আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ভাষা মহান সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির প্রতি এক অপার অনুগ্রহ। ইসলামে মায়ের ভাষার প্রতি অনেক সম্মান ও গুরুত্ব রয়েছে। মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই মাতৃভাষার গুরুত্ব ও মর্যাদা অনেক বেশি। দেশপ্রেম যেমন ঈমানের অংশ, ঠিক মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা ও আন্তরিকতা থাকাও ঈমানের অপরিহার্য বিষয়। বৈচিত্রময় ভাষা আর অনুপম বাক প্রতিভার গুণে মানুষ অন্য সব প্রাণী থেকে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ইসলাম সব ভাষাকে সম্মান করতে শেখায়। কারণ, সব ভাষাই আল্লাহর দান ও তার কুদরতের নিদর্শন।
Advertisement
ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই মাতৃভাষার গুরুত্ব ও মর্যাদা অনেক বেশি। দেশপ্রেম যেমন ঈমানের অংশ, ঠিক মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা ও আন্তরিকতা থাকাও ঈমানের অপরিহার্য বিষয়। বৈচিত্রময় ভাষা আর অনুপম বাক প্রতিভার গুণে মানুষ অন্য সব প্রাণী থেকে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ইসলাম সব ভাষাকে সম্মান করতে শেখায়; কারণ, সব ভাষাই আল্লাহর দান ও তার কুদরতের নিদর্শন।
প্রত্যেক জাতির কাছে তাদের স্বীয় মাতৃভাষার মর্যাদা যেমন অপরিসীম তেমনি আল্লাহতাআলার কাছে কোনভাষাই ছোট নয়। তিনি সকল ভাষা জানেন, বুঝেন। যে যেভাবেই তাকে ডাকে না কেন তিনি বুঝেন, উত্তর দেন।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহতাআলা ইরশাদ করেন: ‘আর আমি প্রত্যেক রাসুলকে তার জাতির ভাষাতেই ওহিসহ পাঠিয়েছি যাতে করে সে স্পষ্টভাবে আমার কথা তাদের বুঝিয়ে দিতে পারে।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪)
Advertisement
হাদিসে উল্লেখ রয়েছে হজরত আবু যর (রা.) থকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ প্রত্যেক নবিকে তার স্বজাতির ভাষায় প্রেরণ করেছেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
সকল জাতিকে হেদায়াতের জন্য যেমন আল্লাহপাকের পয়গম্বর এসেছেন, তেমনি সকল জাতির স্ব-স্ব ভাষাতেই আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ওহি-ইলহাম নাজিল হয়েছে।
আল্লাহতাআলা প্রত্যেক জাতির স্বীয় মাতৃভাষাকে যথাযত মর্যাদা দিয়ে তাদের নিজস্ব ভাষায় আসমানি কিতাব অথবা কিতাববিহীন প্রত্যাদিষ্টকে ওহি দ্বারা পাঠিয়েছেন। হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের জাতির মাতৃভাষা ছিল সুরিয়ানি, তাই সুরিয়ানি ভাষায় তার প্রতি ইনজিল অবতীর্ণ হয়। হজরত মুসা আলাইহিস সালামের জাতির ভাষা ছিল ইবরানি, তাই ইবরানি ভাষায় তাওরাত অবতীর্ণ হয়। হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের জাতির ভাষা ছিল ইউনানি, তাই ইউনানি বা আরামাইক ভাষায় যাবুর অবতীর্ণ হয়। আর সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভাষা ছিল আরবি, তাই সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ পবিত্র কুরআনুল আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হয়। আসমানি কিতাবসমূহ যদি নবি-রাসুলদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় না হয়ে ভিন্ন ভাষায় নাজিল হতো, তাহলে নিজেদের উম্মতদেরকে দীনের আলোর দিকে আহ্বান করা নবি-রাসুলদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে যেত।
একেক জাতির জন্য একেক ভাষা সৃষ্টি করা এটা আমাদের ওপর আল্লাহ তাআলার বিশেষ কৃপা। আর না হয় মানুষ ভাষার মর্যাদা বুঝত না। মানুষের ভাষা ও বর্ণের বিভিন্নতার সাথে তার উন্নতি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
Advertisement
তাই কোনো ভাষাকে হেয় জ্ঞান করা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা মোটেও ঠিক নয়। কেননা, সব ভাষার স্রষ্টাও আল্লাহতাআলাই। তার সৃষ্টির অবমূল্যায়ন করা তার প্রতি অসম্মান প্রদর্শনেরই নামান্তর।
বিদায় হজের ভাষণে মহানবী (সা.) কত চমৎকারভাবেই না বলেছেন, ‘কালোর ওপর সাদার প্রাধান্য নেই, অনারবের ওপর আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই।’ (বুখারি)
মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছিলেন আরবের সবচেয়ে সুন্দর ও শুদ্ধভাষী। তিনি কোনোদিন একটি অশুদ্ধ বা বিকৃত শব্দ বা বাক্য উচ্চারণ করেছেন বলে পাওয়া যায় না।
আল্লাহতাআলা পবিত্র কুরআনের ইরশাদ করেন: ‘আর তার নিদর্শনাবলীর মাঝে রয়েছে আকাশসমূহের ও পৃথিবীর সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও রঙের বিভিন্নতাও। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা আর রূম, আয়াত: ২২)
ভাষা ও রঙের এই বিভিন্নতা সুপরিকল্পিত, যার পশ্চাতে পরিকল্পনাকারীর অস্তিত্ব বিদ্যমান। আকাশ মালা ও বিশ্বজগত সেই পরিকল্পনাকারীর সৃষ্টি। বর্ণের ও ভাষার বিভিন্নতার ফলে বিভিন্ন সভ্যতা ও সংস্কৃতির আগমন-নির্গমন ঘটে চলেছে। কিন্তু তবুও এই বিভিন্নতার অন্তরালে স্থায়ীভাবে প্রবাহমান রয়েছে একটি বিশাল একতা ও মানবতার ঐক্য।
আমাদের মাতৃভাষা বাংলার প্রতি শহীদদের অবদান এবং মহানবির (সা.) মাতৃভাষা প্রীতির অজস্র দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে রয়েছে। তাই ভাষার ক্ষেত্রে আমাদেরকে আরো সচতেন হতে হবে আর নিজ মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।
এইচআর/এএসএম