জাতীয়

লিপ ইয়ার এভাবে ‘স্মরণীয়’ হলো!

ছোট একটি ভবনে তিনটি বড় রেস্টুরেন্ট। তিন রেস্টুরেন্টে খাচ্ছিলেন অন্তত হাজারখানেক মানুষ। লিপ ইয়ারকে স্মরণীয় করে রাখতে মানুষগুলো এসেছিল খেতে। যখন খাওয়া-দাওয়া আর আড্ডা চলছিল, হঠাৎ করেই তখন ছড়িয়ে পড়লো আগুন। দুই ঘণ্টার মধ্যেই ঝরে গেলো অন্তত ৪৩টি তাজা প্রাণ। হাসপাতালে ছটফট করছেন আরও অন্তত ২০ জন।

Advertisement

মাসের শেষ দিন, সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসের রাতের এ ভয়াবহতা চরম দাগ কেটে গেছে সাধারণ মানুষের মনে। সবার মনেই এক প্রশ্ন ঘুরছে, এভাবে খেতে তো আমরাও যাই। চকচকে, সাজানো-গোছানো পরিবেশ, যেখানে যাই কিছু ভালো সময় কাটাতে, সেটি মুহূর্তেই এভাবে বিষাদে পরিণত হয়ে গেলো?

এ আগুনের খবর দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, গার্মেন্টসের বাইরে অন্যান্য শিল্পগুলো বাংলাদেশের স্থানীয় অর্থনীতিকে যে হারে ফুলে-ফেঁপে উঠতে সাহায্য করছে, সে হারে এসব খাতে নিরাপত্তায় জোর দেওয়া হচ্ছে না। ফলাফল হিসেবে গত কয়েক বছরে আগুনে প্রাণ গেছে শতশত মানুষের।

আরও পড়ুন

Advertisement

হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ, এরপর চারদিকে অন্ধকার ছেলেদের কান্না থামাতে রেস্টুরেন্টে যান নাজিয়া, রইলো না বেঁচে কেউ

রয়টার্সের খবরের সূত্র ধরে আমরা চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাই, পুরো শহরে চালু হয়েছে হাজার হাজার রেস্টুরেন্ট। এসব রেস্টুরেন্টের মধ্যে যারাই নাম করেছে, তারাই খুলেছে একাধিক শাখা। বেইলি রোড থেকে খিলগাঁও, উত্তরা থেকে ধানমন্ডি, বাড্ডা থেকে পুরান ঢাকা- সবখানেই দেখা যায় একই চিত্র। এ রেস্টুরেন্টগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে।

নগরজীবনে যেখানে আমাদের নিশ্বাস নেওয়ার মতো খালি জায়গা পাওয়া যায় না, সেখানে রেস্টুরেন্টগুলোই হয়ে উঠেছে আমাদের আড্ডাখানা। সেখানকার কর্মীরা হয়ে উঠেছেন আমাদের আপনজন। যেখানে গিয়ে গা এলিয়ে কিছু সময় আড্ডা দেওয়া যায়। নিজের স্বাদের সঙ্গে মিলিয়ে খাওয়া যায় মুখরোচক খাবার। সেখানেই এমন মৃত্যু যন্ত্রণা!

বেইলি রোডের গ্রিন কজি কটেজ ভবন পুড়ে শেষ হওয়ার পর আমরা জেনেছি, সেটি ছিল ‘বিপজ্জনক’। বাকি ভবনগুলো কি বিপদমুক্ত, এ প্রশ্ন ঘুরছে মনে।

আরও পড়ুন

Advertisement

অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচতে চাইলে যেখানে পাবেন আগুন নেভানোর যন্ত্র অগ্নিনিরাপত্তায় গ্রাহকদের আস্থার প্রতীক ‘সেফমেট’ আগুন-ধোঁয়ায় সেকেন্ডেই বাজবে ফায়ার এলার্ম

এ নিয়ে নিজের আশঙ্কার কথা লিখেছেন আমাদের সাবেক সহকর্মী জেসমিন পাপড়ি। নিজের ফেসবুক আইডিতে তিনি বর্ণনা দিয়েছেন ধানমন্ডির একটি ভবনের। পাপড়ি লিখেছেন, ‘ধানমন্ডিতে ৯ বা ১০ নম্বরে একটি বড় বিল্ডিং আছে। সেখানকার প্রায় সব ফ্লোরে রিরাট সব রেস্তোরাঁ। হাজার হাজার মানুষ সেখানে হুমড়ি খেয়ে যায়। নেমন্তন্ন খেতে ২ বার গিয়েছিলাম। শুরুতেই লিফটে উঠতে বিরাট লম্বা লাইন ধরতে হবে। নামার অবস্থা আরও খারাপ। সেদিন ফেরার সময় খুব খুব তাড়া ছিল আমার। ভাবলাম সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকি। কিন্তু গিয়ে দেখি সিঁড়িগুলো বলা যায় অন্ধকার! ব্যবহার দূরে থাক, সম্ভবত বছরের পর পছর পরিষ্কার করে না। ... বন্ধুদের সঙ্গে আলাপে বহুবার বলেছি, বড় একটি বিপদ এই রেস্তোরাঁতে না হওয়া পর্যন্ত কেউ সচেতন হবে না! আমার সে আশঙ্কা সত্যি হলো। ধানমন্ডি বাঁচলেও বেইলি রোড পুড়ে ছারখার!...’

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, উদ্যোক্তা ও রন্ধনশিল্পী উম্মাহ মোস্তফা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কিছু বোঝার আগেই দেখলাম ব্লিডিংটা পুড়ছে...! কাছে থেকে এভাবে পুড়ে যাওয়া দেখে আমার বড় দুই মেয়ে, মা সবাই কান্না করছিল। কারণ এইখানের সবগুলা রেস্টুরেন্টে আমরা খেতে যাই। আমাদের ১২ বছরের বিবাহ বার্ষিকীর অনুষ্ঠান এই কাচ্চি ভাইয়ে হয়েছিল। ...কষ্টে দম বন্ধ হয়ে আসছিল আমার। দুপুরে যেখানে যাবার ছিল সেখানে রাতে আগুন। মৃত্যু আমাদের চারপাশে ঘুরছে...! আমরা সেটা দেখি না, বুঝার মতো বুঝও রাখি না।’

২৯ ফেব্রুয়ারি সারাদিনই হাজার হাজার মানুষ ফেসবুকে নানান ধরনের পোস্ট দিচ্ছিলেন। সবাই মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন, লিপ ইয়ারকে স্মরণীয় করে রাখতে আজ ছবিটা টাইমলাইনে দিয়ে রাখলেন। অনেকেই ঘুরতে গিয়েছিলেন বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে। তবে সবচেয়ে বেশি মানুষ গিয়েছিলেন শহরজুড়ে গড়ে ওঠা রেস্টুরেন্টগুলোতে।

তবে কে জানতো, ঢাকা শহরের এবারের লিপ ইয়ার এভাবে ‘স্মরণীয়’ হয়ে যাবে!

লেখক: জাগো নিউজের সহ-সম্পাদক

এমএইচআর/এমএস