রহস্যময় এই বিশ্বের আনাচ কানাচে লুকিয়ে আছে নানা বিস্ময়। যদিও বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর অনেক রহস্যের সমাধান করে ফেলেছেন। তবুও এমন অনেক রহস্য রয়েছে যার সমাধান এখনও বাকি আছে। রাশিয়ার বৈকাল হ্রদ নিজের অন্দরে ঠিক এমনই এক রহস্য ধারণ করে রেখেছে। রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলে অবস্থিত বৈকাল হ্রদটি বিশ্বের গভীরতম, বৃহত্তম ও প্রাচীনতম হ্রদ, যেখানে গেলে নাকি আর ফিরে আসা যায় না।
Advertisement
কী আছে এই হ্রদে?
বৈকাল হ্রদ বিশ্বের গভীরতম ও বৃহত্তম মিষ্টি পানির হ্রদ। বৈকাল হ্রদে বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ বিশুদ্ধ মিষ্টি পানি আছে, যেখানে আজকাল তাপমাত্রা শূন্যের নীচেই থাকে। এই হ্রদটি ১৭০০ মিটার অর্থাৎ ১.৭ কিলোমিটার গভীর। এই হ্রদ মিষ্টি জলের একটি প্রধান উৎস হিসাবেও বিবেচিত হয়।
ইউনেস্কো হ্রদটিকে ১৯৯৬ সালে বিশ্বের অনন্য প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। লন্ডন ও এডিনবার্গের মধ্যে যতটা দূরত্ব, এই হ্রদের দৈর্ঘ্যও ঠিক ততটা। আর প্রতিবছর সেই দৈর্ঘ্য ২ সেন্টিমিটার হারে বাড়ছে।
Advertisement
এই লেকের রহস্য
বৈকাল হ্রদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক রহস্য। অনেকের ধারণা হ্রদের ভিতরে নাকি লুকিয়ে রয়েছে ৫০০ টন সোনা। শুধু তাই নয়, বৈকাল হ্রদ হলো হাজার হাজার প্রজাতির বিরল উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল। যার ৮০ ভাগ এই অঞ্চলের স্থানীয়। হ্রদটি বুরজাত উপজাতিদেরও বাসস্থান। এই সম্প্রদায়ের মানুষরা হ্রদের পূর্ব তীরে ছাগল-উট, গবাদি পশু, ভেড়া ও ঘোড়া পালন করেন।
আরও পড়ুন
• বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর এসব স্থাপত্য দেখতে যেখানে যাবেন• একদিনেই ঘুরে আসুন পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে
Advertisement
শীতকালে পারদ নেমে যাওয়ার কারণে এই হ্রদে দুই মিটার পুরু বরফের স্তর জমে। আর বৈকাল হ্রদ যখন বরফ হয়ে যায়, তখন সেখানে একটি চমৎকার দৃশ্য দেখা যায়। বৈকাল হ্রদের ইকোসিস্টেম এমন যে হ্রদ যখন বরফ হয়ে যায়, তখন এখানকার জল বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাস ছাড়তে দেয় না।
এই লেকের বয়স কত?
বৈকাল হ্রদ প্রায় ২,৫০০ মিলিয়ন বছর পুরোনো। এই কারণে এটিকে বিশ্বের প্রাচীনতম হ্রদ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই হ্রদের চারদিক পাহাড়ে ঘেরা। এর মধ্যে আছে উত্তর উপকূলে বৈকাল পর্বতমালা, উত্তর-পূর্ব উপকূলে বারগুজিন রেঞ্জ ও পশ্চিম উপকূলে প্রিমর্স্কি রেঞ্জ। হ্রদটিতে ২৭টি দ্বীপও আছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় ওলখোন দ্বীপ, যার দৈর্ঘ্য ৭২ কিলোমিটার।
এটি একটি হ্রদ দ্বারা বেষ্টিত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। হ্রদটি প্রায় ৩৩০টি প্রবাহিত নদী থেকে জল গ্রহণ করে। বৈকালের মধ্যে সরাসরি প্রবাহিত প্রধান স্রোতগুলি হলো সেলেঙ্গা-বারগুজিন, আপার আঙ্গারা, তুর্কা, সরমা এবং স্নেজনায়া। তবে এই লেকে কোনও ধরনের বোট রাইডের ব্যবস্থা নেই।
তাই তো লেকের চারপাশের প্রাকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে ট্রেনে করে লেকের পুরো পরিধি ঘুরে দেখতে পারেন। এই রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০ কিলোমিটার। এই দীর্ঘ ট্র্যাকে ট্রেনে করে ঘুরতে ঘুরতে হ্রদ সংলগ্ন একাধিক আকর্ষণীয় স্থানে পৌঁছে যেতে পারবেন। তাই এই অভিজ্ঞতা হবে অনেকটা না ভোলা স্বপ্নের মতো।
সূত্র: জাস্ট ফান ফ্যাক্টস/লেক বৈকাল.অর্গ
জেএমএস/এমএস