বিপিএলের জমজমাট আসর শেষ হয়ে গেছে শুক্রবার রাতে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হ্যাটট্রিক শিরোপা জিততে না দিয়ে প্রথমবারের মত শিরোপা ঘরে তুলে নিলো ফরচুন বরিশাল। ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ৬ উইকেটে হারিয়ে বিপিএল চ্যাম্পিয়ন হলো তামিমের বরিশাল। টুর্নামেন্সে শেষ হওয়ার পর এখন চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো টুর্নামেন্টের সেরা একাদশ বাছাই করেছে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে।
Advertisement
তামিম ইকবাল (অধিনায়ক)৪৯২ রান, ৩৫.১৪ গড়, স্ট্রাইকরেট ১২৭.১৩
বরিশালের হয়ে অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন তামিম ইকবাল। যে কারণে টুর্নামেন্ট শেষে তিনি হলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ব্যাটার। তিনটি ফিফটি রয়েছে তার এর মধ্যে। সর্বোচ্চ ৭১। ফাইনালে করলেন ৩৯ রান। বিপিএলে চতুর্থবার তিনি ৪০০ রানের গণ্ডি পার হলেন।
তানজিদ হাসান তামিম৩৮৪ রান, গড়: ৩২.০০, স্ট্রাইক রেট: ১৩৫.৬৮।
Advertisement
প্রথম ৯ ম্যাচে মাত্র একটি ফিফটি। বাংলাদেশ ক্রিকেটে তাকে অন্যতম সেরা প্রতিভা হিসেবে সবাই গণ্য করে থাকে। টুর্নামেন্টের শেষের দিকে এসে সেটার প্রমাণ দিতে থাকেন। দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে ৫১ বলে ৭০ রান করলেন। পরের ম্যাচেই ৬৫ বলে ১১৬ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন তিনি। যে কারণে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স প্লে অফে খেলার সুযোগ পেলো।
তাওহিদ হৃদয়৪৬২ রান। গড়: ৩৮.৫, স্ট্রাইক রেট: ১৪৯.৫
টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক কুমিল্লা ভিক্ তাওহিদ হৃদয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তাকে আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিণত ব্যাটার মনে হয়েছে। দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে ৫৭ বলে ১০৮ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। এছাড়া চট্টগ্রামে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে খেলেন ৪৭ বলে অপরাজিত ৯১ রানের ইনিংস। এরপর রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে প্রথম কোয়ালিফায়ারে খেলেন ৬৪ রান। ২০২৩ সালেও তিনি ছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
বাবর আজমরান ২৫১, গড়: ৫০.২০, স্ট্রাইক রেট: ১১৪.৬১
Advertisement
রংপুর রাইডার্সের হয়ে মাত্র ৬টি ম্যাচ খেলেছেন বাবর আজম। তবুও তিনি টুর্নামেন্ট সেরার দলে। ৬ ম্যাচের মধ্যে জয় পেয়েছে ৫টিতে। যেটাতে জয় পায়নি, সেটাতে বাবর খেলেছেন মাত্র ২ রানের ইনিংস। ৫ ম্যাচে অবদানই তাকে সেরা দলে ঠাঁই এনে দিলো।
জেমস নিশাম২৯১ রান, গড়: ৭২.৭৫, স্ট্রাইক রেট: ১৬৭.২৪, উইকেট: ৪, ইকনোমি রেট: ৯.৯৩
বাবর আজম রংপুর রাইডার্স ছেড়ে যাওয়ার পর তার জায়গা পূরণ করতে আসেন নিউজিল্যান্ডের জিমি নিশাম। বাবরের মতোই প্রথম ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি। আরও দুটি অপরাজিত ফিফটি ইনিংস খেলেন নিশাম। প্রথম কোয়ালিফায়ারে কুমিল্লার বিপক্ষে খেলেছিলেন ৯৭ রানের ইনিংস। যদিও সেটা কাজে লাগেনি।
মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক)৩৮০ রান, গড়: ৩১.৬৬, স্ট্রাইক রেট: ১২০.৬৩, ক্যাচ: ১৭টি, স্টাম্পিং: ২টি।
২০২৪ বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন বরিশালের মুশফিকুর রহিমই হলেন সবচেয়ে সেরা উইকেটরক্ষক ব্যাটার। তার অভিজ্ঞতা এবং পারফরম্যান্স লিটন দাস ও নুরুল হাসান সোহানকে ছাড়িয়ে গেছে অনেকদূর। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে দলকে কঠিন সময়ে সাহায্য করেন মুশফিক। সব মিলিয়ে করেছেন তিনটি ফিফটি।
কাইল মায়ার্স২৪৩ রান, গড়: ৪০.৫০, স্ট্রাইক রেট: ১৫৭.৭৯, উইকেট: ৯টি, ইকনোমি: ৫.৯১
বিপিএলে শেষের দিকে এসে যোগ দেন ক্যারিবীয় ক্রিকেটার কাইল মায়ার্স। তবে, তার অন্তর্ভূক্তি বরিশালের জন্য ছিল যেন সোনায় সোহাগা। তার ইমপ্যাক্টটা ছিল দারুণ। সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই ৪৮, উইকেট নিয়েছিলেন ১২ রানে ৩টি। এরপর নিয়মিত প্রতিটি ম্যাচেই পারফর্ম করে গেছেন তিনি। ফাইনালে খেলেন ৪৬ রানের ইনিংস। যে কারলে ফাইনাল সেরার পুরস্কারও জেতেন তিনি।
সাকিব আল হাসান২৫৫ রান, গড়: ২৩.১৮, স্ট্রাইক রেট: ১৫৮.৩৮, উইকেট: ১৭টি, ইকনোমি: ৬.৩১
বরিশালের কাছে হেরে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার থেকে বিদায় নিতে হয়েছিলো সাকিব আল হাসানের রংপুর রাইডার্সকে। এই ম্যাচে করেন মাত্র ১ রান। আবার টুর্নামেন্টের শুরুর দিকেও তার চোখের সমস্যার কারণে ভালো করে খেলতে পারেননি। মাঝামাঝি সময়ে এসে জ্বলে উঠেছিলেন সাকিব। ২৫৫ রান করার পাশাপাশি ১৭টি উইকেটও নিলেন তিনি।
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনউইকেট: ১৫টি, গড়: ১৫.৬৬, ইকনোমি: ৬.৮১
তার ফিটনেস নিয়ে অনেক বেশি শঙ্কা ছিল। কিন্তু সাইফউদ্দিন সব শঙ্কা পেছনে ফেলে বিপিএলের শেষ দিকে এসে বরিশালের জার্সিতে মাঠ মাতান। তার অসাধারণ ব্যাটিং এবং বোলিং বরিশালের শিরোপা জয়ে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছিলো। ৯ ম্যাচে নিয়েছেন ১৫টি উইকেট। ফাইনালের শেষ ওভারে তিনটি ওয়াইড এবং একটি নো বল দেয়ার পরও আন্দ্রে রাসেল এবং জাকের আলিকে আটকে রেখেছিলেন তিনি। দিয়েছিলেন সব মিলিয়ে মাত্র ৭ রান।
বিলাল খানউইকেট: ১৫, গড়: ২৬.০৬, ইকনোমি: ৭.৯২
ওমানের বাঁ-হাতি পেস বোলার বিপিএলে তার প্রথম অভিযাত্রা শেষ করলো যৌথভাবে চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হিসেবে। বিপিএলের শুরুতে চট্টগ্রামের দারুণ পারফরম্যান্সের পেছনে বিলাল খানের দুর্দান্ত বোলিং নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।
শরিফুল ইসলামউইকেট: ২২, গড়: ১৫.৮৬, ইকনোমি রেট: ৭.৮১
তার দল দুর্দান্ত ঢাকা রাউন্ড রবিন লিগের ১২ ম্যাচের মধ্যে হেরেছে ১১টিতে। প্রথম ম্যাচ জয় দিয়ে শুরু করলেও পরের সব ম্যাচ হেরেছে শরিফুলের দুর্দান্ত ঢাকা। কিন্তু শরিফুল ছিলেন একাই উজ্জ্বল। ১২ ম্যাচে তিনি নিয়েছেন ২২ উইকেট। যে রেকর্ড পরে আর কেউ ভাঙতে পারেনি।
আইএইচএস/