প্রবাস

রোমানিয়ায় কাজের ভিসায় দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় শীর্ষে বাংলাদেশিরা

গত বছর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে প্রায় ৪২ হাজার অভিবাসী ওয়ার্ক পারমিট বা দীর্ঘ মেয়াদি কাজের ভিসায় রোমানিয়ায় এসেছেন। সবচেয়ে বেশি ভিসা পেয়েছেন শ্রীলঙ্কানরা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন বাংলাদেশিরা।

Advertisement

মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ইনফোমাইগ্রেন্টসকে সাম্প্রতিক বছরগুলোর অভিবাসন পরিসংখ্যান জানিয়েছে রোমানিয়া বর্ডার পুলিশের তথ্য ও জনসংযোগ দপ্তর (আইজিপিএফ)।

কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যানে গত তিন বছরে ইস্যু হওয়া কাজের ভিসার তথ্য ছাড়াও হাই স্কিল্ড বা উচ্চ দক্ষ কাজের ভিসা, শিক্ষার্থী হিসেবে কতজন পড়তে এসেছেন এবং ভ্রমণ ও অন্যান্য ক্যাটাগরিতে আসা লোকেদের সংখ্যাও উঠে এসেছে।

দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ

Advertisement

বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় রোমানিয়ায় বাংলাদেশিদের আসার হার অব্যাহত রয়েছে। ২০২৩ সালে মোট ১১ হাজার ১৩৮ জন বাংলাদেশি অভিবাসী কাজের ভিসায় রোমানিয়ায় এসেছেন।

২০২২ সালে এ সংখ্যাটি ছিল আট হাজার ৭৩০ জন। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় বাংলাদেশিদের ভিসা পাওয়ার হার বেড়েছে ২৭.৫ শতাংশ। অন্যান্য সব ক্যাটাগরি মিলিয়ে মোট ১৪ হাজার ১২০ জন বাংলাদেশি গত বছর পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে এসেছেন।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংঘাত এবং বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অভিযোগ আছে। এছাড়া দেশটিতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া ও কোভিড পরবর্তী নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মতো উল্লেখযোগ্য সমস্যা আছে।

করোনা মহামারির পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতির বেশ কিছু খাতে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। সেই সঙ্গে বাড়ছে মূল্যস্ফীতির মতো বিষয়। কয়েক বছর আগেও ইউরোর বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার মান ছিল ৮০ থেকে ৯৫ টাকা। এখন সেটি ১৩০ টাকা ছুঁয়েছে।

Advertisement

আন্তর্জাতিক এনজিও অক্সফামের মতে, ‘বাংলাদেশে দারিদ্র্য চরম আকার ধারণ করেছে। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই প্রতিদিন এক ডলারেরও কম আয় করে।’

তালিকায় শীর্ষ দেশ শ্রীলঙ্কা

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৪২৯টি দীর্ঘমেয়াদি কাজের ভিসা পেয়েছে শ্রীলঙ্কান নাগরিকেরা, যা ২০২২ সালের তুলনায় ৫৬.২ শতাংশ বেশি।

গত বছর নজিরবিহীন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে পড়ে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটি। নাজুক পরিস্থিতি থেকে উন্নত জীবনের সন্ধানে দেশটির নাগরিকদের ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

সীমান্ত পুলিশের মতে, ভ্রমণ ও পারবারিক পুনর্মিলনসহ সবগুলো ক্যাটাগরি মিলিয়ে গত বছর মোট ১৪ হাজার ৮৫৪ জন শ্রীলঙ্কান নাগরিক রোমানিয়ায় প্রবেশ করেছেন।

তৃতীয় অবস্থানে নেপাল

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ নেপালের নাগরিকদের রোমানিয়ায় ব্যাপক আগমন লক্ষ্য করা গেছে। ২০২৩ সালে দেশটির নয় হাজার ৭১৫ জন নাগরিক কাজের ভিসায় রোমানিয়ায় এসেছে। আগের বছর এটি ছিল ১০ হাজার ২৭২ জন। অর্থাৎ গত বছর ৫.৫ শতাংশ কমেছে।

সবগুলো খাত মিলিয়ে ২০২৩ সালে মোট ১২ হাজার ৩৮৯ জন নেপালি নাগরিক রোমানিয়ায় এসেছেন।

কাজের ভিসা প্রাপ্তির দিক থেকে তালিকার চতুর্থ অবস্থানে আছে পাকিস্তানিরা। দেশটির পাঁচ হাজার ৪৩ জন অভিবাসী গত বছর রোমানিয়ায় এসেছেন, যা ২০২২ সালের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি।

তালিকার সবশেষ অবস্থানে আছে ভারতীয়রা। গত বছর মোট চার হাজার ৬২২ জন ভারতীয় অভিবাসী ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেয়েছেন, যা আগের বছরের বিপরীতে ৪১.১ শতাংশ বেশি।

আরও পড়ুন: ২০২৩ সালে গ্রিসে বৈধতা পেয়েছে সাড়ে তিন হাজার বাংলাদেশি

তবে সবগুলো ক্যাটাগরি মিলিয়ে ২০২৩ সালে মোট ২২ হাজারা ৭৬৩ জন ভারতীয় নাগরিক রোমানিয়ায় এসেছেন, যা মোট সংখ্যার দিক থেকে সর্বোচ্চ।

উচ্চ শিক্ষায় যারা এসেছেন

কাজের ভিসার তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে রোমানিয়ায় পড়তে আসার হার কম। ২০২২ সালে ৭২৫ জন শিক্ষার্থী দেশটিতে পড়তে এসেছিলেন। ২০২৩ সালে এ সংখ্যাটি ১৪.৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২৯ জন-এ।

এদের মধ্যে ৪৬১ জন বাংলাদেশি, ১৮৫ জন ভারতীয়, ১৩০ জন পাকিস্তানি, ৪০ জন শ্রীলঙ্কান এবং ১৩ জন নেপালি নাগরিক।

ভিসাপ্রাপ্ত ও বসবাসরতদের সংখ্যার মধ্যে তফাৎ

বিপুল সংখ্যাক বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রোমানিয়ায় আসলেও তাদের মধ্যে বর্তমানে বৈধভাবে বসবাসরতদের হারের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে।

১৬ জানুয়ারি এক ইমেইলে রোমানিয়া জেনারেল ইনস্পেক্টরেট ফর ইমিগ্রেশন (আইজিআই) ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানায়, চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত রোমানিয়ায় বৈধভাবে বসবাস করছেন ১৮ হাজার ৮৭১ জন নেপালি নাগরিক।

বৈধ অভিবাসী সংখ্যার দিকে থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে শ্রীলঙ্কানরা। দেশটি ১৪ হাজার ৯২৬ জন অভিবাসী বৈধ রেসিডেন্স পারমিট নিয়ে বর্তমানে বুখারেস্টসহ বিভিন্ন শহরে বসবাস করছেন।

এছাড়া আট হাজার ৯৯৪ জন ভারতীয় অভিবাসী, পাঁচ হাজার ২১ জন বাংলাদেশি এবং তিন হাজার ১৫০ জন পাকিস্তানি নাগরিক নিয়মিত অবস্থায় আছেন।

বাংলাদেশিদের গত দুই বছরে ভিসা প্রাপ্তির হার ও বৈধ অভিবাসীর সংখ্যার মধ্যে বড় ধরণের পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে।

গত বছরের বিভিন্ন সময়জুড়ে হাঙ্গেরি ও সার্বিয়া সীমান্তে অনিয়মিত সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় বাংলাদেশি, নেপালি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের আটক করেছে বুখারেস্ট কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া ২০২৩ সালে জোরপূর্বক নিজ দেশ ‘ডিপোর্ট’ করা হয়েছে ৩৯৭ বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের এক হাজার ২২২ জন অভিবাসীকে।

বাংলাদেশের নাগরিকরা রোমানিয়ার ইস্যু করা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার অপব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত রোমানিয়ার রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েলা সেজোনভ টেনে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় এফবিসিসিআই প্রতিনিধি দলের সাথে সাক্ষাৎকালে এ মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

এক দশক অপেক্ষার পর চলতি বছরের ৩১ মার্চ থেকে আংশিকভাবে ইউরোপের অবাধ চলাচলের অঞ্চল শেঙেন জোনে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে রোমানিয়া।

ইইউ-এর সুনজরে থাকতে এবং শেঙেন প্রবিধান মেনে চলতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেআইনি উপায়ে হাঙ্গেরিতে প্রবেশের চেষ্টা করা অভিবাসীদের আটক অব্যাহত রেখেছে বুখারেস্ট।

সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস

এমআরএম/এএসএম