ইউক্রেনকে ‘টাউরুস’ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে জার্মান বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের গোপন আলোচনার রেকর্ডিং ফাঁস করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে রাশিয়া। শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) শিয়ার সংবাদ মাধ্যমে সেই গোপন কথোপকথন ফাঁস হয়ে যাওয়ায় জার্মানিতে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সেই সঙ্গে এই ঘটনার পরিণতি নিয়েও ইউক্রেনের মিত্রদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
Advertisement
ওয়েবএক্স নামের সফটওয়্যারের মাধ্যমে সেনা কর্মকর্তাদের কনফারেন্স কলে আড়ি পাতার ঘটনা ঠিক কীভাবে ঘটেছে, সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে রাশিয়া সরাসরি আড়ি পেতেছে, নাকি জার্মান সেনাবাহিনীতেই সরষের মধ্যে ভুত রয়েছে, সেটা জানার চেষ্টা চলছে।
তাছাড়া আড়ি পাতার এমন ক্ষমতা থাকলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এমন আরও আলোচনা রাশিয়া শুনে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। বলা হচ্ছে, সেসব সংলাপ ফাঁস হলে জার্মানির ভাবমূর্তি ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
জানা গেছে, ভুলবশত রাশিয়ার কাছে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর নিরাপত্তাজনিত গোপন তথ্য ফাঁস করে দেয় জার্মানি। পুরোনো ও অপ্রচলিত প্রযুক্তির মাধ্যমে ভিডিও কল করে স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনার একটি ভিডিও রাশিয়ার কবজায় চলে যায়।
Advertisement
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ইউক্রেনে ন্যাটো জোটের সদস্য যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স কীভাবে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি হস্তান্তর করবে, তা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলছিলেন জার্মান বিমানবাহিনী লুফথভাফের প্রধান ও শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লুফথভাফের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইঙ্গো গেরহার্টজ ও আরও কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা ইউক্রেনে স্টর্ম শ্যাডো নামক ক্ষেপণাস্ত্র কীভাবে পাঠানো হচ্ছে, সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। লে. জেনারেল ইঙ্গো গেরহার্টজ তার হোটেল রুম থেকে ওই ভিডিও কল করেছিলেন।
জার্মানির জেনারেল গেরহার্টজ ভিডিও কলে বলেছেন, ব্রিটিশ সেনারা (ইউক্রেনের) রণভূমিতে ছিল। রাশিয়া অনেক দিন থেকেই এই অভিযোগ করে আসছে যে, ইউক্রেনে ব্রিটিশ সেনারাও লড়ছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে ন্যাটো মিত্র দেশগুলো মধ্যে বিভাজন ও অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকট হয়েছে। সম্প্রতি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় একটি সম্প্রচার মাধ্যমে এই কলের একটি রেকর্ডিং প্রচারিত হয়।
এই ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর রোববার (৩ মার্চ) জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস বলেছেন, ভ্লাদিমির পুতিন এই রেকর্ডিং ব্যবহার করে জার্মানিকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছেন ও পশ্চিমাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির ফন্দি করছেন।
Advertisement
এদিকে, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এই রেকর্ডিং ফাঁস হওয়ার ঘটনাকে খুবই গুরুতর ও দুঃখজনক বলে আখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে, জার্মানির জোট সরকারের নিরাপত্তাবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা আরও বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। আরও জোরালোভাবে গুপ্তচরবৃত্তি মোকাবিলার দাবি জানিয়েছেন সরকার ও বিরোধী পক্ষের নেতারা।
সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ, ডয়েচে ভেলে
এসএএইচ