বয়স মাত্র ১৯ বছর। পড়ছেন নেএকোনার আবু আব্বাস কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে। এরই মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং জগতে নিজের অবস্থান তৈরি করে ফেলেছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি বর্তমানে কাজ করছেন স্যোশাল মিডিয়া মার্কেটিং অ্যান্ড এডভারটাইজিং নিয়ে। একটি ইউএসএ কোম্পানি ও বাংলাদেশি ২ টা বিজনেস কোম্পানিতে স্যোশাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন
Advertisement
বলছিলাম স্নিগ্ধা আক্তার বৃষ্টির কথা। সময়টা তখন ২০২২ সালের শেষের দিকে। স্বামীর কাছ থেকে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জানতে পারেন। সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা গ্রামে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। প্রত্যন্ত এলাকায় বাস করার কারণে অনেকের মতো তিনিও এ ব্যাপারে খুব বেশি জানতেন না। বাবা ছোটবেলায় মারা যান। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে হয়ে যায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ খোকনের সঙ্গে।
ছোটবেলা থেকেই নিজে কিছু করার ইচ্ছা ছিল স্নিগ্ধার। স্বামী মোঃ খোকন ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে তাকে কিছু ধারণা দিয়েছিলেন। এরপর ইউটিউব, গুগল থেকে ফ্রিলান্সিং নিয়ে প্রাথমিক ধারণা পান। তবে সঠিক গাইডলাইনের অভাবে কিছু করতে পারছিলেন না। ফেসবুকে ‘কিছু করতে চাই’ নামক একটা গ্রুপের সন্ধান পান। যেটার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সিন্থিয়া লিজা। যিনি মেয়েদের নিয়ে কাজ করেন অনেকদিন ধরেই। সেখানেই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের উপর ৩ মাসের কোর্স করেন। কোর্স চলাকালীন লিংকডইন থেকে প্রথম পাকিস্তানি একজন বায়ারের কাজ পান স্নিগ্ধা। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
আরও পড়ুন
Advertisement
২০২৩ সালের আগস্ট মাসে ফাইবারে লেভেল ওয়ান পান। তবে দুর্ভাগ্যবশত স্নিগ্ধার আইডি ডিসেবল করে দেয় ফাইবার কর্তৃপক্ষ। এরপর আরও দুটি আইডি বিভিন্ন কারণে হারাতে হয়। সেই সঙ্গে বায়ারও। তবে থেমে থাকেননি। আউট অব মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করেন। মাসে সর্বোচ্চ প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় করেন স্নিগ্ধা। তার টিমে আরও দুজন মেয়ে কাজ করছেন। যাদের প্রতি মাসে বেতন দেন তিনি।
স্নিগ্ধা বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য প্রথম থেকেই স্বামীর সহযোগিতা পেয়েছি। আমার আম্মা ও স্বামীর সহযোগিতা এবং সিন্থিয়া লিজা ম্যামের গাইডলাইনে এইটুকু করতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ। জীবনে অনেক বড় হতে চাই। কাজ করতে চাই আমার এলাকার হাওর পাড়ের মেয়েদের নিয়ে। নিজের একটি প্রতিষ্ঠান গড়তে চাই। সেখানে সব বয়সী নারীরা ডিজিটাল মার্কেটিং শিখবেন এবং স্বাবলম্বী হবেন।’
পরিবারে আছে স্বামী ও এক মেয়ে। সব সময় শ্বশুরবাড়ির মানুষের কাছ থেকে সহায়তা পেয়েছেন। স্বামী ঘরের কাজে সাহায্য করেন এবং সন্তানের দেখাশোনা করেন তার নিজের কাজ শেষে। যেন স্নিগ্ধা তার পড়াশোনা এবং ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করতে পারেন ভালোভাবে।
আরও পড়ুন
Advertisement
তবে প্রতিবন্ধকতা এসেছে এলাকার মানুষের পক্ষ থেকে। মূলত সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসের কারণে সেখানকার মানুষ ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বিষয়ে খুব ভালো জানেন না। তাই তাকে অনেক ধরনের খারাপ মন্তব্যও শুনতে হয়েছে অনেকের কাছ থেকে। তবে এসব কিছুই দমাতে পারেননি স্নিগ্ধাকে। এখন অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার কারণে এসব বোঝেন। তারা অনুপ্রেরণা দেন।
যারা ফ্রিল্যান্সিং করতে চান তাদের জন্য স্নিগ্ধার পরামর্শ, ‘যারা ফ্রিল্যান্সিং করতে চান তাদের অবশ্যই ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে। কারণ বিভিন্ন দেশের বায়ারের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র ভাষা ইংরেজি। ইংরেজি ভালোভাবে আয়ত্ত করতে না পারলে এই সেক্টরে ভালো করা সম্ভব না। এছাড়া সবার মধ্যে একটা ধারণা আছে, ফ্রিল্যাংন্সি করলেই লাখ লাখ টাকা আয় করা যায়। এজন্য ফ্রিল্যান্সিয়ের বিষয়ে খুব ভালোভাবে না শিখেই কাজ করতে চান। সেক্ষেত্রে খুব বেশি উন্নতি করতে পারেন না এবং টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়ে। তাই আগে ভালোভাবে এই বিষয়ে জানুন, শিখুন। কাজ পেতে বেগ পেতে হবে না এবং আয় করাও কঠিন হবে না।’ কেএসকে/জিকেএস