিয়ে আলোকপাত করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে জাতির সাহিত্য নেই, সে জাতি মৃত।’ তিনি আরও বলেন, ‘সমাজের বিশৃঙ্খলা শুধু আইন দিয়ে সমাধান করা যায় না। মানুষে মানুষে সম্প্রীতি বজায় রাখতে হয়।’
‘উন্নত জীবনের জন্য বই’ প্রবন্ধে লেখক বলেন, ‘শুধু শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে ডুবে আমাদের চারপাশের পরিবেশ বিশ্বের নানা বৈচিত্র্যময় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানার সুযোগ সৃষ্টি হবে না।’ পাঠ্যবইয়ের বাইরে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, অনুবাদ পড়ার তাগিদ দিয়েছেন লেখক। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। নতুন নতুন পাঠাগার সৃষ্টি এবং সে পাঠাগার পরিচালনার দায়িত্ব সাহিত্যমনা লেখকদের হাতে দেওয়ার প্রস্তাব করেন।
রহিম ইবনে বাহাজের জন্ম ৮ মার্চ ১৯৮৭; জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামে। লেখালেখির শুরু ছড়া দিয়ে হলেও তিনি কবিতা, প্রবন্ধ ও কলাম লিখছেন। টেলিভিশনের নাট্যপরিচালক ও সংলাপ রচয়িতা হিসেবে রয়েছে পরিচিতি। তার প্রথম নাটক ‘ময়নার দ্বিতীয় অধ্যায়’ প্রচারিত হয়েছে টেলিভিশনে। জাতীয় দৈনিক, লিটল ম্যাগাজিন, দেশ-বিদেশের অনলাইন পোর্টালেও নিয়মিত লিখছেন। তার নির্দেশিত লিটল ম্যাগাজিন ‘সাহিত্যের আলো’ অনিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘দূর্বা জীবন’ ২০২২ সালে প্রকাশিত হয়। প্রবন্ধগ্রন্থ ‘দিন যাপনের গ্লানি’ তার দ্বিতীয় বই। কবি ও প্রাবন্ধিক রহিম ইবনে বাহাজের প্রবন্ধগ্রন্থ ‘দিন যাপনের গ্লানি’র বহুল প্রচার ও সাফল্যের প্রত্যাশা রইল।
Advertisement
লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক।
এসইউ/জিকেএস