বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত কার্যক্রমের মধ্যে একটি হলো পরিবার পরিকল্পনা। অথচ গত তিন-চার মাস ধরে উপজেলা পর্যায়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সরকারি মজুতে দেখা দিয়েছে সংকট। এরমধ্যে ৩৪৯টি উপজেলা স্টোরে কোনো কনডম নেই। আর ১০৫টি উপজেলা স্টোরে নেই খাবার বড়ি (সুখী-আপন)। ইনজেকশন নেই ২৯৮টি উপজেলা স্টোরে। সংকট সমাধানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগে একাধিকবার চিঠি চালাচালি হলেও দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের প্রায় অর্ধেকের বেশি উপজেলায় কনডম, খাবার বড়ি ও ইনজেকশন শূন্যের কোঠায়। মা ও শিশু স্বাস্থ্যের ওষুধের মজুতেও একই অবস্থা। ফলে দেশের সাধারণ জনগণের জরুরি এই সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা পর্যায়ে এসব সামগ্রীর সরকারি মজুত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৩৪৯টি উপজেলা স্টোরে কোনো কনডম নেই, ৯৭টি উপজেলায় খুব দ্রুত মজুত শূন্য হবে। ২২ উপজেলা স্টোরে সর্বনিম্ন মজুত রয়েছে। ৩৮টি উপজেলা স্টোরে কোনো খাবার বড়ি (সুখী) নেই, ১০৫টি উপজেলা স্টোরে খুব দ্রুত মজুত শূন্য হবে এবং ২০৭টি উপজেলা স্টোরে সর্বনিম্ন মজুত রয়েছে। ৬৭টি উপজেলা স্টোরে কোনো খাবার বড়ি (আপন) নেই, ১০২টি উপজেলা স্টোরে খুব দ্রুত মজুত শূন্য হবে এবং ৯৯টি উপজেলা স্টোরে সর্বনিম্ন মজুত রয়েছে। ২৯৮টি উপজেলা স্টোরে কোনো ইনজেকশন নেই, ১৫৫ উপজেলা স্টোরে খুব দ্রুত মজুত শূন্য হবে এবং ৩৩টি উপজেলা স্টোরে সর্বনিম্ন মজুত রয়েছে।
এছাড়া মা ও শিশুর সেবার অন্যতম উপকরণ ডিডিএস কিটের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ৪৭৬টি উপজেলা স্টোরে কোনো ডিডিএস কিট নেই। ১৬টি উপজেলা স্টোরে খুব দ্রুত মজুত শূন্য হবে। আর দুটি উপজেলা স্টোরে সর্বনিম্ন মজুত রয়েছে। আর স্বাভাবিক প্রসবের জন্য প্রয়োজনীয় সাধারণ ডেলিভারি কিটের মজুত ৩৭৫টি উপজেলা স্টোরে শেষ, ১৯টি স্টোরে খুব দ্রুত শূন্য হবে। আর ২৭ উপজেলা স্টোরে সর্বনিম্ন মজুত।
Advertisement
সাধারণত উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মা-শিশুদের বিনামূল্যে ২২ রকম ওষুধ এবং চিকিৎসা সামগ্রী দেওয়া হয়। এমন ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীকে ডিডিএস কিট (ড্রাগ অ্যান্ড ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট কিট) বলা হয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩০ নভেম্বর এডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান। সেসময় নির্দেশনা অনুযায়ী এসব সামগ্রীর ক্রয় পরিকল্পনা অনুমোদন না হওয়ায় অসন্তোষ পোষণ করেন তিনি। একই সঙ্গে পরিকল্পনা অনুমোদন করে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ক্রয় কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশনা দেন।
এরপর পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরাধীন পরিচালন (রাজস্ব) বাজেট থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী কেনার যৌক্তিকতা জানিয়ে মন্ত্রণালয়কে জানান অধিদপ্তরের তৎকালীন পরিচালক (অর্থ) ও লাইন ডাইরেক্টর সোহেল পারভেজ।
সেখানে বলা হয়, বর্তমানে সারাদেশে প্রায় দুই কোটি ৯০ লাখ সক্ষম দম্পতির মধ্যে এক কোটি ৬ লাখ দম্পতি জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি গ্রহণ করেন। যা ৩৭ শতাংশ। এছাড়া একই সংখ্যক দম্পতির মধ্যে প্রায় ২১ লাখ, অর্থাৎ ৮ শতাংশ কনডম ব্যবহার করেন। আর ৪২ লাখ সক্ষম দম্পতির মধ্যে ইনজেকটেবলস নেন ১৫ শতাংশ। এই চাহিদা পূরণে পর্যাপ্ত পরিমাণ জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর মজুত থাকা বাঞ্ছনীয়।
Advertisement
এছাড়া ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারির পর বিভিন্ন পর্যায়ে মজুত ইনজেক্টেবলস ব্যবহার অনুপযোগী হবে। বরাদ্দকৃত অর্থের মাধ্যমে পিপিআর অনুসরণপূর্বক ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রায় ৪-৫ মাস সময় লাগবে। অন্যদিকে পরিচালন (রাজস্ব) বাজেটের অর্থায়নে ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ ২ মাস সময় লাগবে।
এছাড়া সোহেল পারভেজ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চাহিদাপত্রে উল্লেখ করেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পরিচালন (রাজস্ব) বাজেটের আওতায় ১৫০০.০০ লাখ টাকার ৫০.০০ মিলিয়ন পিস কনডম এবং ২৫০০.০০ লাখ টাকার ৫.০০ মিলিয়ন ভায়াল ইনজেকটেবলস ক্রয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া এফপি-এফএসডি অপারেশনাল প্ল্যানের আওতায় ৩০০০.০০ লাখ টাকার ৬.০০ মিলিয়ন ভায়াল ইনজেকটেবলস, ৮১০.০০ লাখ টাকার ২৭.০০ মিলিয়ন পিস কনডম এবং ২৪০০০.০০ লাখ টাকার ৪৮.০০ মিলিয়ন খাবার বড়ি কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মাঠ পর্যায়ে সেবাপ্রদানকারীদের কাছে কনডমের মজুত অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। যথাসময়ে কনডমের সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে কর্মসূচির চলমান প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সহসাই পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রীর ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। আমরা অনেক আগেই এর অনুমোদন দিয়েছি। ক্রয় পরিকল্পনার ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, রাজস্ব খাতসহ দুই জায়গা থেকেই কেনার কথা বলা হয়েছে। অপশন দিয়েছিলাম এক জায়গা থেকে কেনার। তারা যে অপশন দিয়েছিল, তা অনেক আগেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর কার্যক্রম চলমান।
এএএম/জেডএইচ/জেআইএম