১৯৫২ সালের অমর একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা শহীদদের বিনম্র শ্রদ্ধা ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে কুইন্সলান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন (কিউইউটিবিএ) ২৫ ফেব্রুয়ারি আয়োজন করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
Advertisement
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেলভিন গ্রভ ক্যাম্পাসের অ্যাম্ফিথিয়েটারে সন্ধ্যা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি বহুজাতিক মানুষের মিলনমেলায় রূপ নেয়। অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, ভারত ও ফিলিপাইনের শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ ভাষায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার বিষয়টা অন্যরকম এক অনুভূতি এনে দেয়। দেড় শতাধিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অ্যালামনাই এবং স্টাফরা পরিবারসহ অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন।
আয়োজকদের পরিবেশনায় একুশে ফেব্রুয়ারির গান
অনুষ্ঠানের শুরুতে উপস্থাপক মাহফুজুর রহমান ও সাদিয়া শারমিন কিইউটিবিএ এর পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের সম্মান প্রদর্শন এবং ইউনেস্কার ২১ শে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার পটভূমি তুলে ধরেন।
Advertisement
পরে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয় এবং উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে সম্মান জানিয়ে পুরো জাতীয় সংগীত পরিবেশনে অংশ নেন। ভীনদেশে লাউড স্পিকারে জাতীয় সংগীতের তালে তালে ঠোঁট মেলানো হৃদয়ে অন্যরকম স্পন্দন এনে দেয়। সবচেয়ে ভালো লেগেছে যখন অন্য দেশের উপস্থিত শিক্ষার্থীরা এবং বাংলাদেশি পরিবারের শিশুরা পীনপতন নীরবতায় সেটি উপভোগ করে।
পরে অন্যান্যের মধ্যে সংগঠনের উপদেষ্টা এবং ম্যাকানিক্যাল, মেডিকেল অ্যান্ড প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রফেসর আজাহারুল করিম এবং সাবেক সভাপতি ড. নাহিদ জামিল চৌধুরী স্বাগত বক্তব্য দেন। প্রফেসর আজাহার তার বক্তব্যে অমর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষার দাবিতে আত্মোৎসর্গকারী সকল শহীদদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানান এবং সেই উদাহরণ থেকে বিশ্বের অনেক জাতির জাতিসত্ত্বতার আন্দোলনে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরেন।
ড. নাহিদ জামিল চৌধুরী ভীনদেশে আরও বেশি নিজস্ব-ভাষা সংস্কৃতির অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পরে নতুন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের গিফট দিয়ে বরণ করা হয়।
মা-ছেলের দেশাত্মবোধক পরিবেশনা
Advertisement
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দশ বছর বয়সী রিভুর ‘আমি বাংলায় গান গাই’ দিয়ে শুরু হয় এবং পরের গানে রিভুর মা উর্মি চৌধুরী ও রিভু মিলে একটি লোকসংগীত পরিবেশন করেন। দু’জনের অসাধারণ পরিবেশনা মুগ্ধ করে উপস্থিত সবাইকে।
অনুষ্ঠানটি আয়োজনের পরিকল্পনা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন কিউইউটি গিল্ড বিভিন্নভাবে সহায়তা করে। এর মধ্যে অন্যতম ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাবকে অনুষ্ঠানে স্ব-স্ব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দাওয়াত দেওয়া। সেখান থেকে কিউইউটি কেনডো ক্লাব তাদের অসাধারণ মার্শাল আর্ট এবং অন্যান্যরা বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো পরিবেশন করেন।
পরে ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ গানে অসাধারণ নাচ পরিবেশন করেন সমাপ্তি রায় চৌধুরী। পরে রিজওয়ান হক জেমস, আইয়ুব বাচ্চু এবং ফোক সংগীত পরিবেশন করেন এবং সবার মন জয় করে ফেলেন। এর মাঝে মাঝে বাংলাদেশি শিশু সামারা করিম এবং সাফোয়ান কবিতা এবং ছড়া আবৃত্তি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়।
সবশেষে একুশে ফেব্রুয়ারির অমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রয়ারি’ গানটি সকলে মিলে পরিবেশন এবং সবশেষে সংগঠনের সভাপতি ফয়সাল চৌধুরী উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
ফিলিপিনো নাচ
অনুষ্ঠানের আয়োজন প্রসঙ্গে সংগঠনের সভাপতি বলেন, ভীনদেশে এমন আয়োজন করাটা সত্যিই কঠিন কিন্তু গর্বের। হৃদয়ের টানে আমরা প্রতি বছর এগুলো আয়োজন করে থাকি যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকে। এমন একটি আয়োজনের জন্য ছয়-সাত বার মিটিং, সকলের পড়াশোনার ব্যস্ততা উপেক্ষা করে উপস্থিতি নিশ্চিত করা, অনুষ্ঠানটিকে বহুসাংস্কৃতিক করা শুধুমাত্র সংগঠনের সদস্যদের একনিষ্ঠতার কারণে সম্ভব হয়েছে।
লেখক- মো. মামুন আ. কাইউম, পিএইচডি শিক্ষার্থী, ডিজিটাল মিডিয়া রিসার্চ সেন্টার, কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, ব্রিসবেন।
এমআরএম/জেআইএম