সুস্বাদু আমের নাম শুনলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কথা মনে পড়ে প্রথমেই। আর এ জেলার অর্থনীতিও টিকে আছে আমের উপর নির্ভর করেই। তবে এবছর চাষিদের মনে ফলন নিয়ে হতাশা দেখা দিয়েছে।
Advertisement
কারণ ফাল্গুনেও বসন্ত আসেনি আম গাছে। এসময়ে গাছে মুকুলে মুকুলে ভরে থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ গাছেই আসেনি মুকুল। জলবায়ূ পরিবর্তন প্রভাব ও প্রচন্ড শীতই এর অন্যতম কারণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষিবিদরা।
সরজমিনে জেলার সদর উপজেলার ইসলামপুর, বারঘরিয়া, শিবগঞ্জের কানসাট, শ্যামপুর, বিনোদপুর, মনাকষা, ছত্রাজিতপুর, রানিহাটি, চামাবাজার, ভাঙ্গাব্রিজ, আব্বাসবাজার, সোনামসজিদ, মিঞাপাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, লক্ষন ভোগ, খিরসাপাতের কিছু গাছে আমের গাছে মুকুল আসলেও। অন্যন্য অধিকাংশ গাছেই নেই মুকুলের ঘ্রাণ। এতে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে চাষিদের।
সদর উপজেলা ইসলামপুর ইউনিয়নের আম চাষি আসরাফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যেই সব গাছে মুকুল এসেছিলো। কিন্তু চলতি বছরে ফেব্রুয়ারি মাস প্রায় শেষ। কিন্তু এখনো শত শত আম গাছে কোনো মুকুল নেই। দু-একটি গাছে মুকুল থাকলেও একেবারেই কম। আমরা স্প্রে ও সেচ দেওয়ার কোনো কমতি রাখিনি। শুনছি অতিরিক্ত শীতের কারণে নাকি এমনটা হয়েছে।
Advertisement
শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ইমরান আলী। এবার তার আছে প্রায় পাঁচ বিঘা আমের বাগান। কিন্তু তার গাছেও আসেনি আশানারূপ মুকুল। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, কয়েক বছর থেকেই আমের ব্যবসায় বিভিন্নভাবে লোকশানে পড়েছি। আর এবার এখন পর্যন্ত গাছে মুকুল আসেনি। আর মুকুল আসার সময়ও প্রায় শেষ। আমার ধারণা আমের মুকুল আর আসবেনা।
শিবগঞ্জ মনাকষা ইউনিয়নের আম চাষি ইসারুল ইসলাম বলেন, বৈচিত্র্য আবহাওয়ার কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম গাছগুলোয় এবার মুকুল কম এসেছে। নাবি জাতের কিছু গাছে মুকুল আসলেও বড় গাছ গুলোয় ডগায় মুকুলের বদলে বের হয়েছে ছোট কচি পাতা। এতে আমরা ক্ষতি মুখে পড়বো বলে মনে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন এবার লক্ষন ভোগ, ফজলি, আশ্বিনাসহ প্রায় ১০ জাতের চার বিঘা জমিতে আমার আম বাগান রয়েছে। কিন্তু মুকুল তেমন আসেনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ম্যাঙ্গো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আহসান হাবিব বলেন, এবার দীর্ঘমেয়াদী শৈত্য প্রবাহ, অতিরিক্ত শীত ও ঠান্ডা হওয়ায় আমের গাছে মুকুল আসছে না। এতে আমাদের মনে দুশ্চিতা দেখা দিয়েছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বলেছে, সঠিক নিয়মে ও উপযুক্ত সেচ ও স্প্রেসহ অন্যান্য প্রযুক্তি কাজে লাগাতে পারলে সামনে কিছু দিনের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই মুকুল আসবে। শীত ও ঠান্ডার কোনো প্রভাব পড়বে না।
Advertisement
শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন শামীম খান বলেন, এবছর শীতের প্রকোপ অনেক বেশি ছিলো। আর জলবায়ূ পরিবর্তন হয়েছে। মূলত এ কারণেই আম বাগানে এখনো মুকুল আসেনি। তাই খুব চিন্তায় আছি আমরা। কারণ গাছে মুকুল আসার সময় প্রায় শেষ। এমনিতেই চাষিরা অনেক কষ্টে আছে কয়েক বছর থেকে আমের দাম পাচ্ছেনা। এছাড়াও বিভিন্ন বালাইনাশকের দামও কয়েক গুণ বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমের চাষিদের জন্য কোনো প্রণোদনার ব্যবস্থা নেই। সরকার যদি এ জেলার আম চাষিদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করে তাহলে লোকশান কিছুটা হলেও কমবে। আর মুকুল কম আসায় এবার আমের উৎপাদন কমে যাওয়ার সম্ভাবনাও আছে। এমনটা হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জেলার অর্থনীতি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পলাশ সরকার বলেন, যেহেতু গত বছর আম গাছে প্রচুর মুকুল ছিলো। তাই এবছরকে অফ সিজন বলা যায়। তবে শীতের প্রকোপে বিশেষ করে বড় গাছে আমের মুকুল কম এসেছে। তবে বরেন্দ্র এলাকায় মুকুল ভালো আছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০-৪৫ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। তবে এখন যদি গরমের প্রবণতা বৃদ্ধি পায় সে ক্ষেত্রে মুকুল আরও ফুঁটতে পারে। তবে সে মুকুলে আমের ফলন তেমন ভালো হবেনা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে ৭৫ লাখ ৭৯ হাজার ৮২৫ গাছ রয়েছে।
সোহান মাহমুদ/এনআইবি/এএসএম