সাহিত্য

ওমর শরিফের দুটি কবিতা

মায়া

Advertisement

আমার খুব জানতে ইচ্ছে করেতুমি এখনো কি আকাশ দেখোসমুদ্র কূলে দাঁড়িয়ে কিংবামজুমদার বাড়ি মাঠের পরেহাঁটতে হাঁটতে আমাকে ভাবো?অথবা ধরো এই দেওয়াল ঘড়িটাকে চালু করতে করতেসময়ের হিসাব নেওয়া হয়ে গেলে আমাকে ভাবো?আমার চশমা দিয়েই অবলীলায় কাটিয়ে দাও সারাদিনআমি ভাবি আর অবাক হই,কীভাবে পারো বলো তো?এত খামখেয়ালি মানুষ হতে পারে?এই তো সেদিন পকেট থেকে রুমালটা হারালেঅথচ তুমি জানতেও পারলে নালেখালেখির কলমটা দিব্যি পকেটে গুঁজেঘরময় খুঁজে সারাবাড়ি মাথায় করলে।মোবাইলটা বাজারের কোন দোকানে ফেলে এলে কে জানে?হুটহাট এখানে সেখানে চলে যাওয়াতোমার পুরোনো অভ্যাস।বড় ইন্দারা লাগোয়া চায়ের দোকানটাতোমার খুব প্রিয়ওখানকার মোহিত দে তোমার একান্ত বন্ধু।তোমার বন্ধুদের ফিরিস্তি কি আর বলবোভাগ্যিস আমার এত বন্ধু নেইতোমার মতো বন্ধু এই একটিই যথেষ্ট।তোমার পথের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে থাকিঅকারণে বলে উঠি, ‘রাতে ভালো ঘুম হয়েছে তো’?গতরাতে ওষুধটা ঠিকঠাক খাওয়া হয়েছিল?রাতে গরম কাপড় পরতে ভুলে যেও না কিন্তুবেশ ঠান্ডা আজকাল।ভাতের সঙ্গে লঙ্কা পোড়া দেয় ওরা?গভীর ঘুমে নাক ডাকলে বিব্রত হয় কি কেউ?ভাবি আর হাসি, তুমি কেন এত ছেলেমানুষ!তোমাকে নিয়ে আমার চিন্তার শেষ নেইঅথচ তুমি কী সুন্দর নির্বিকার, ভাবনাহীন।তোমাকে নিয়ে এত কেন ভাবি?তুমি ভালো থাকলে ভালো লাগে।এ আমার প্রেম নয়প্রেমে দুর্বার আকর্ষণ আর দহন আছেভালোবাসায় আছে মোহতোমার প্রতি আমার যা একে কি নাম দেবো? মায়া।তোমার ভালো থাকাটাই যার একমাত্র চাওয়া—নির্জলা সকালের মতো, নির্মোহ ঘুমের মতো।

****

তোমার নাম

Advertisement

মেঘরাশি যদি আকাশের প্রাচুর্যসমুদ্রের অহংকার বালুকাবেলা—শুধুআমার গর্বের ধন তোমার চিবুকে কৃষ্ণকালো তিলতবু বৃশ্চিকের বিষ বাষ্পেসপ্তর্ষিমণ্ডলের কোনো তারা যেনবামুন হয়েছে কবে সুপার নোভার মতো হঠাৎ জেগে ঘুমিয়ে পড়েছে যবেসুকতারা হয়ে আকাশের পরেপথিকের পথের ন্যায় গাঢ় রেখাতোমার কপালে বাঁশফুলে জোছনা রাতের মায়া ঝরেআর—বেলি ফুলের নুয়ে পড়া ডালেপ্রেম তার ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়তাকে বুঝি নিয়ে যায় অন্তিম সজ্জায়আকাশের পরে আকাশ, মেঘের পরে মেঘ সজ্জার উপনাম উপমা হয়ে রয় নিভৃতে কিশোরীর কান্নার মতোবসন্তে কোকিলের আর্তনাদের মতো শেয়ালের কর্কশ ভর্ৎসনার মতোপ্রদীপ্ত হয়ে নিঃশেষ হয়ে যায়।তারপর—একদিন মৌনতার মায়া ফেলে জলপ্রপাতের মতো বিধ্বংসীসুনামির মতো সর্বগ্রাসী তোমার হৃদয়ে রুদ্ধঅভিমানের বাষ্পকণা কখনোবিকট হুংকারে আগ্নেয়গিরির লাভার মতোফেটে পড়ে যখনতখন—পৃথিবীর কান্না হয়ে আমাকে পোড়ায় আমার নাম মুছে দেওয়া কর্তব্যজ্ঞান করে, তবুওনিভৃতে ক্রন্দনে বুকের মাঝে জেগে রয় তোমার নাম—অম্লান, অকৃত্রিম।

এসইউ/এএসএম