ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আঁধার কার্ড নিয়ে চরম বিভ্রান্তি শুরু হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় আচমকাই বাতিল হয়ে যাচ্ছে আধার কার্ড। এ বিষয়টি প্রথম প্রকাশ্যে আসে বর্ধমান জেলায়। সেখানে বেশ কিছু জায়গায় পোস্ট অফিস থেকে লোকজনের বাড়িতে হঠাৎ করেই আধার কার্ড বাতিলের চিঠি আসে। তাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ।
Advertisement
এরপরেই আরও বেশকিছু জেলায় একই রকম অভিযোগ আসতে থাকে। উওর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু জায়গায় আধার কার্ড বাতিলের চিঠি এসেছে। এই ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী জেলা প্রশাসকদের নিয়ে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন।
আধার কার্ড বাতিল নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে রাজ্যের মানুষের আধার কার্ড বাতিল হয়ে যাওয়ার পেছনে বিজেপির চক্রান্তের কথা বলা হচ্ছে।
এবার আধার কার্ড বাতিলের বিষয়ে মুখ খুললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। সোমবার পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয় নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, লোকসভা নির্বাচনের আগে এমন কি ঘটল যে হাজার হাজার মানুষের আধার কার্ড ইচ্ছামত বাতিল করা হচ্ছে?
Advertisement
আসামের মতো এখানেও কি ডিটেনশন ক্যাম্প করতে চাইছে কেন্দ্র? সংখ্যালঘু, তফসিলি ও মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে বেশি। আধার কার্ড নিয়ে তফসিলি ফেডারেশন আমার কাছে চিঠি দিয়েছে। আধার কার্ড বাতিলের চিঠি দেওয়ার আগে আমাদেরও জানায়নি পর্যন্ত। যার কার্ড বাতিল হয়েছে অন্তত তাকে তো জানাবে তাও জানায়নি।
এনআরসি সম্পর্কিত আশ্বাস দিয়ে মমতা ব্যানার্জী বলেন, কোনো এনআরসি এখানে হবে না। কোনো ডিটেনশন ক্যাম্প হবে না। এটা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দের বাংলা। আমরা নির্দেশ দিয়েছি, বিকল্প কার্ড দেব। কার্ড তৈরি করছি। ৩-৪ দিনের মধ্যে এই কার্ড পৌঁছে দেব। আমার কাছে যত অভিযোগ এসেছে তার ভিত্তিতে আমি নিজেও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখবো বলে ঠিক করেছি। আধার কার্ড নিয়ে তারা ছেলে খেলা করছেন, মানুষকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছেন। আমি গরিবদের বলব যে কোনো সমস্যায় আমাদের জানান। বিকল্প কার্ড দেবো আমরা। গায়ের জোরে ইলেকশন ঘোষণার ১০-১৫ দিন আগে এটা কিসের রাজনীতি?
এরপর কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে মমতা বলেন, আগে জবাব দিন কেন আধার কার্ড গুলো বাতিল করেছেন। এরপর বলবেন আগে আধার কার্ড কাটলাম, পাঁচ বছর পর নাগরিকত্ব দেব। এবার মতুয়া বন্ধু, তফসলি বন্ধু, সংখ্যালঘু সকলেই বুঝতে পারছেন তো ওদের খেলাটা? আপনাকে না জিজ্ঞাসা করে ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে। আমরা আধার গ্রিভান্সেস টোটাল রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আগামী মঙ্গলবার থেকে চালু করছি। যাদের আধার কার্ড ডিঅ্যাক্টিভেট হয়েছে আমাদের দ্রুত জানান। তারা কোনো সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন না। সামাজিক, গণতান্ত্রিক, অর্থনৈতিক অধিকার সবই পাবেন। এটা দিল্লি নয় পশ্চিমবঙ্গ।
আরও পড়ুন:
Advertisement
আধার সমস্যা নিয়ে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, আধার নিয়ে যে সমস্যাটা হচ্ছে সেটা খুব তাড়াতাড়ি সমাধান হয়ে যাবে। কিছু ত্রুটির জন্য এ ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে সব বাতিল হয়ে যাওয়া আধার কার্ড সক্রিয় হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী।
ডিডি/টিটিএন