অর্থনীতি

ফোরাম জয়ী হলে পোশাকশিল্প মন্ত্রণালয় করার প্রচেষ্টা চালানো হবে

আগামী ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে তৈরি পোশাক শিল্প মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএর নির্বাচন। আসন্ন ওই নির্বাচনে ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদ নামে দুটি প্যানেলের হয়ে নির্বাচনে লড়ছেন প্রার্থীরা। ওই নির্বাচনে জয়ী হলে পোশাক শিল্পের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় করার উদ্যাগ নেবে ফোরাম প্যানেল। একই সঙ্গে তারা মোট ২৫ দফার ইশেতহার ঘোষণা করেছে।

Advertisement

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন ফোরামের প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ। এসময় ফোরাম প্যানেল সভাপতি এম এ সালাম, চিফ ইলেকশন কো-অর্ডিনেটর আসিফ ইব্রাহিমসহ প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

ইশতেহার ঘোষণায় ফোরামের প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ বলেন, আমরা শুধু ডেজিগনেটেড ডিরেক্টর নির্বাচিত হোক চাই না। যারা ডিরেক্টর হবেন তাদের কাজের ব্যাপারে কৈফিয়ত দিতে হবে। যারা আমাদের ফোরামের হয়ে নির্বাচন করছেন তাদের কাছ থেকে শপথ নেওয়া হয়েছে যে তারা কাজ করবেন। এবং প্রতি তিন মাস অন্তর আমরা কাজের যাচাই-বাছাই করবো। একটি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূল বিজিএমইএ গড়ে তুলতে বিজিএমইএ-এর সব কার্যক্রম ইআরপিতে অন্তর্ভূক্ত করা। প্রতিটি কারখানার জন্য স্বল্পমল্যে ইআরপি সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আধুনিক প্রযুক্তি ও সম্যক জ্ঞান শিল্পের সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া।

তিনি বলেন, আমাদের কাজ হবে কাস্টমস ও বন্ড ম্যানেজমেন্ট অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসা। লোকাল সোর্সিং, নতুন উদ্ভাবন, নতুন প্রযুক্তি ও প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্টের জন্য ডাটাবেজ প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার করা হয়। এলডিসি থেকে উত্তরণ ও জিএসপি+ এর জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা এবং সরকারের সঙ্গে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি ও সহনশীল সমঝোতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হবে। পোশাকশিল্পের জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া যাতে করে সরকার জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নে সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

Advertisement

পণ্যে বৈচিত্র্যকরণ ও নতুন বাজার সম্প্রসারণের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের সব দূতাবাসকে কাজে লাগানো হবে বলেও জানানো হয়। পাশাপাশি উৎসে কর ০.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা ও চলমান প্রণোদনাগুলো ২০২৬ পর্যন্ত বলবৎ রাখার ব্যবস্থা করা হবে। পোশাকশিল্পের মালিকদের সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা পরিচালনার জন্য সব প্রকার সার্বজনীন দাবিগুলো সরকারের কাছে ও অন্যান্য অংশীজনের কাছে সময়মত পৌঁছানো হবে। ব্যাংকিং কার্যক্রমের জটিল বিষয়গুলোকে সহজীকরণ এবং ঋণ পুনঃতফশীলি সহজীকরণ করা হবে। রপ্তানির অপ্রত্যাবাসিত মূল্য আনয়নের লক্ষ্যে বিজিএমইএ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশের দূতাবাসকে সম্পৃক্ত করে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর সেল তৈরি করা হবে বলেও জানায় ফোরাম।

বিজিএমইএ-তে ক্রেতাদের নিবন্ধন (বায়ার রেজিস্ট্রেশন) নিশ্চিত করা ও ক্রেতার চুক্তিপত্র পরীক্ষা করে দেওয়া হবে। এছাড়া পণ্যের ন্যায্যমূল্য বাস্তবায়নে সদস্যদের মতামত, জরিপ ও গবেষণার ফলাফল বিবেচনার মাধ্যমে সব প্রকার বেসিক পোশাকের ন্যূনতম ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করা। পোশাকশিল্পের অস্তিত্বের সুরক্ষার জন্য ক্রেতার নৈতিক ক্রয়চর্চাকে একটি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা যাতে করে কোনো অপ্রচলিত বাজার খোঁজার ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ প্রদান পোশাকমালিক ক্রেতার অনৈতিক ও নীতিবিরুদ্ধ ব্যাবসার শিকার না হন।

পোশাকশিল্পের মার্কেটিং বিভাগকে বায়িং হাউজের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদনের জন্য মালিকদের উৎসাহ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হবে। প্রচলতি ও অপ্রচলিত বাজারে নিজস্ব বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও বিজিএমই-এর তত্ত্বাবধানে নিজস্ব ওয়্যারহাউজ প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দেওয়া হয় ইশতেহারে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে অর্থনীতির প্রাণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা ও এ সব কারখানাগুলোকে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ হতে সহায়তা করা। রুগ্নশিল্প ও ব্যবসা পরিচালনায় অক্ষম এমন কারখানাগুলোকে সম্মানজনক প্রস্থানের জন্য আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে Exit Policy প্রণয়ন করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। শিল্পের কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকল্পে আরএসসি-র কার্যক্রম আরও বেগবান করা এবং বহুমুখী অডিট থেকে মুক্তি পেতে একমুখী অডিট প্রণয়নের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে।

Advertisement

পাশাপাশি শ্রমিকের অধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যবসা সহজীকরণের জন্য বিজিএমইএ-এর আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

এছাড়া বিইউএফটি-র ট্রাস্টি বোর্ডকে বিজিএমইএ-এর প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুনর্গঠন করা হবে। তিনমাস অন্তর অন্তর বিজিএমইএ-এর পরিচালকদের কাজের মূল্যায়ন ও সদস্যদের প্রতি দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ইশতেহারে।

ইএআর/এমআইএইচএস/এমএস