রাইদাহ গালিবা পৃথিবীর নির্মমতার কাছে হেরে গেছে। তবুও রয়ে গেছে তার সৃষ্টিকর্ম। মাত্র ১২ বছরেই রেখে গেছে অমূল্য সম্পদ। সেসবই আঁকড়ে ধরে স্মৃতি হাতড়ান মা কানিজ পারিজাত। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১১ ফেব্রুয়ারি বইমেলায় এসেছে শিশুলেখক রাইদাহ গালিবার পঞ্চম বই ‘আন্ডোরে রাজ্যের কাহিনি’। বইটি প্রকাশ করেছে আদিগন্ত প্রকাশনী। প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেছেন মনিরুজ্জামান পলাশ। মূল্য রাখা হয়েছে ১০০ টাকা। বইটি পাওয়া যাচ্ছে ৭৫০-৭৫২ নাম্বার স্টলে।
Advertisement
ছোটবেলা থেকেই সৃষ্টিশীল ছিল রাইদাহ গালিবা। কথায় কথায় ছড়া কাটতো। বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলে সবাইকে চমকে দিতো। ওর গল্পগুলো মা কানিজ পারিজাত লিখে রাখতেন। একটু বড় হয়ে রাইদাহ নিজেই লিখতো ছোটদের গল্প। সেসব গল্প ছাপা হতো দেশসেরা শিশুপত্রিকা ‘ধানশালিকের দেশ’, ‘শিশু’ প্রভৃতি পত্রিকায়। জাতীয় দৈনিকগুলোতেও ছাপা হতো রাইদাহর গল্প। এ পর্যন্ত বের হয়েছে কয়েকটি শিশুতোষ গল্পের বই।
ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সেরা শিক্ষার্থী ছিল রাইদাহ। পড়তো পঞ্চম শ্রেণিতে। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে রাইদাহর হঠাৎ জ্বর এলো। মা নিয়ে গেলেন ডাক্তারের কাছে। ধরা পড়লো ডেঙ্গু। তাকে ভর্তি করানো হলো রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা হলো না সেখানে। মা কানিজ পারিজাতের অভিযোগ, রাইদাহকে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। ফ্লুইড অব্যবস্থাপনার কারণে ৩০ নভেম্বর চিরতরে হারিয়ে যায় মেয়েটি।
আরও পড়ুন• মরণোত্তর পুরস্কার পেল শিশুলেখক রাইদাহ গালিবা• রাইদাহ গালিবা সবুজ গাছ হতে চেয়েছিল
Advertisement
রাইদাহ গালিবার মা লেখক কানিজ পারিজাত বলেন, ‘মেয়েটিকে হারিয়ে আমি কেমন দিশেহারা হয়ে গেছি। ওর অপ্রকাশিত গল্প নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বার বার বিমর্ষ হয়েছি। এটি একজন মায়ের জন্য খুবই কঠিন কাজ। আমি চাই, আমার মেয়ের লেখাগুলো পাঠকের কাছে পৌঁছাক। ও বেঁচে থাকলে আজ কতই না আনন্দ হতো। স্টলে দাঁড়িয়ে পাঠকের হাতে বইটি তুলে দিতে পারতো।’
তিনি বলেন, ‘মেলা থেকে ফেরার পথে সুহৃদ ও পরিচিতজনের সাথে দেখা। কেউ কেউ বললেন, ও কী লিখবে তা আমাকে শেয়ার করতো কি না? আমি বললাম, না, ও তো লিখেই চমক দিতো আর আমি পড়ে চমকিত হতাম! মঞ্জুরুল হক ভাই ও তারিক মঞ্জুর স্যার বললেন, ‘আন্ডোরে’ শব্দটা সে কি কোথাও শুনেছে? তারিক মঞ্জুর স্যার ‘আন্ডোরে’ আর ‘ট্রেন্ট’ শব্দগুলো ওর মাথায় এলো কী করে, সেটা নিয়ে ভাবছিলেন। আমারও খেয়াল হলো, তাই তো। এসব শব্দ ও কেমন করে ভেবে পেতো। ওর কাছ থেকে তা তো শুনে রাখা হলো না। আর কোনোদিন তো শুনতেও পারবো না!’
সম্প্রতি সোনার বাংলা সাহিত্য পরিষদ (এসবিএসপি) সাহিত্য সম্মাননা ও অর্থ পুরস্কার-২০২৩ (মরণোত্তর) পেয়েছে রাইদাহ গালিবা। গত ২৬ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে তার মা কানিজ পারিজাতের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। রাইদাহ গালিবার প্রকাশিত বইগুলো হলো—‘এক যে ছিল মুচি’, ‘পিটুর জাদু জুতা’, ‘ইমা ও দৈত্য’ এবং ‘ভয়ংকর গাছ’। আশা করি, পাঠকের মাঝেই বেঁচে থাকবে ছোট্ট রাইদাহ। ওর সৃষ্টিকর্মই ওকে স্মরণীয় করে রাখবে সাহিত্যাঙ্গনে।
এসইউ/জেআইএম
Advertisement