আইন-আদালত

দুই আইনজীবীর বিষয়ে আপিল বিভাগের আদেশ ১৮ মার্চ

দেশের বিচার বিভাগ নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করা সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবীর বিষয়ে শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আদেশ দেওয়ার জন্য আগামী ১৮ মার্চ দিন ঠিক করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

Advertisement

এ সময় পর্যন্ত দুই আইনজীবী (আপিল ও হাইকোর্ট) মামলা পরিচালনা করতে পারবেন বলে আদেশ দিয়েছেন আদালত। আইনজীবীরা হলেন- সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মহসিন রশিদ ও দস্য সচিব শাহ আহমেদ বাদল।

রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারী) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের একই বেঞ্চ বিএনপিপন্থি দুই আইনজীবী আরও দুই সপ্তাহ (আপিল ও হাইকোর্ট) মামলা পরিচালনা করতে পারবেন না বলে আদেশ দিয়েছেন। পরে এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ।

Advertisement

ওই দিন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত অবমাননার বিষয়ে দুই আইনজীবী ব্যাখ্যা দেন। তবে, এতে সন্তুষ্ট হননি আদালত। এরপর নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার জন্য সময় আবেদন করেন তাদের আইনজীবী।

আদালতে দুই আইনজীবীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ (এসকে) মোরশেদ।

এর আগে ২৭ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলন করে ১ জানুয়ারি থেকে ৭ জানুয়ারি আদালত বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।

ওই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে মোহাম্মদ মহসিন রশিদ ও শাহ আহমেদ বাদল ১ জানুয়ারি আদালত বর্জন কর্মসূচি নিয়ে প্রধান বিচারপতির দপ্তরে চিঠি দেন। পরদিন এ চিঠি প্রধান বিচারপতির দপ্তরে উপস্থাপন করা হয়।

Advertisement

চিঠিতে বলা হয়, আদালত বর্জন কর্মসূচি চলাকালে মামলা সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা শুনানিতে অংশ নিতে অথবা নির্ধারিত তারিখে আদালতে উপস্থিত থাকতে পারবেন না, সেসব মামলার পরবর্তী কার্যক্রম ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করা হোক। সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের অনুপস্থিতে মামলা খারিজ বা বিরূপ আদেশ দেওয়া উচিত হবে না।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের দেওয়া আদেশে বলা হয়, চিঠিতে কিছু অবমাননাকর বিবৃতি (শব্দ ও বাক্য চয়ন) রয়েছে যা প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রবিরোধী এবং সামগ্রিকভাবে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি, অবস্থান এবং মর্যাদার প্রতি অবমাননাকর বলে মনে হয়েছে।

পরে ৩ জানুয়ারি দুই আইনজীবীকে হাজির হয়ে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

ওই আদেশ অনুযায়ী দুই আইনজীবী ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগে হাজির হন। এদিন তাদের পক্ষে সময় আবেদন করলে আদালত ব্যাখ্যা দিতে দুই আইনজীবীকে চার সপ্তাহ সময় দেন। এসময় তারা সুপ্রিম কোর্টে কোনো মামলা পরিচালনা করতে পারবেন না বলে আদেশ দেন।

এর আগে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের কেন্দ্রীয় কমিটি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পক্ষ থেকে ১-৭ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব অধস্তন আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন। তাদের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবীরাও আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন। এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট অ্যাডহক কমিটির পক্ষ থেকে ১-৭ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব অধস্তন আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়ে প্রধান বিচারপতি বরাবরে লিখিত চিঠি দেওয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়, দেশে একটি অনির্বাচিত, জবাবদিহিহীন এবং অস্বচ্ছ ফ্যাসিবাদী শাসনের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। ফলে জনগণ প্রজাতন্ত্রের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে। তারা নজিরবিহীন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ তামাশার সংসদে সদস্য নির্বাচন করতে যাচ্ছে।

‘এর প্রতিবাদে ১-৭ জানুয়ারি পর্যন্ত আদালত বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন আইনজীবীরা। এমন একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে আইনজীবী, জনগণ স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা রাখছে। আশা করছি মানবাধিকার রক্ষাকারী হিসেবে বিচার বিভাগ কার্যকরভাবে ভূমিকা পালন করবে।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, পুলিশ এবং বিচার বিভাগ উভয়ই সরকারের ফ্যাসিবাদী নিপীড়নের সহায়ক হয়ে ওঠেছে। সাধারণ নাগরিকদের প্রাপ্য জামিন আবেদন নামঞ্জুর এবং দ্রুতগতিতে বিচার পরিচালনা করে ন্যায়বিচারকে সমাহিত করছে। এই পরিস্থিতিতে আদালত বর্জন কর্মসূচি চলাকালে মামলা সংশ্লিষ্ট যেসব আইনজীবী শুনানিতে অংশ নিতে অথবা নির্ধারিত তারিখে আদালতে উপস্থিত থাকতে পারবেন না, সেসব মামলার পরবর্তী কার্যক্রম ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করা হোক। সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের অনুপস্থিতিতে মামলা খারিজ বা বিরূপ আদেশ দেওয়া উচিত হবে না।

এফএইচ/এমএএইচ/এমএস