জাতীয়

গুলশান-বনানী লেকে নৌ চলাচল কবে?

• ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে একনেকে পাঠায় প্রকল্প প্রস্তাব এখনো অনুমোদন হয়নি• দ্রুত সময়ে গুলশান-বনানী লেকে নৌ চলাচল চান যাত্রীরা• হাতিরঝিলের মতো নান্দনিক হবে গুলশান-বনানী লেকে পরিবেশ

Advertisement

হাতিরঝিল হয়ে গুলশান-বনানী লেকে নৌ চলাচলে দুই বছর আগে একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এখন পর্যন্ত সেই প্রকল্প অনুমোদন দেয়নি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। আদৌ প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখবে কি না তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

অন্যদিকে, গুলশান-বনানী লেকে নৌ চলাচলে কিছুটা বিপত্তি তৈরি করেছে ছোট ছোট কালভার্ট। লেক দুটির মাঝ বরাবর ছোট ছোট ছয়টি কালভার্ট রয়েছে। কালভার্টগুলোর নিচ দিয়ে ওয়াটার ট্যাক্সি বা নৌ চলাচলের সুযোগ নেই। তবে, প্রকল্প অনুমোদন হলে সেতু নির্মাণ করলে নৌ চলাচল করতে পারবে।

তবে, ওই প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় না থেকে গুলশান ও বনানী লেকে নিজ উদ্যোগে নৌ চলাচলের ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট সোসাইটিকে (গুলশান, বনানী, নিকেতন, বারিধারা) আহ্বান জানিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম।

Advertisement

ডিএনসিসি মেয়র মনে করেন কালভার্ট ভাঙা ছাড়াও গুলশান-বনানী লেকে নৌ চলাচলের সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এখন হাতিরঝিলের বাড্ডা লিংক রোড পর্যন্ত (গুদারাঘাট) নৌ চলাচল করে। এ রোডের উত্তর পাশে গুলশান-বারিধারা লেক। সেখান থেকে আরেকটি নৌযানে সহজেই গুলশান-২ ও বারিধারায় যাওয়া সম্ভব হবে। আবার গুলশান-২ থেকে বারিধারা সড়ক পার হয়ে সরাসরি কালাচাঁদপুর পর্যন্ত চলে যাওয়া যাবে।

‘কালভার্ট ভাঙা ছাড়াও গুলশান-বনানী লেকে নৌ চলাচলের সুযোগ রয়েছে। এখন হাতিরঝিলের বাড্ডা লিংক রোড পর্যন্ত (গুদারাঘাট) নৌ চলাচল করে। এ রোডের উত্তর পাশে গুলশান-বারিধারা লেক। সেখান থেকে আরেকটি নৌযানে সহজেই গুলশান-২ ও বারিধারায় যাওয়া সম্ভব। আবার গুলশান-২ থেকে বারিধারা সড়ক পার হয়ে সরাসরি কালাচাঁদপুর পর্যন্ত যাওয়া যাবে।’— ডিএনসিসি মেয়র

একইভাবে গুলশানের শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি পার্কের পাশ দিয়ে নিকেতন-গুলশান-১ সড়কে নামা যাবে। এখানে সড়কটি হেঁটে পার হয়ে আবার নৌকা বা ওয়াটার ট্যাক্সিতে মহাখালী-গুলশান-১ রোডে যাওয়া যাবে। এ রোডটি পার হয়ে আবার নৌকায় উঠলে বনানী-গুলশান-২ সড়ক পর্যন্ত যাওয়া যাবে। এছাড়া একইভাবে আবার নৌযানে ওঠে সরাসরি বনানী কবরস্থানে পর্যন্ত যাতায়াত করা সম্ভব হবে। তাই নাগরিকদের নির্বিঘ্ন যাতায়াতে গুলশান, বারিধারা, বনানী ও নিকেতন এলাকার সোসাইটি এ উদ্যোগ নিতে পারে। লেক দুটি নিয়ে ডিএনসিসি যে প্রকল্প প্রস্তাব করেছে, তা অনুমোদন হলে এ অভিজাত এলাকার নাগরিকেরাই বেশি উপকৃত হবেন।

আরও পড়ুন• গুলশান বনানী বারিধারা লেক প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ দিতে রুলআরেক হাতিরঝিল বানাতে উচ্ছেদ হবে কড়াইল বস্তির ৩৬০২ পরিবারগুলশান-বনানী-বারিধারা লেকে মশা নয়, মাছচাষ করা হবে: আতিক

Advertisement

আর নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, হাতিরঝিল, গুলশান ও বনানী লেক বা জলাশয় ঘিরে নৌ চলাচলের পথ খুললে নগরীতে দৈনন্দিন যাতায়াতে আরও স্বাচ্ছন্দ্য আসবে। আশপাশের সড়কে যানজট কমাতে সহায়ক হবে। তবে, প্রকল্পটি অনুমোদনের আগ পর্যন্ত প্রতিটি সড়কের এপার-ওপার করে নৌ চলাচল চালু করা যেতে পারে। এতে একজন যাত্রী তেজগাঁও বা রামপুরা থেকে খুব সহজেই বনানী, বারিধারা বা কালাচাঁদপুর পর্যন্ত যেতে পারবেন। আর দ্রুত সময়ে একনেক সভায় জনগুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি অনুমোদন নিতে ডিএনসিসি মেয়রকে আরও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

গুলশান-বনানী লেক প্রকল্প২০২০ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরপরই গুলশান-বনানী লেকে নৌ চলাচলের উদ্যোগ নেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। পরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে সঙ্গে নিয়ে ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত হাতিরঝিলের উপশাখা খাল (বনানী-হাতিরঝিল-নড়াই খাল) সংস্কার, পানি প্রবাহ বৃদ্ধি, নৌ যোগাযোগ ও বিনোদন সুবিধার উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করেন তারা। এ প্রস্তাবে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দেবে এক হাজার ১৮ কোটি এবং উত্তর সিটি নিজেদের তহবিল থেকে দেবে ৩৩৯ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের ব্যয় প্রস্তাবে ৪৪৩ কোটি টাকার বেশি রাখা হয়েছে ব্রিজ, ইউলুপ ও ওভারপাস নির্মাণে। পানির গুণমান ব্যবস্থাপনায় রাখা হয়েছে ১০১ কোটি, ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনায় ১১৭ কোটি এবং পানি ধারণক্ষমতা বাড়াতে ৬৮ কোটি টাকা। ২০২২ সালের ১২ জানুয়ারি এ প্রকল্পের প্রস্তাব অনুমোদনে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছিল।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাতিরঝিলের সঙ্গে বনানী লেকের সংযোগ রয়েছে। তবে সংযোগ সড়ক ও নিচু কালভার্টের কারণে নৌ চলাচলের সুযোগ নেই। একইভাবে হাতিরঝিল থেকে গুলশানের শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি পার্ক ও নিকেতনের মধ্যদিয়ে নৌপথে বনানীর ১৮ নম্বর সড়ক পর্যন্ত চলাচলের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, বনানী লেকের ওপর বানানো নিকেতন-গুলশান সড়ক, মহাখালী-গুলশান এবং বনানী-গুলশানে যাওয়া কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউর কালভার্টের কারণে যা এখন সম্ভব হচ্ছে না। একইভাবে গুলশান-১ থেকে বাড্ডা লিংক রোড ও গুলশানের মানারাত স্কুল থেকে শাহজাদপুর সড়ক ও গুলশান-২ থেকে বারিধারা সড়কের কারণে কালাচাঁদপুর পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব হবে না। আপাতত আলাদা আলাদাভাবে সড়ক পার হয়ে এসব লেক দিয়ে নৌ চলাচল সম্ভব।

‘গুলশান-বনানী লেক ঘিরে নৌ চলাচল শুরু হলে দৈনন্দিন যাতায়াতে আরও স্বাচ্ছন্দ্য আসবে। আশপাশের সড়কে যানজট কমাতে সহায়ক হবে। দ্রুত সময়ে জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন নিতে ডিএনসিসি মেয়রকে আরও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’— মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা

ডিএনসিসি ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের এ প্রকল্পের নকশা করেছেন স্থপতি ইকবাল হাবিব। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বনানী-গুলশান লেকের ওপর সেতু নির্মিত হলে হাতিরঝিলের সঙ্গে বনানী লেক এবং গুলশান লেকের সরাসরি নৌপথ তৈরি হবে। ফলে হাতিরঝিলে চলাচলকারী ‘ওয়াটার ট্যাক্সি’ বনানী লেক হয়ে বনানী কবরস্থান পর্যন্ত এবং গুলশান লেক হয়ে বারিধারা ডিওএইচএস গেট বা কালাচাঁদপুর মেইন রোড পর্যন্ত চলাচল করতে পারবে।

এছাড়া প্রস্তাবিত সেতুর পাশাপাশি সড়কের ওপরে ‘ইউলুপ’ তৈরি এবং গুলশান অ্যাভিনিউ সড়কে ডানমুখী যান চলাচল বন্ধের মাধ্যমে গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক-গুলশান ২ গোল চত্বর-মাদানি অ্যাভিনিউ সড়ক এবং বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড-গুলশান-১ গোল চত্বর-গুলশান বাড্ডা লিংক রোডে যান চলাচল ব্যবস্থায় সিগন্যাল ব্যবস্থা সহজীকরণ করা সম্ভব। একই সঙ্গে প্রস্তাবিত সেতু সংলগ্ন স্থানে পকেট পার্ক বা উন্মুক্ত গণপরিসর তৈরি করা যাবে।

দ্রুত গুলশান ও বনানী লেকে নৌ চলাচল চান যাত্রীরাগত সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে গুলশান-২ নম্বরে আলাপকালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে জিয়া উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, হাতিরঝিলে ওয়াটার ট্যাক্সি চালু হওয়ায় খুব সহজেই রামপুরা থেকে পুলিশ প্লাজা যাওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু পুলিশ প্লাজা থেকে ফের বাসের টিকিট কাটতে লাইন ধরতে হয়। টিকিট কেটে আবার বাসের অপেক্ষায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়। অথচ রামপুর থেকে নৌপথে সরাসরি গুলশান যাওয়া সম্ভব হলে নাগরিকদের দুর্ভোগ অনেক কমে যেত। এ পথে নৌ চলাচলের সুযোগ থাকলেও কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।

তেজগাঁওয়ের বিএফডিসি (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশ) ঘাট থেকে ওয়াটার ট্যাক্সিতে পুলিশ প্লাজা ঘাটে নামেন বাংলামোটর মোটরপারস ব্যবসায়ী হুমায়ন কবির। তিনি শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি পার্কের সামনে থেকে বাসে ওঠেন। যাবেন বনানীর মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক রোডে। আলাপকালে হুমায়ন কবির বলেন, হাতিরঝিল থেকে নৌপথেই মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক রোডে যাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু এ পথে ওয়াটার ট্যাক্সি চালু করছে না কর্তৃপক্ষ। অথচ ওয়াটার ট্যাক্সি চালু হলে সহজেই হাতিরঝিল থেকে নৌপথে বনানী যাওয়া যেত।

এমএমএ/এমএএইচ/এএসএম