আন্তর্জাতিক

গাজায় মৃত্যুর মিছিল থামছেই না

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ফলে সেখানে ইতোমধ্যেই নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে কমপক্ষে ৩০ হাজার ৫৩৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। খবর আল জাজিরার।

Advertisement

গত ৭ অক্টোবরের পর ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত এই অবরুদ্ধ উপত্যকায় ৭১ হাজার ৯২০ জন আহত হয়েছে।

এদিকে ইসরায়েলি আগ্রাসনের মুখে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার কামাল আদওয়ান হাসপাতালে ১৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা সবাই অপুষ্টি ও পানিশূন্যতাজনিত কারণে মারা গেছে। প্রাণহানির শঙ্কায় রয়েছে আরও কয়েকটি শিশু।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, কামাল আদওয়ান হাসপাতালে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে ১৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বৈদ্যুতিক জেনারেটর বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং অক্সিজেন সরবরাহ না থাকায় সেখানে যথাযথ চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে থাকা আরও ছয় শিশুর জীবনশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

Advertisement

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) সতর্ক করে বলেছিল, ইসরায়েলি হামলার মুখে গাজা উপত্যকায় শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের স্বাস্থ্যের জন্য অপুষ্টি ‘গুরুতর হুমকি’ হয়ে উঠেছে।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলা গাজার ৮৫ শতাংশ মানুষকে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র ঘাটতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। হামলায় উপত্যকাটির ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আচমকা হামলা চালায় হামাস ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো। এরপর থেকেই প্রতিশোধের নামে গাজায় বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।

ফিলিস্তিনে আগ্রাসনের কারণে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা চলছে। গত জানুয়ারিতে এক অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে তেল আবিবকে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানের নিশ্চয়তা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।

Advertisement

এদিকে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধে জাতিসংঘের প্রস্তাবে ভেটো দেওয়া একমাত্র দেশ ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তাদের আপত্তিতেই অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে এখনো যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়নি। সেই যুক্তরাষ্ট্রই এবার গাজাবাসীর জন্য আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলা শুরু করেছে।

বিবিসি জানিয়েছে, গাজায় মানবিক সহায়তার প্রথম ধাপে ৩৮ হাজার প্যাকেট খাবার ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনটি সামরিক প্লেন থেকে প্যারাসুটের সাহায্যে এসব ত্রাণ মাটিতে পৌঁছানো হয়েছে। এই কাজে যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করেছে জর্ডানের বিমান বাহিনী।

এর আগে খাবারের আশায় ট্রাকের কাছে ছুটে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের গুলিতে শতাধিক মানুষ মারা যাওয়ার পর ত্রাণ সহায়তা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শনিবার কয়েকটি সি-১৩০ পরিবহন প্লেন গাজা উপকূলে ৩৮ হাজারের বেশি খাবারের প্যাকেট ফেলেছে। এটি গাজায় সহায়তা প্রবাহ সম্প্রসারণের জন্য একটি স্থির প্রচেষ্টার অংশ।

আরও পড়ুন:

গাজায় অপুষ্টি-পানিশূন্যতায় আরও ১৫ শিশুর মৃত্যু গাজায় ক্ষুধার যন্ত্রণায় মারা গেলো ২ মাসের শিশু উত্তর গাজায় ৬ শিশুর মৃত্যু, অন্যদের অবস্থা আশঙ্কাজনক ২৫ হাজারের বেশি নারী-শিশুকে হত্যা করেছে ইসরায়েল: যুক্তরাষ্ট্র

এর আগে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, মিশর, জর্ডানসহ অন্যান্য দেশ গাজায় আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলেছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা এবারই প্রথম। কিন্তু ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় মানবেতর পরিস্থিতিতে থাকা লাখ লাখ মানুষের জন্য এই ত্রাণ সহায়তা একেবারেই অপর্যাপ্ত।

টিটিএন