ফিচার

চাকরির বাজারে ইংরেজির প্রাধান্য বেশি

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ রক্তে রাঙানো ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে। বিশ্বজুড়েই ফেব্রুয়ারি আসে, তবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে ফেব্রুয়ারি আসে বেদনার হয়ে। কারণ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রাণ দিয়েছিলেন সালাম, রফিক, বরকতসহ বাংলার অনেক দামাল ছেলেরা। সেদিন তাদের বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ।

Advertisement

তাই সব ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ। যেখানে তরুণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ থাকে বেশি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে কী ভাবছেন তরুণ শিক্ষার্থীরা! সেবিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন সরকারি তিতুমীর কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের ভাবনা তুলে ধরেছেন মামুনূর রহমান হৃদয়।

চাকরির বাজারে ইংরেজির প্রাধান্য বেশিসাকিলা পারভীন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ

২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের কাছে বিশেষ দিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে প্রাণ দিতেও পিছু পা হয় নি বাঙালি জাতি। যে ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করতে এতো আন্দোলন হলো বর্তমানে আমরা তার যথাযথ মর্যাদা কতোটুকু দিতে পারছি? এখন দেশে বাংলার থেকে ইংরেজি চর্চার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয় বেশি। কারণ চাকরির বাজারে ইংরেজির প্রাধান্য বেশি। কিন্তু যারা বাংলা ভাষার জন্য জীবন দিলেন তাদের ভাবনা তো এমন ছিল না। ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের স্মরণ করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নির্মিত শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় খেয়াল করলে দেখা যায় বেশ কিছু অনুষ্ঠানে হিন্দি গান বাজিয়ে উৎযাপন করা হয়। তাই আগে আমাদের জানতে হবে, প্রতিবছর মাতৃভাষা দিবস আমরা কেন পালন করি! বাংলা ভাষাকে মনে প্রাণে ধারণ করতে হবে আগে। যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস জানতে পারে। যাদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের মুখের ভাষা বাংলা হলো, তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা থাকবে আজীবন।

Advertisement

আরও পড়ুন• আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ

পশ্চিমা ভাষার রাজত্ব চলছেমিয়া আমিরুল ইসলাম, অর্থনীতি বিভাগ

১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা একটি অর্জন। যাতে বাংলার মানুষ নিজেদের অধিকার সচেতন হওয়ার পাশাপাশি পরবর্তী লড়াই সংগ্রামের চেতনায় উজ্জীবিত হয়। মূলত ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের বীজ, প্রেরণা এবং লড়াইয়ের মানসিকতার কেন্দ্রবিন্দু এখানেই। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ দীর্ঘ ৬ যুগ পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশে বিভিন্নভাবে পশ্চিমা ভাষার রাজত্ব চলছে। বাংলাদেশের শতকরা ৫ শতাংশ মানুষও খুঁজে পাওয়া দায় যারা শুদ্ধ বাংলায় কথা বলে। বর্তমান প্রজন্মের মাথায় নানাভাবে বিদেশি ভাষার ভূত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাংলার সঙ্গে বিভিন্ন ভাষা মিশিয়ে তারা কথা বলে। বিশ্বমানের ব্যক্তিত্ব হওয়ার আগে বাঙালি হওয়া জরুরি। তবেই আমাদের এতো এতো অর্জন পাবে পরিপূর্ণতা। কারণ দিনশেষে আমরা বাঙালি। বাংলা মোদের মায়ের ভাষা।

সচেতন হতে হবে নিজ ভাষা প্রয়োগ সম্পর্কেকামরুল হাসান নোমান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি

Advertisement

পৃথিবীতে একমাত্র ভাষা বাংলা যার জন্য জীবন দিতে হয়েছে। রফিক,শফিক,বরকত,সালামসহ নাম অজানা অনেক শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা আমাদের মাতৃভাষা পেয়েছি। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা আমাদের মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারি। অথচ বাংলা ভাষার কদর কেবল ফেব্রুয়ারি এলেই বেশি চোখে পড়ে। অন্যদিকে চলার পথের ধারে দোকান-পাট, দেয়ালের উপর টাঙ্গানো ব্যানারে বিদেশি ভাষার ব্যবহার বেশি লক্ষ করা যায়। তাই বাংলা ভাষাকে রক্ষা করতে হলে বন্ধ করতে হবে ব্যানার, পোস্টারে বিদেশি ভাষার ব্যবহার, সচেতন হতে হবে নিজ ভাষা প্রয়োগ সম্পর্কে।

আরও পড়ুন• শহীদ দিবস: বাংলা ভাষার যথাযথ প্রয়োগ হোক

বাংলা ভাষা চর্চায় জোর দিতে হবেদোলা সরকার , ইংরেজি বিভাগ

স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। ঠিক তেমনই হয়েছে আমাদের অবস্থা। একুশ শতকের এই সময়ে এসে ভাষার সঠিক মর্যাদা রাখতে আমরা পারছি কী? আমাদের সবার উচিৎ মাতৃভাষার সঠিক ব্যবহার করা এবং পাশাপাশি পৃথিবীর সব ভাষার প্রতি সম্মান জানানো। কিন্তু আমরা নিজ ভাষাকে এড়িয়ে অন্য ভাষা শিক্ষায় বেশি জোর দিচ্ছি। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও একই অবস্থা। তাই বাংলা ভাষাকে বাঁচাতে আমাদের বাংলা ভাষা চর্চায় মনোনিবেশ করতে হবে। পাশাপাশি অন্য সংস্কৃতি এবং পৃথিবীর সব ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধও রাখতে হবে। এছাড়াও তরুণ সমাজ সচেতন হলেই বাংলা ভাষার ব্যবহার ও চর্চা বৃদ্ধি পাবে, এই ভাষাকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রাখা সম্ভব হবে। কেএসকে/এএসএম