চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এই নিদর্শন খ্রিস্টিয় তৃতীয় শতক থেকে ষষ্ঠ শতকের মধ্যকার। মিরসরাইয়ে এর আগে এতো প্রাচীন কোনো নিদর্শন আর পাওয়া যায়নি।
Advertisement
মিরসরাইয়ের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণারত প্রতিষ্ঠান ‘নয়া দালান’র উদ্যোগে সম্প্রতি প্রত্ন বিশেষজ্ঞ একটি দল মিরসরাইয়ের গহীন পাহাড়ে স্থানটি পরিদর্শন করেন। প্রত্ন বিশেষজ্ঞ দলে ছিলেন চট্টগ্রামের জাতি তাত্ত্বিক জাদুঘরের সহকারী পরিচালক ড. আহমেদ আবদুল্লাহ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক সাদেকুজ্জামান তনু, একই বিভাগের প্রভাষক মুতাসিম বিল্লাহ ও স্থানটির আবিস্কারক লেখক মিরসরাইয়ের কৃতি সন্তান ওসমান গনি এনু।
বিশেষজ্ঞ দলটি প্রত্নস্থলের ভূপ্রকৃতি, গঠন কাঠামো, ইটের সাইজ, ইটের গাঁথুনি, মৃত্তিকা, মূর্তির ভাঙা অংশসহ নানা উপাদান পরীক্ষা নীরিক্ষা করে নিশ্চিত হন এটি মূল্যবান প্রত্নসম্পদ।
প্রত্ন স্থানটির আবিস্কারক লেখক ও গবেষক ওসমান গনি এনু বলেন, আমার বাড়ির ইতিহাস লিখতে গিয়ে ঘটনাক্রমে দীর্ঘ পাঁচ বছর আমি পাহাড়ে অনুসন্ধান করি। প্রাপ্ত নিদর্শন নিয়ে আমি একটি গ্রন্থ লিখি ‘ইন্দ্র রাজার বাড়ি প্রত্নতাত্ত্বিক বিষ্ময়’ নামে। এরপর মুজাহিদের সহযোগিতায় আজ এটি উন্মোচনের অপেক্ষায়। আমার কষ্ট সার্থক হয়েছে। এটি এখন রাষ্ট্রীয় সম্পদ।
Advertisement
ড. আহমেদ আবদুল্লাহ বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে হিন্দু বৌদ্ধ ও মুসলমানদের নানা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ও স্থাপনা পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে খ্রিস্টিয় প্রথম শতকের পূর্ব থেকেই চট্টগ্রামের সঙ্গে বহির্বাণিজ্য, ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক যোগাযোগ বিদ্যমান ছিল। তারই প্রেক্ষিতে মিরসরাইয়ে বর্তমানে যে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখা যাচ্ছে সেটির ভূপ্রকৃতি, গঠন কাঠামো, ইটের সাইজ, ইটের গাঁথুনি, মৃত্তিকা ইত্যাদি পর্যালোচনা করে প্রাথমিকভাবে এটি খ্রিস্টিয় তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শতকের সময়কার বলে অনুমিত হয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর স্থানটি অধিগ্রহণের মাধ্যমে খননকার্য পরিচালনা করলে আমাদের সুনির্দিষ্ট ঐতিহাসিক গৌরবজনক ইতিহাসের একটি অধ্যায় উন্মোচিত হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।
প্রত্নস্থানটি উন্মোচন কাজের উদ্যোক্তা সংস্থা ‘নয়া দালান’র চেয়ারম্যান মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, মিরসরাইয়ে এটি এখনো পর্যন্ত সর্বপ্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বলে মনে হচ্ছে। আমরা মিরসরাইয়ের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণার কাজ করতে গিয়ে ওসমান গনি এনু সাহেবের মাধ্যমে এটির সন্ধান পেলাম। এটি খনন করলে আরও বহু অজানা অধ্যায় উন্মোচিত হবে। সরকারের সহযোগিতায় মহামূল্যবান এই জাতীয় সম্পদ উন্মোচিত হোক।
এই বিষয়ে ওয়াহেদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল কবির ফিরোজ বলেন, আমার ইউনিয়নের পাহাড়ে প্রায় ১৭০০ বছর আগের নিদর্শন পাওয়া গেছে বলে খবর পেয়েছি। যিনি এই নিদর্শনের আবিস্কার করেছেন তিনি আমার এলাকার দক্ষিণ ওয়াহেদপুর গ্রামের মোল্লা বাড়ির কৃতি সন্তান লেখক, গবেষক ওসমান গনি এনু। আমি উনাকে ধন্যবাদ জানাই এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এমন একটি নিদর্শন আবিস্কারের জন্য।
চট্টগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উর রহমান রুহেল আবিষ্কৃত প্রত্নস্থানটির ব্যাপারে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মাধ্যমে খনন কার্যক্রম করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
Advertisement
এম মাঈন উদ্দিন/এফএ/জেআইএম