আন্তর্জাতিক

থাইল্যান্ডের ১ কোটিরও বেশি মানুষ বায়ুদূষণজনিত রোগে আক্রান্ত

বর্তমান বিশ্বের জন্য ‘মড়ার ওপরে খাঁড়ার ঘা’ হলো বায়ুদূষণ। অত্যাধুনিক শিল্পোৎপাদনের যুগেও মানবসৃষ্ট কারণে পৃথিবীজুড়ে এই দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। আর এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে জলবায়ু ও মানব অস্তিত্বের ‍উপর। এরই মধ্যে খবর পাওয়া গেছে থাইল্যান্ডের ১ কোটিরও বেশি মানুষ বায়ুদূষণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

Advertisement

বুধবার (৬ মার্চ) থাইল্যান্ডের জাতীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন পরিষদ (এনইএসডিসি) এই তথ্য জানায়। সংস্থাটি বলছে, ফসল তোলার পরে বিস্তৃত কৃষিক্ষেতে দেওয়া আগুন ও কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়ার কারণে গত কয়েক দশকে দেশটির বায়ুর মান ক্রমেই নিম্নমুখী হয়েছে। আর এই পরিস্থিতির ফলাফল ভোগ করতে হচ্ছে গোটা থাইল্যান্ডকে। বিশেষ করে, দেশটির উত্তরাঞ্চলে এই সমস্যা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।

আরও পড়ুন: 

দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ কেন এত বেশি? বায়ুদূষণে বিপর্যস্ত দিল্লি, স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বায়ুদূষণে বাংলাদেশিদের গড় আয়ু কমছে প্রায় ৭ বছর

এনইএসডিসি আরও জানায়, চলতি বছরের শুরুতে থেকেই থাইল্যান্ডে বায়ুদূষণজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব লাফিয়ে বাড়ছে, যার হার গত বছরের এই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। ২০২৩ সালের প্রথম নয় সপ্তাহে দেশটির ১৩ লাখ মানুষ দূষণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের একই সময়ে এই সংখ্যা ১৬ লাখে পৌঁছে গেছে। দেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় ৭ কোটি ২০ লাখ।

Advertisement

সূর্যোদয়ের সময় ব্যাংককে বায়ুদূষণের চিত্র/ ছবি: সংগৃহীত

বায়ুদূষণজনিত যেসব রোগে থাই নাগরিকরা বেশি আক্রান্ত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার, ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি ও হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ উল্লেখযোগ্য। এনইএসডিসি সতর্ক করে বলেছে, থাই জনগণ ও সরকারকে এই বিষয়ে অবশ্যই সচেতন হতে হবে, না হলে গোটা দেশে দূষণজনিত রোগের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দেবে।

থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলীয় কয়েকটি শহরকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত হিসেবে চিহ্নিত করেছে বায়ুর গুণমান পর্যবেক্ষণ ওয়েবসাইটগুলো। মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম আইকিউএয়ার দেশটির চিয়াং মাই, চিয়াং রাই ও ল্যাম্পাংকের বায়ুকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ ঘোষণা করেছে।

আরও পড়ুন: 

Advertisement

বায়ুদূষণ কমাতে কৃত্রিম বৃষ্টির চিন্তা পাকিস্তানের প্যারলে মুক্তি পেয়েছেন থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউক্রেন যুদ্ধবিরোধী রুশ ব্যান্ডদল থাইল্যান্ডে গ্রেফতার

থাইল্যান্ডের বায়ুদূষণ মূলত শুষ্ক মৌসুমে অনেক বেড়ে যায়, যা নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চলে। এ সময়ের মধ্যে কৃষকরা তাদের আখ ও ধানক্ষেত পরিষ্কার করার জন্য ক্ষেতে আগুন লাগিয়ে দেন।

বছরের পর বছর ধরে থাইল্যান্ডের বাসিন্দা ও পরিবেশবাদী গোষ্ঠীগুলো বায়ুদূষণ ঠেকাতে সরকারি পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে আসছে। এমনকি তারা এর জন্য মামলা দায়ের করেছে। গত বছরের জুলাইয়ে চিয়াং মাই শহরের প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন নাগরিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রুত চ্যান-ও-চা ও দুটি রাষ্ট্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে উত্তরাঞ্চলে বায়ুদূষণ কমাতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে মামলা করে।

এই বছরের জানুয়ারিতে, একটি চিয়াং মাই আদালত সরকারকে ৯০ দিনের মধ্যে বায়ুর মান উন্নত করার জন্য একটি জরুরি পরিকল্পনা নিয়ে আসার নির্দেশ দেন।

এরই মধ্যে বায়ুদূষণ মোকাবিলা ও প্রধান প্রধান শস্য উৎপাদনকারী অঞ্চলে বিরাজমান শুস্ক আবহাওয়ার প্রভাব কমাতে দেশব্যাপী ৩০টি বিমান মোতায়েন করার ঘোষণা দিয়েছে থাইল্যান্ড সরকার। এসব বিমান ক্লাউড সিডিং অপারেশন, বা মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত ঘটাতে সক্ষম। 

সূত্র: বিবিসি

এসএএইচ