জাতীয়

প্রতিদিন ৬ হাজার ফোনকল আসে হেল্পলাইন ১০৯ নম্বরে

নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, বাল্যবিয়ে বন্ধ, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ, নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুকে উদ্ধারে কাজ করে জাতীয় হেল্পলাইন ১০৯। সহিংসতার শিকার নারী ও শিশু কিংবা তার পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট যে কেউ সপ্তাহে সাতদিন ২৪ ঘণ্টা দেশের যে কোনো স্থান থেকে যে কোনো সময় হেল্পলাইন সেন্টারের ১০৯ নম্বরে ফোনকল করে বিনামূল্যে এ সম্পর্কিত সেবা নিতে পারেন। এরই মধ্যে এ সেবার মাধ্যমে ১১ হাজার ৭৬০টি বাল্যবিয়ে বন্ধ হয়েছে।

Advertisement

হেল্পলাইন ১০৯ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুর সহায়তায় ২০১২ সালের ১৯ জুন জাতীয় হেল্পলাইন সেবার যাত্রা শুরু হয়। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ছয় হাজার ফোনকল আসে। যাত্রা শুরুর পর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত প্রায় এক যুগে হেল্পলাইন নম্বরে আসা মোট ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার ২০০টি ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ হাজার ৭৬০টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। জাতীয় হেল্পলাইনে সেবা দিতে প্রতিদিন তিন শিফটে ১৫ জন করে মোট ৪৫ জন কাজ করেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সেবা দিয়ে থাকে হেল্পলাইন ১০৯। একই সঙ্গে কোনো ঘটনার শুধু তাৎক্ষণিক সমাধান দিয়েই সেবাদান শেষ করা হয় না, চাঞ্চল্যকর ঘটনার ক্ষেত্রে ফলোআপ সেবাও দেওয়া হয়ে থাকে। ফোনকল করা প্রত্যেককে প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা করা হয়। এরমধ্যে পুলিশ পাঠিয়ে উদ্ধার, হাসপাতালে ভর্তি ও আইনি সহায়তাও রয়েছে।

জানা গেছে, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্পলাইন ১০৯ এর সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক পরিচালিত জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এটুআই প্রোগ্রামের তথ্য ও সেবা ৩৩৩ এর মধ্যে পৃথক সমঝোতা রয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ সার্ভিসের উদ্বোধন ৩৪ শতাংশ কিশোরী যৌন নির্যাতনের শিকার

নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুর সহায়তায় ন্যাশনাল হেল্পলাইন সেন্টারের শুরুতে নম্বর ছিল ‘১০৯২১’। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে হেল্পলাইনের জন্য তিন ডিজিটের নম্বর চালু থাকায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে টোল ফ্রি ‘১০৯২১’ নম্বরটি পরিবর্তন করে ওই বছরই ‘১০৯’ করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে মনে রাখার সুবিধার্থে জন্যই এটি করা হয়। যে কোনো মোবাইল ও অন্য ফোন থেকে সরাসরি বিনা খরচে ১০৯ নম্বরে ফোন করে ২৪ ঘণ্টা সেবা নেওয়া যায়।

 

নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুর সহায়তায় ২০১২ সালের ১৯ জুন জাতীয় হেল্পলাইন সেবার যাত্রা শুরু হয়। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ছয় হাজার ফোনকল আসে। যাত্রা শুরুর পর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত প্রায় এক যুগে হেল্পলাইন নম্বরে আসা মোট ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার ২০০টি ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ হাজার ৭৬০টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে

 

হেল্পলাইন ১০৯-এর ইনচার্জ ও প্রোগ্রাম অফিসার রাইসুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুকে প্রাথমিক সহায়তা দেওয়ার জন্যই ২০১২ সালের ১৯ জুন এই হেল্প সেন্টারটি যাত্রা শুরু করে। এখানে সারা বাংলাদেশ থেকেই কল আসে। এরপর আমরা তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় প্রশাসন এবং ক্ষেত্রবিশেষে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে ভুক্তভোগীকে সাপোর্ট দিতে থাকি। প্রতিটি চাঞ্চল্যকর ঘটনাই আমরা ফলোআপ করি। এসব ঘটনা নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা ফলোআপ করি। অর্থাৎ, আমাদের মূল লক্ষ্য নারী বা শিশু নির্যাতনের শিকার হলে সেটি শারীরিক, যৌন বা বাল্যবিয়ে যে কোনোভাবেই হোক না কেন, আমরা  তাৎক্ষণিকভাবে ১০৯ থেকে সহায়তা দিই।

Advertisement

প্রশাসনের সহযোগিতার ক্ষেত্রে কোনো জটিলতায় পড়তে হয় কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যখনই প্রশাসন বা দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কাছে ১০৯ থেকে ফোনকল করি আমরা আমাদের মতো করে তাদের সহায়তা পেয়ে থাকি। কোনো ক্ষেত্রে কেউ ব্যস্ত থাকলে অন্য কাউকে নক করে পেয়েছি। সুতরাং, আমরা কারও না কারও সহায়তা পেয়েই যাই।

এ বিষয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও ১০৯-এর প্রকল্প পরিচালক ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, বাল্যবিয়ে বন্ধ, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ এবং নির্যাতনের শিকার নারী-শিশুকে উদ্ধারে টোল ফ্রি ১০৯ সেবা সপ্তাহে সাতদিন ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা হয়েছে। তিনটি শিফটে আমাদের মোট ৪৫ জন কাজ করছে। প্রতিদিন আমাদের এখানে গড়ে ছয় হাজার ফোনকল নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, প্রতিদিনের ফোনকলগুলোকে আমরা দুভাগে ভাগ করি। যেগুলো তাৎক্ষণিক সেবা প্রয়োজন সেগুলো একভাগে এবং কিছু কল আসে শুধু তথ্যের জন্য সেগুলোকে অন্য ভাগে রাখা হয়। জরুরি সেবাগুলোর ক্ষেত্রে সরাসরি আমরা সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা নিই। যেমন- ৯৯৯ এর সঙ্গে আমাদের এমওইউ আছে, জরুরি ক্ষেত্রে সরাসরি আমরা সেখানে কনভার্ট করে দিই। ডিসি, এসপি, ইউএনও এবং ওসিসহ যাদের আমাদের মাঠ পর্যায়ে দরকার তাদের সহযোগিতাও নিই। ১০৯-এ যারা কাজ করেন দ্রুত সেবাদান ও কোন ফোনকল কোথায় রেফার করতে হবে এসব বিষয়ে আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দিই। আমরা কোনো ঘটনার ক্ষেত্রে ফলোআপ করি। আমরা থানায় পাঠিয়ে শুধু কল ডাইভার্ট করি না, ঘটনা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ভুক্তভোগীর সার্বিক ফলোআপ করি। 

আরও পড়ুন

নারী ও শিশু নির্যাতন রোধে হেল্প লাইন সেন্টারের নম্বর পরিবর্তন হেল্পলাইন ১০৯২১ : আড়াই বছরে ৬১,৮৮৬ জনকে সেবা

ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী আরও বলেন, আমরা ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারেও কোনো কোনো সময় স্বাস্থ্যসেবার জন্য রেফার করি। তাৎক্ষণিক সেবা বা নিরাপদ স্থান প্রয়োজন হলে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দেই। এই হেল্পলাইনের মাধ্যমে ১১ হাজারেরও বেশি বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে পেরেছি। মূলত আমাদের প্রকল্পটি শুরু হয়েছে ২০০০ সাল থেকে। কিন্তু জাতীয় হেল্পলাইন সেবার যাত্রা শুরু ২০১২ সালে।

‘জয়’ মোবাইল অ্যাপে মিলবে তাৎক্ষণিক সেবা

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক সহায়তা দিতে মোবাইল অ্যাপ ‘জয়’ চালু করেছে সরকার। স্মার্টফোনে ব্যবহার উপযোগী করে অ্যাপসটি তৈরি করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই অ্যাপটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ অ্যাপসটি চালু করে।

 

চলার পথে বা যে কোনো জায়গায় কোনো নারী-শিশু নির্যাতনের শিকার হলে এবং কারও সহায়তা নেওয়ার অবস্থা না থাকলে ‘জয়’ অ্যাপটির সহযোগিতা নিতে পারবেন ভুক্তভোগীরা। এক্ষেত্রে অ্যাপটিতে টাচ করলেই বিপদে পড়া ভুক্তভোগীকে সহায়তা করবে এই অ্যাপস। অ্যাপের মাধ্যমে ঘটনার স্থান, শব্দ ও আশপাশের তথ্যও চলে যাবে। এছাড়াও সুযোগ থাকলে মোবাইল ফোন বের করে অ্যাপের জরুরি বাটন চেপে জিপিএস লোকেশন, ছবি ও অডিও রেকর্ডিং পাঠাতে পারবেন

 

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলার পথে বা যে কোনো জায়গায় কোনো নারী-শিশু নির্যাতনের শিকার হলে এবং কারও সহায়তা নেওয়ার অবস্থা না থাকলে ‘জয়’ অ্যাপটির সহযোগিতা নিতে পারবেন ভুক্তভোগীরা। এক্ষেত্রে অ্যাপটিতে টাচ করলেই বিপদে পড়া ভুক্তভোগীকে সহায়তা করবে এই অ্যাপস। অ্যাপের মাধ্যমে ঘটনার স্থান, শব্দ ও আশপাশের তথ্যও চলে যাবে। এছাড়াও সুযোগ থাকলে মোবাইল ফোন বের করে অ্যাপের জরুরি বাটন চেপে জিপিএস লোকেশন, ছবি ও অডিও রেকর্ডিং পাঠাতে পারবেন। জয় মোবাইল অ্যাপস সেন্টারে কর্মরতরা ২৪ ঘণ্টা সেবা দিয়ে থাকেন এবং অ্যাপটি নজরদারি করেন। এখন পর্যন্ত অ্যাপটি এক হাজারের বেশি ফোনে ইনস্টল হয়েছে।

এ বিষয়ে ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের আরেকটি সেবা চালু করেছি, মাঝে এটি একটু আপডেট করছিলাম, সেটি হলো ‘জয়’ মোবাইল অ্যাপ। এখানে কোনো ভিকটিম যদি মনে করেন তিনি বিপদে পড়ছেন সেক্ষেত্রে ওই অ্যাপটি টাচ করেই সঙ্গে সঙ্গে ৯৯৯, ১০৯ এবং দুটি সিলেক্টিভ নম্বরে বার্তা পৌঁছে যাবে। ভুক্তভোগীর অডিও ট্র্যাক করা যাবে।

তিনি বলেন, আমাদের আপগ্রেডের কাজ চলছে, তবে প্লেস্টোরে অ্যাপটি আছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আপগ্রেড অ্যাপটি ব্যবহার করা যাবে। আমরা চেষ্টা করছি ইন্টারনেট ছাড়া অফলাইনেও যেন এটি ব্যবহার করা যায়।

আইএইচআর/এমকেআর/জিকেএস