দেশের ইমারত নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান অর্থাৎ বিদ্যমান বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট শিল্প মালিক ও বিশেষজ্ঞরা। অগ্নি নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সরঞ্জামের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে জাতীয় বিল্ডিং কোড সংশোধন ও হালনাগাদ না করে বিদেশি মান বজায় রাখার কথা নিয়ন্ত্রক সংস্থার বলা উচিত নয় বলেও মনে করেন তারা।
Advertisement
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আয়োজিত বিএনবিসি ‘ফায়ার কোড’ বাস্তবায়ন ও চ্যালেঞ্জ শীর্ষক সেমিনারে এ আহ্বান জানান তারা। সেমিনার আয়োজন করে ইলেকট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইসাব)।
এর আগে গত শনিবার তিন দিনব্যাপী নবম আন্তর্জাতিক ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো উদ্বোধন করা হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। এতে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন ইসাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন, ইউটিলিটি প্রফেশনালের প্রধান নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার মো. হাসমতুজ্জামান, আরএমজি সাসটেইনেবিলিটি কাউন্সেলর মো. হাসানুজ্জামান, ইসাব পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আল-এমরান হোসেন, ইসাব সাবেক সভাপতি মোতাহের হোসেন খান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শেখর চন্দ্র বিশ্বাস প্রমুখ।
Advertisement
বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড ত্রুটিপূর্ণ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে জাতীয় বিল্ডিং কোড সংশোধন ও হালনাগাদ না করে বিদেশি মান বজায় রাখার কথা নিয়ন্ত্রক সংস্থার বলা উচিত নয়। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এটা বন্ধ করা আবশ্যক। বহুতল ভবনের সংজ্ঞা নিয়ে এখনো বিরোধ চলছে। আমাদের সেরা মান নির্ধারণ করতে হবে। তাহলে অন্য বিদেশি সংস্থা আমাদের ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ দিতে পারবে না। আমাদের মানদণ্ড ঠিক থাকলে এমন বিদেশি চাপ আসবে না। বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড আমাদের জন্য খারাপ নয়। তবে অযৌক্তিক ও অবাস্তব হলে সেটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে সৃষ্ট হয়রানি বন্ধ করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
ইঞ্জিনিয়ার মো. হাসমতুজ্জামান বলেন, বর্তমানে প্রাথমিক অগ্নিকাণ্ড শনাক্ত এবং দমন ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। কিন্তু জাতীয় বিল্ডিং কোড নিয়ে এখনো একটি অস্পষ্টতা রয়েছে। এই কোডে কিছু দুর্বল বিষয় রয়েছে। এটা সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সর্বোত্তম আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণ করে করা উচিত ছিল।
মো. মোতাহের হোসেন খান বলেন, ভবন ও কারখানার অগ্নি নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য আমাদের নিজস্ব প্রয়োজনের ভিত্তিতে, আমাদের কারখানার ভিত্তিতে এবং আমাদের দেশের ওপর ভিত্তি করে কর্মক্ষমতা ভিত্তিক ডিজাইন করতে হবে। বিভিন্ন অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সরঞ্জাম দিতে হবে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শেখর চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বর্তমানে ১০ থেকে ১৫ তলা বিশিষ্ট অনেক উঁচু ভবন রয়েছে, কিন্তু প্রাথমিকভাবে অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়ে মালিকদের খুবই অনীহা দেখা যায়। নতুন বিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা তাদের ডিজাইন আপডেট করার এবং ফায়ার লিফট, ফায়ার সিঁড়ি, সুরক্ষা দেয়াল এবং অগ্নি নির্গমন নিশ্চিত করার পরামর্শ দেই।
Advertisement
মো. আল-এমরান হোসেন বলেন, এখনো নন-আরএমজি সেক্টর ফায়ার কোড বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা থেকে অনেক দূরে আছে। মেট্রোরেল, টানেলের মতো মেগা প্রকল্প বিএনবিসিতে অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই অগ্নি নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমসাময়িক সমস্যা সমাধানের জন্য বিএনবিসি সময়মত আপডেট রাখা উচিত। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের দৃঢ় ইচ্ছা থাকা উচিত। এখানে সরকারি সংস্থাগুলোকে দ্রুত সেবা প্রদানের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার সহায়তা করা উচিত। আমাদের জাতীয় বিল্ডিং কোড সংশোধন করতে হবে। উন্নত বিশ্বে প্রতিবছর সংশোধন করা হয়। উঁচু ও নিচু ভবনের মধ্যে কোনো সমস্যা থাকলে তা সমাধান করতে হবে নিজেদেরই। কারণ, তাতে আইনের প্রয়োগ সম্ভব নয়। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি করে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এমওএস/কেএসআর/এএসএম