পদ্মা নদীর পাড় থেকে তাকালেই দেখা যায় শুধু ধু ধু বালুরাশি। আশপাশের প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে দেখা নেই কোনো পানির চিহ্ন। যেন এক মরুপ্রান্তর। তপ্ত রোদে চিকচিক করছে বালু। সেই বালুরাশিতে দেখা মিলছে কিছু ঘোড়ার গাড়ি ও মানুষের চলাচল।
Advertisement
এমনি এক জায়গার দেখা মিলেছে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার পদ্মা নদীর হাবাসপুর খেয়াঘাটে। এ ঘাটটি পদ্মা নদীর মাধ্যমে যুক্ত হয়েছে পাবনার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া খেয়াঘাটে।
প্রতিদিন এ খেয়াঘাট দিয়ে রাজবাড়ীসহ ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহের কয়েকটি উপজেলার সহস্রাধিক মানুষের চলাচল। নদী জেগে ওঠা চরের বালুরাশি ঠেলে নৌকায় পারাপার করতে হয় তাদের। অনেকে কুষ্টিয়ার লালন শাহ সেতুর বিকল্প হিসেবে এ ঘাট ব্যবহার করেন। কারণ এ পথ দিয়ে চলাচলে তাদের প্রায় এক থেকে দেড়শ কিলোমিটার পথ কম পাড়ি দিতে হয়। সময় সাশ্রয় হয় ১-২ ঘণ্টা।
সরেজমিন দেখা যায়, পদ্মা নদীর পানি অতিরিক্ত মাত্রায় কমে যাওয়ায় যাত্রীদের পারাপারের সুবিধার্থে খেয়াঘাটটি মূল স্থান থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার নিচে সরিয়ে অস্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে। যেখানে যাওয়ার জন্য নেই কোনো সংযোগ সড়ক। ফলে পদ্মার চরের দীর্ঘ এ পথ হেঁটে অথবা ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে পাড়ি দিতে হয় যাত্রীদের। ঘাটে আসা-যাওয়ার এখন একমাত্র ভরসা ঘোড়ার গাড়ি। তবে অর্থাভাবে অনেককে দীর্ঘ এ পথ পাড়ি দিয়ে হয় হেঁটে। নেই কোনো গাছের ছায়া বা সুপেয় পানির ব্যবস্থা। যেন এক মরুপ্রান্তর। জরুরি প্রয়োজন বা রোগী আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষকে পড়তে হয় বিপাকে।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাবাসপুর খেয়াঘাটের যাত্রীদের আনা-নেওয়া ও নদী পরাপারের জন্য সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ১০টি ঘোড়ার গাড়ি ও পাঁচটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল করে। ঘোড়ার গাড়ি ও নৌকার ভাড়া বাবদ যাত্রীপ্রতি নেওয়া হয় ১০০ টাকা। তবে সন্ধ্যার পর বন্ধ থাকে ঘোড়ার গাড়ি ও নৌকা চলাচল। সেক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজনে বিপাকে পড়তে যাত্রীদের।
যাত্রী জাকির বিশ্বাস, ইসমাইল হোসেন, রফিকুল ইসলাম রঞ্জু, আনসার মুসল্লি, শরিফুলসহ কয়েকজন যাত্রী বলেন, দূরত্ব ও সময় বাঁচাতে তারা এ ঘাট দিয়ে পারাপার হন। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে এই ঘাটে ৬-৭ মাস তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
তারা বলেন, চরের বালুতে হাঁটা বা মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টের। বালু গরম হয়ে পায়ে ফোসকা পড়ে যায়। মোটরসাইকেল একদিক থেকে অন্যদিকে চলে যায়। তীব্র রোদে পাঁচ কিলোমিটার পথ হাঁটা যায় না। কোথাও একটু ছায়া বা পানি পানের ব্যবস্থাও নেই। টাকা থাকলে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে আর টাকা না থাকলে পায়ে হেঁটেই ঘাটে আসা-যাওয়া করতে হয়।
ঘোড়ার গাড়ির চালক নবী ও মফিজ মণ্ডল বলেন, ‘এখানে ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া চলাচল করা খুবই কষ্টকর। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বালুর ওপর দিয়ে ৪-৫ বার যাত্রীদের নিয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। এতে যেমন ঘোড়ার কষ্ট হয়, তেমনি আমাদেরও কষ্ট হয়। ঘোড়ার গাড়ি না থাকলে মানুষের যে কী কষ্ট হয় তা বলে বোঝাতে পারবো না।’
Advertisement
কথা হয় হাবাসপুর খেয়াঘাটের ইজারাদার পরশের সঙ্গে। তিনি বলেন, সকাল ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত নৌকা চলে। এরপর তেমন কোনো যাত্রী থাকে না। যে কারণে তারা নৌকা বন্ধ রাখেন। যাত্রীরা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কেউ হেঁটে আবার কেউ ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে ঘাটে আসেন।
তিনি আরও বলেন, এখানে যাত্রীদের বসার জন্য পাঠকাঠির একটি ঘর করে দেওয়া হয়েছে। পাঁচটি নৌকা এক ঘণ্টা পরপর ছেড়ে যায় ও আসে বলেও জানান ইজারাদার পরশ।
এ বিষয়ে পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে যাত্রীদের সমস্যা বেশি হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরেজমিন তদন্ত করে যাত্রী ছাউনি, সুপেয় পানির ব্যবস্থাসহ যাত্রীদের চলাচল সহজ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রুবেলুর রহমান/এসআর/জেআইএম