জাতীয়

হেলে পড়েছে গোডাউনের এক পাশের দেওয়াল, দুর্ঘটনার শঙ্কা

দীর্ঘ ২৪ ঘণ্টা পরও নিয়ন্ত্রণে আসেনি চট্টগ্রামের এস আলম সুগার মিলের আগুন। আগুনের তাপ ও পুড়ে যাওয়া চিনির গলিত লাভার চাপে হেলে পড়েছে দুর্ঘটনাকবলিত গোডাউনের এক পাশের দেওয়াল। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা করছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা।

Advertisement

মঙ্গলবার (৫ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, সুগার মিলের গোডাউনের (ইউনিট-১) পশ্চিম পাশে আগুন নির্বাপণে কাজ করছিল ফায়ার ফাইটারদের একটি দল। কিছুক্ষণ পর গোডাউনের ছাদ দিয়ে পুড়ে যাওয়া চিনির গলিত লাভা বেড়িয়ে আসতে থাকে। পরে ফায়ার ফাইটাররা সেখান থেকে সরে যান। কিছুক্ষণ পর দায়িত্বরত ফায়ার ফাইটার ও সংবাদকর্মীরা লক্ষ্য করেন জ্বলতে থাকা গোডাউনের পশ্চিম পাশের দেওয়ালটি কিছুটা হেলে পড়েছে।

এসময় ঘটনাস্থলে থাকা বায়েজিদ ফায়ার স্টেশনের স্টেশন লিডার কামরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগুনের তাপ ও গলে যাওয়া কাঁচামালের চাপে দেওয়ালটি হেলে পড়েছে। পরিস্থিতি দেখে আমাদের ইউনিটটি ওই পাশ থেকে সরিয়ে নিয়েছি। যদি দেওয়ালটি ধসে যায়, তাহলে পরিস্থিতির অবনতি হবে। একই সঙ্গে পাশের দুই নম্বর ইউনিটে আগুন ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

নৌ বাহিনীর ফায়ার ফাইটার নাজমুল আলম বলেন, ‘পুরো এলাকাজুড়ে লাভা ছড়িয়ে যাওয়ায় এমনিতেই আগুনের কাছাকাছি যাওয়া যাচ্ছে না। এখন যেভাবে ছাদ পুড়ে যাচ্ছে, তাতে যে কোনো সময় পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।’

Advertisement

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক এম ডি আবদুল মালেক বলেন, ‘আগুন লাগা গুদামটিতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না। যে কারণে আগুন লাগার পর নেভানো সম্ভব হয়নি। বর্তমানে পুরো গুদামটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আগুন থেকে মূল কারখানা রক্ষা করা গেছে। তবে, একটি গুদামে থাকা অপরিশোধিত চিনি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসবে কি না জানি না।’

ফায়ার সার্ভিসের ডেপুটি ডিরেক্টর জসিম উদ্দিন বলেন, ‘পুড়ে যাওয়া কাঁচামাল থেকে কার্বন সৃষ্টি হচ্ছে। অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে যা আরও দাহ্য হয়ে উঠেছে। এ কারণে আগুন নির্বাপণে দেরি হচ্ছে। এ আগুন পানি দিয়ে নির্বাপণ সম্ভব নয়, তাই আমরা আজ থেকে ফোম টেন্ডার ব্যবহার করছি। গুদামটির ছাদ অপসারণ করে ফোম টেন্ডার ব্যবহারের চেষ্টা চালাচ্ছি।’

তিনি জানান, সোমবার আগুন নির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট কাজ করেছে, আজ সাতটিতে নামিয়ে আনা হয়েছে।

Advertisement

এদিকে দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত দল। কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামুন রহমান বলেন, ‘আগুন নেভার আগ পর্যন্ত এর প্রকৃত কারণ বলা যাচ্ছে না। আসা করছি, বৃহস্পতিবারের মধ্যে রিপোর্ট দিতে পারবো।’

এস আলম গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার আক্তার হাসান বলেন, ‘আমাদের মোট ছয়টি গুদাম আছে। পুড়ে যাওয়া গুদামটিতে এক লাখ মেট্রিক টনের বেশি অপরিশোধিত চিনি ছিল। যার সবই পুড়ে গেছে। এখনো আগুন জ্বলছে। বাকি গুদামে বর্তমানে ৬ লাখ ৪১ হাজার মেট্রিক টন চিনির কাঁচামাল রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি আগুন যাতে ছড়িয়ে না যায়।’

বিকেল সাড়ে ৪টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন শিল্প পুলিশের অ্যাডিশনাল ডিআইজি মো. সুলায়মান। তিনি বলেন, ‘আমরা খবর নিয়ে জেনেছি ঘটনার সময় গুদামটি বন্ধ ছিল। এ অবস্থায় কীভাবে আগুনের সূত্রপাত বিষয়টি ভাবাচ্ছে। এছাড়া কয়েকদিন আগেই তাদের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে আগুনের ঘটনা ঘটে। সব মিলিয়ে এটি নাশকতা কি না খতিয়ে দেখছি।’

এসময় চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘দুর্ঘটনাকবলিত গোডাউনটি প্রায় পাঁচ তলার সমান উচ্চতার। এটির পুরোটাজুড়েই চিনির কাঁচামাল মজুত আছে। শুধু নিচ থেকে আগুন নেভানো সম্ভব নয়। এই মুহূর্তে ছাদ ভেঙে ওপর থেকে পানি ছিটানোর বিকল্প নেই, যা আমরা করতে পারছি না।’

এএজেড/এমএএইচ/এমএস