বিএনপির ডাকা ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের দিন হামলা ও নাশকতাকে কেন্দ্র করে বাবা হামিদ ভূঁইয়ার পরিবর্তে ৪ বছরের নূরজাহান নুরী ও ৭ বছরের আকলিমার মা হাফসা আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হাফসার জামিনের বিষয়ে আদেশ দেওয়ার জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার (৫ মার্চ) দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
এদিন দেশের উচ্চ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষকে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়। সোমবার (৪ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে এদিন জামিন আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. মাকসুদ উল্লাহ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান।
শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, এই মহিলা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন আসামি হিসেবে। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষ বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ আছে, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও আছে। পরে হাইকোর্ট বলেন, তাহলে সিসিটিভি ফুটেজ দেখবো।
Advertisement
গত ২৯ নভেম্বর গণমাধ্যমে প্রচারিত ‘বাবা ঘরে আসুক, কারাগার থেকে ফিরুক মা’ শীর্ষক এক সংবাদে বলা হয়, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে গ্রেফতার এড়াতে বিএনপির কর্মী আবদুল হামিদ ভূঁইয়া পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তার স্ত্রী হাফসা আক্তার নাশকতার মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন। মা-বাবার জন্য কাঁদছে চার বছরের ছোট্ট নূরজাহান ও আকলিমা।
এবিষয়ে আবেদনকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের জানান, নাশকতার মামলায় কারাবন্দী মায়ের জামিন আবেদনের শুনানি থাকায় দাদির সঙ্গে হাইকোর্টে এসেছে চার বছর বয়সী নূরজাহান ও তার সাত বছর বয়সী বড় বোন আকলিমা। দুই বোনের মা হাফসা আক্তার নাশকতার অভিযোগে করা এক মামলায় কারাগারে আছেন। এই মামলায় বিচারিক ( নিম্ন) আদালতে বিফল হয়ে উচ্চ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করেন হাফসা। হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ হাফসার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হয়।
শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ সংক্রান্ত ফুটেজ (সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ) রাষ্ট্রপক্ষকে আগামীকাল মঙ্গলবার (৬ মার্চ) আদালতে দাখিল করতে বলেছেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালতে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।
মামলায় গ্রেফতারের পর গত বছরের ২৭ নভেম্বর থেকে কারাগারে আছেন হাফসা। মামলায় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিফল হন তিনি। এরপর তিনি জামিন চেয়ে রোববার (৩ মার্চ) হাইকোর্টে আবেদন করেন। আবেদনটি আজ শুনানির জন্য হাইকোর্টে ওঠে।
Advertisement
এর আগে জামিন আবেদনের শুনানি থাকায় দাদির সঙ্গে হাফসার দুই মেয়ে সকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে অবস্থিত আইনজীবীর চেম্বারে আসে। পরে সেখান থেকে কোর্টে যায় (হাইকোর্টের বর্ধিত ভবনের ৩১ নম্বর) তারা।
প্রায় ১০ মিনিটের মতো শুনানি হয়। শুনানির সময় আদালত কক্ষে থাকা সর্বশেষ আসনটিতে দাদির হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিল আকলিমা। অন্যদিকে দাঁড়িয়ে থাকা চাচার কোলে ছিল নূরজাহান।
গত ২৯ নভেম্বর রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন হয়েছিল। সেদিন নূরজাহান ও আকলিমার মতো মানববন্ধনে এসেছিল আরও কিছু শিশু। মানববন্ধনের ব্যানারে আয়োজক হিসেবে লেখা ছিল, ‘রাজবন্দীদের স্বজন’।
দুই শিশুর বাবা আবদুল হামিদ ভূঁইয়া বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। দুই শিশুর দাদা আবদুল হাই ভূঁইয়া ২৯ নভেম্বরের মানববন্ধনে অভিযোগ করে বলেছিলেন, তার বড় ছেলে হামিদকে পুলিশ খুঁজছে। তাকে না পেয়ে ছেলের স্ত্রী হাফসাকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। অথচ হাফসা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন।
এফএইচ/এসআইটি/জেআইএম