জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দিনের পর দিন দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এ কারণে অগ্নিকাণ্ডগুলো ঘটেই চলছে। একটি ভবনের অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি দপ্তর সমূহকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন।
Advertisement
রোববার (৩ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সভাকক্ষে ‘অগ্নি দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তিঃ প্রাণহানির শেষ কোথায়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য সেলিম রেজা, সদস্য ড. তানিয়া হক ও আমিনুল ইসলাম, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) কাজী আরফান আশিক।
কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, ‘অগ্নি দুর্ঘটনার জন্য দায়ী প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, ভবনমালিকসহ দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করা হলে অগ্নিকাণ্ড ও মৃত্যুর ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে। এ ধরনের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ জরিমানার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। আমাদের আইনেও বিস্তারিত উল্লেখ আছে, কিন্তু প্রয়োগ ঠিকমত হচ্ছে না। এটিই সমস্যা জিইয়ে রাখছে। সরকারি নিয়ন্ত্রণ সংস্থার উদাসীনতা, ম্যানেজ হওয়ার প্রবণতা ও দায়িত্বহীনতা প্রতীয়মান হচ্ছে।’
Advertisement
সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতায় একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মামলা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আবার দু-একটি ক্ষেত্রে মামলা হলেও সাজার কোনো নজির নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ীদের চিহ্নিত করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিগত বছরগুলোতে সংঘটিত বড় বড় অগ্নিকাণ্ড ও বিষ্ফোরনের ঘটনাগুলো থেকে আমরা যথাযথ শিক্ষা গ্রহণ করিনি। কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
অগ্নিকাণ্ড বিষয়ে দেশে মোট ২২টি আইন এবং হাইকোর্টের একটি জাজমেন্ট আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রণীত আইন কাঠামোতে লাইসেন্স প্রদানের সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ মনিটরিং না করেই লাইসেন্স দিয়ে থাকেন। কঠোরতার সাথে সব সেফটি মেজারস পরিবীক্ষণ করে লাইসেন্স প্রদান বাধ্যতামূলক করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের পর পরই একাধিক সংস্থা তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিছুদিন ঘটনাগুলোর ওপরে আলোচনা-সমালোচনা হয়। বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকতায় আবদ্ধ হয়ে পড়ে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া এবং সুপারিশমালা বাস্তবায়িত না হওয়ায় ঘটনাগুলো চলতে থাকে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনাগুলোতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও সুপারিশ প্রদান করেছে। কমিশন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যেসব সুপারিশ করেছে তা বাস্তবায়ন হলে দুর্ঘটনাগুলো পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হতো। প্রত্যেকের মানবাধিকার নিশ্চিত করা, তাদের জীবন ও কর্মের অধিকারে যাতে বিঘ্ন না ঘটে সেটিও কমিশন গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে থাকে। এসএম/এমআইএইচএস
Advertisement