আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজ্যে কোনো সহিংসতা বা অশান্তি হলে তার দায় বর্তাবে রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক (ডিজিপি), জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের ওপর। সেক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ নিতেও পিছপা হবে না কমিশন।
Advertisement
এক বিবৃতিতে কমিশন জানিয়েছে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের তফশিল এখনো ঘোষণা হয়নি। সম্ভবত আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই তা হতে পারে বলে জল্পনা রয়েছে। কিন্তু তার আগেই মঙ্গলবার (৫ মার্চ) কলকাতায় সংবাদ সম্মেলন করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দিল কমিশন।
নির্বাচনের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে গত রোববার কমিশনের ফুল বেঞ্চ রাজ্য সফরে আসে। এরপর গত তিনদিন ধরে রাজ্যের প্রতিটি রাজনৈতিক দল, মুখ্য সচিব, ডিজিপি, এক্সাইজ, কাস্টমস, নারকোটিক্স, এসএসবি, বিএসএফ, কোস্ট গার্ড, ডিআরআইসহ বিভিন্ন এজেন্সির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কমিশনের কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার কলকাতায় সংবাদ সম্মেলন করে রাজ্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে রাজীব কুমার স্পষ্ট জানিয়ে দেন, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ, সব পক্ষের কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য এবং নির্বাচনের উপযুক্ত ক্ষেত্র নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। গণতন্ত্রে যে কোনো সহিংসতার ক্ষেত্রেই কমিশন জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে।
Advertisement
তাই ভোটার ও প্রার্থীদেরকে কোনো প্রকার ভয়ভীতি/হুমকি দেওয়ার সুযোগ নেই। রাজ্যে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ ভোটের দায়িত্ব রাজ্য পুলিশকে নিতে হবে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে যে, তারা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এই কাজ করবে।
কমিশনের স্পষ্ট নির্দেশ- কোনো অশান্তি হলে দায়ী থাকবে রাজ্য পুলিশের মহা নির্দেশক। ভোটের আগে ও পরে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে থাকা আন্তর্জাতিক সীমান্তগুলোর দিকেও কড়া নজরদারি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। বিএসএফ, এসএসবিকে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, মানব পাচার, মাদক পাচারসহ সীমান্তে নাশকতা রুখতে যেন তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে রাজ্যে এবং তাদেরকে নিরপেক্ষভাবে কাজে লাগানো হবে।
নির্বাচন নিয়ে একটি গাইডলাইনও প্রকাশ করেছে কমিশন। সেখানে একগুচ্ছ নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, প্রথমে আসার ভিত্তিতে নির্বাচনী সভা বা বৈঠকের জন্য ময়দানের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখার পাশাপাশি ভুয়া ভোটারদের উপর নজর রাখা এবং কড়া পদক্ষেপ নেওয়া, আধার কার্ড বাতিল হলেও ভোটের ওপরে তার প্রভাব না পড়া, সময় মতো ভোটার স্লিপ দেওয়া, কোনো চুক্তিভিত্তিক বা সিভিক ভলান্টিয়ারকে নির্বাচনের কাজে না লাগানো, ২৪ ঘন্টা সিসিটিভি চালানো, ভুয়া খবরের দিকে নজর রাখা, অস্ত্রসহ দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করার মতো বিষয়গুলোও তুলে ধরা হয়েছে।
Advertisement
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনার বলেন, রাজ্যের একাধিক ভোটগ্রহণ কেন্দ্র আছে যেগুলো সম্পূর্ণভাবে নারী দ্বারা পরিচালিত। ওই ভোট গ্রহণ কেন্দ্রগুলোতে আমরা নারী নিরাপত্তারক্ষী মোতায়নের চেষ্টা করছি। ঠিক সেভাবেই কিছু ভোট গ্রহণ কেন্দ্র শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের কথা মাথায় রেখে করা হবে। সমাজের স্বাভাবিক মানুষদের থেকে তারাও যে কোনো অংশে কম নয়, এটা বোঝাতেই আমাদের এই উদ্যোগ।
কমিশন জানায়, ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে মোট ভোটারের সংখ্যা ৭ কোটি ৫৮ লাখ। এর মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা ৩ কোটি ৭৩ লাখ এবং পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৩ কোটি ৮৫ লাখ। মোট ভোটারদের মধ্যে একটা বিশাল সংখ্যায় তরুণ ভোটার, সিনিয়র সিটিজেনরাও অন্তর্ভুক্ত আছে।
আরও পড়ুন:
পদত্যাগ করছেন বিচারপতি অভিজিৎ, রাজনীতিতে যোগদানের গুঞ্জন তফশিলের আগেই বিজেপির ১৯৫ প্রার্থীর নাম ঘোষণা পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে গরিব বানিয়ে রাখতে চায় তৃণমূল: মোদী তফশিলের আগেই পশ্চিমবঙ্গে ১৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনকমিশন জানিয়েছে, প্রতি ভোটকেন্দ্রে ৯৪৩ জন করে ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এই হিসাবে দেশজুড়ে প্রায় ৮০ হাজার ভোটকেন্দ্র খোলা হবে। এর মধ্যেই শতকরা ৭৫ ভাগ ভোটকেন্দ্র থাকছে গ্রামীণ এলাকায়।
ডিডি/টিটিএন