দেশজুড়ে

পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে বসেছে একদিনের মেলা

দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী চেহেলগাজী মাজারে পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে একদিনের মেলা বসেছে। মাজার ও কবর জিয়ারতে আসা মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে মাজার এলাকা। পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা।

Advertisement

রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) শেষ বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, হাজারও মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে চেগেলগাজী মাজার এলাকা। সব ধর্মের মানুষ এ মেলায় ভিড় জমিয়েছেন।

কবর জিয়ারতে আসা মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরে দুইবার এ মেলা বসে। একবার পবিত্র আশুরায়, আরেকবার শবে বরাতে। তবে কবে থেকে এ মেলা বসতে শুরু করেছে তা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি। বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সবারই একটাই কথা জন্ম থেকেই এ মেলা তারা দেখে আসছেন। অনেকের ধারণা মাজার যখন হয়েছে তখন থেকেই মেলা বসে।

মেলায় দুল চুরি ফিতাসহ,মাটির তৈরি হাড়িপাতিল, খেলনা, তৈজসপত্র, কাপড় থেকে শুরু করে খাবারের দোকান নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। শবে বরাতের রজনীর আগে দুপুর থেকে পরেরদিন দুপুর পর্যন্ত চলে এ মেলা।

Advertisement

তবে মেলায় কোনো গান বাজনা চলে না। সারারাত চলে কোরআন খতম আর কবর জিয়ারত। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এখানে দান করেন। এ মেলায় শুধু দিনাজপুরের নয় আশপাশের ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলার ধর্মপ্রাণ মানুষও আসেন।

২০ বছর ধরে মেলায় দোকান নিয়ে আসেন কামার বিরেন শাহা। তিনি দা, ছুরি চাকু, বটি, কোদাল, খন্দিসহ বিভিন্ন সাংসারিক কাজে ব্যবহার্য জিনিসপত্র নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, বছরে দুইবার পবিত্র আশুরা ও শবে বরাতে মেলা বসে। ছোট বেলায় দাদা-বাবারা মেলায় দোকান নিয়ে আসতেন। এখন আমিই দোকান নিয়ে আসি।

বাদাম বিক্রেতা কামল হোসেন বলেন, মেলায় ১০ মণ বাদাম এনেছি। সব বাদাম বিক্রি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

মাজার ঘিরে রয়েছে একটি মসজিদ। মসজিদ ও মাজারের খাদেম মো. মোমিনুল ইসলাম জানান, প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের একদল গবেষক নকশা দেখে মসজিদটি সুলতানি আমলের নিদর্শন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া মসজিদে নির্মাণকাল নির্দেশক তিনটি শিলালিপি ছিল। এর একটি দিনাজপুর জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। এ শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৪৬০ সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। সে হিসাবে এ স্থাপনার বয়স ৫৬৩ বছর। ধারাণা করা হয় যখন থেকে মাজার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তখন থেকেই মেলা বসছে।

Advertisement

চেহেলগাজী মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মো. আফজালুল হক বলেন, ইরাকের বাগদাদ থেকে ইসলাম ধর্ম প্রচারে আসা ৪০ গাজীর সঙ্গে গোপাল রাজার যুদ্ধ চলাকালে ৩৭ জন শহীদ হন। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করেন তিনজন এবং জয়লাভ করেন। পরবর্তীতে তারা মৃত্যুবরণ করলে তাদেরও এখানে সমাহিত করা হয়। তাদের কবর ঘিরেই এ মাজার। ওই তিন গাজী মধ্যে একজনের নাম জানা গেছে। তিনি জয়নুদ্দিন বাগদাদি।

তিনি আরও বলেন, মসজিদ ও মাজার চত্বরে পুরোনো তিনটি কবর আছে। এরমধ্যে একজনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি গোপাল রাজার সেনাপতি বলরাম সেন। তিনি পরে ইসলাম গ্রহণ করলে নাম রাখা হয় আল-আমিন। বাকি দুটি কবর কার তা জানা যায়নি।

এমদাদুল হক মিলন/এএইচ/জেআইএম