শরীয়তপুরের নড়িয়ায় শিক্ষকদের ভুলে প্রবেশপত্রে বড় বোনের নাম চলে আসায় পরীক্ষায় বসতে পারেননি প্রমিতা বাছার (১৮) নামের এক শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পরিবার। যদিও বিষয়টি নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করে আগামী বছর ওই শিক্ষার্থীর পরীক্ষার ব্যয়ভার বহন করার কথা জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
Advertisement
শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে উপজেলার বিঝারি ইউনিয়নের কান্দাপাড়া এলাকায় ভুক্তভোগী বাড়িতে গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
প্রমিতা বাছার ওই এলাকার মৃত সন্তোষ বাছার মেয়ে। তিনি বিঝারি ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গুরুরাম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্কুল সূত্র জানা, ১২ বছর আগে প্রমিতা বাছার ও পূর্ণিমা বাছারের বাবা সন্তোষ বাছার তার দুই মেয়েকে রেখে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর মা মনিকা রানী বাছার শত কষ্টের মাঝেও তার দুই মেয়েকে শিক্ষিত করতে পঞ্চপল্লী গুরুরাম উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন তারাও ঠিকভাবে পড়াশোনা করছিল। গত বছর ওই বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল বড় বোন পূর্ণিমা বাছারের। তবে পারিবারিক একটি সমস্যার কারণে পরীক্ষায় বসতে পারেনি পূর্ণিমা। এ বছর একই বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছোট বোন প্রমিতা বাছারের। সেভাবে পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণও করেছিলেন তিনি। যথা সময়ে রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিয়ে ফরমপূরণ করেছিলেন তিনি। রেজিস্ট্রেশনে প্রমিতার নাম ও রোল নম্বর ঠিক আসলেও প্রবেশপত্রে চলে আসে বড় বোনের নাম। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের জানালে পরীক্ষায় বসা নিয়ে কোনো প্রকার সমস্যা হবে না বলে আশ্বস্ত করা হয়। বৃহস্পতিবার পরীক্ষা কেন্দ্র মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজে উপস্থিত হলে অন্যজনের প্রবেশপত্র হওয়ায় তাকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেন নিরীক্ষক। পরে বাধ্য হয়ে বাড়িতে চলে আসেন প্রমিতা।
Advertisement
এ বিষয়ে প্রমিতা বাছার বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্টে মা পড়াশোনা চালাতেন। এ বছর পরীক্ষায় পাশ করে কলেজে ভর্তি হওয়ার আশা ছিল। কিন্তু স্যারদের ভুলের কারণে আমি পরীক্ষায় বসতে পারলাম না।
প্রমিতার মা মনিকা রাণী বাছার বলেন, শত কষ্টের মাঝেও মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। রেজিস্ট্রেশন কার্ডে প্রমিতার নাম ঠিকঠাক আসলেও প্রবেশপত্রে স্যাররা বড় বোনের নাম দিয়েছে। নাম আর রোল নম্বর দুটাই ভুল। আমার মেয়েটার জীবনটাই এলোমেলো করে দিলেন তারা।
এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌতম দাস বলেন, দুই বোনের নাম কাছাকাছি হওয়ায় ভুলটি হয়েছে। বিষয়টি শেষ সময়ে জানতে পেরেছি। যদি দুই দিন সময়ও পেতাম তাহলে শিক্ষাবোর্ডে গিয়ে বিষয়টির সমাধান করতাম।
তিনি আরও জানান, ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকরা মিলে আগামী এক বছর তার পড়াশোনার সব ব্যয় বহন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাতে সে আগামী বছর পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে।
Advertisement
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শামসুন নাহার বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। প্রবেশপত্রের বিষয়টি সম্পূর্ণ স্কুল কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিস দেখেন। বিষয়টি আগে জানতে পারলে ওই শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় বসার ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করতে পারতাম।
বিধান মজুমদার অনি/আরএইচ/জেআইএম