জাতীয়

ছুটির দিনে আহসান মঞ্জিলে দর্শনার্থীদের ভিড়

রাজধানীর পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা আহসান মঞ্জিলে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ছুটির দিনে দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড় লেগেছে। পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অনেকে ঘুরতে এসেছেন বুড়িগঙ্গার তীরঘেঁষা নান্দনিক এ স্থাপনায়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সেখানে ছিল কয়েক হাজার দর্শনার্থীর পদচারণা। বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্রই চোখে পড়েছে।

Advertisement

পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত আহসান মঞ্জিল একসময় ছিল ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারির সদর কার্যালয়। বর্তমানে প্রাসাদটি ব্যবহার হচ্ছে জাদুঘর হিসেবে। বছরের নানা সময়ে বিশেষ দিনে বা উৎসব ঘিরে সেখানে দর্শনার্থীদের ভিড় জমে।

আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সরকারি ছুটি হওয়ায় এ দিনটিতে দর্শনার্থীদের ব্যাপক সমাগম দেখা গেছে আহসান মঞ্জিল প্রাঙ্গণে।

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, আহসান মঞ্জিলে প্রবেশের জন্য টিকিট কিনতে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ সারি। তাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুরান ঢাকা ছাড়াও শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিশেষ এই দিনে তারা আহসান মঞ্জিলে ঘুরতে এসেছেন। এমনকি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় ঘুরতে আসা অনেকেই এদিন এ জাদুঘরে এসেছেন।

Advertisement

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শিশু-কিশোর, শিক্ষার্থী, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু-কিশোর ও ভাষাসৈনিকদের পরিবারের সদস্যদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়। সকাল থেকে সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

আহসান মঞ্জিলে ঘুরতে আসা কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী এহসান আহমেদ সিয়াম জাগো নিউজকে বলেন, আজ মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবেশ ফ্রি। তাই বন্ধুরা মিলে ঘুরতে এলাম।

মিরপুর থেকে আসা মাহফুজ আহসান বলেন, ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তায় যানজট কম। তাই ভাবলাম আহসান মঞ্জিলে ঘুরে আসি। চলে এলাম। ইতিহাস অধ্যয়নের জীবন্ত উৎস এই জাদুঘর। সবার উচিত এখানে আসা এবং আমাদের দেশ ও পূর্বসূরিদের ইতিহাস জানা।

আহসান মঞ্জিলে প্রধান ফটকে দায়িত্বরত আনসার সদস্য আব্দুল কুদ্দুস জাগো নিউজকে জানান, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন বিকেলে দর্শনার্থীরা আসেন। আজ ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই অনেকে আসছেন। আজ দর্শনার্থীদের চাপ অনেক বেশি।

Advertisement

আহসান মঞ্জিলের প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব আব্দুল গণি। তিনি তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামানুসারে প্রাসাদটির নামকরণ করেন আহসান মঞ্জিল। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে আহসান মঞ্জিলের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে তা শেষ হয় ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে। এখানেই ১৯০৬ সালে এক বৈঠকে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত হয়। বর্তমানে স্থাপনাটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে।

আহসান মঞ্জিল একটি দোতলা প্রাসাদ। এর বারান্দা ও মেঝে মার্বেল পাথরের তৈরি। রয়েছে নবাবী আমলের নানা নিদর্শন, মুদ্রা, অস্ত্র-শস্ত্র ও নবাবদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র। এসব নিদর্শন বরাবরই দর্শনার্থীদের আগ্রহ ও কৌতুহলের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে।

দর্শনার্থীরা বলছেন, ঢাকার মতো আবদ্ধ ও কোলাহলপূর্ণ নগরীতে মানুষ উৎসব বা ছুটির দিনগুলোতেও একটু ফাঁকা জায়গা পায় না। ঢাকায় পর্যাপ্ত বিনোদনকেন্দ্রও নেই। তাই ছুটির দিনে তারা দর্শনীয় স্থানগুলোতে বন্ধু ও পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসেন। উন্মুক্ত পরিবেশে শিশুদেরও একটু সুন্দর সময় কাটে।

জেএ/এমকেআর/জেআইএম