জাতীয়

জাতীয় জাদুঘরে উপচেপড়া ভিড়, উচ্ছ্বসিত শিশুরা

চার বছরের তাসফিয়া মায়ের হাত ধরে জাতীয় জাদুঘর দেখতে এসেছে। আগে থেকে টিকিট না থাকায় মায়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ২৫ মিনিটের ভিড় ঠেলে টিকিট কেটে জাদুঘরের গেটে প্রবেশ করে তাসফিয়া। প্রবেশ করতেই তার চোখে-মুখে আনন্দ।

Advertisement

তাসফিয়ার মতো ছোট-বড় সবাই ছুটির দিন শুক্রবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘর ঘুরতে এসেছে। কেউ আবার বইমেলা যাওয়ার আগে অথবা মেলায় প্রবেশের পরে জাদুঘরে আসে।

প্রধান ফটকের নিরাপত্তাকর্মীরা বলছেন, গেট খোলার আগে থেকেই দর্শনার্থীরা এসে অপেক্ষা করছেন। নিয়ম মেনে সবাই টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করছেন। প্রত্যেককেই মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির আওতায় আনা হচ্ছে।

দেখা যায়, শুক্রবার সকাল থেকেই টিকিট কাউন্টারে ছিল দীর্ঘ সারি। ছোট থেকে বড় সব বয়সী মানুষ ভিড় করেছেন কাউন্টার ও জাদুঘরের প্রবেশপথে। কেউ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনেছেন, কেউ বাসা থেকে অনলাইনে টিকিট কেটে নিয়ে এসেছেন। আবার অনেকে জাদুঘরের প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে অনলাইনে টিকিট কেটে প্রবেশ করছেন।

Advertisement

তাসফিয়া মা তামান্না ইয়াসমিন তিন্নি জাগো নিউজকে বলেন, মিরপুর থেকে দুপুরের পর বইমেলায় এসেছিলাম। মেলায় ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেলেও আমার মেয়ে জাদুঘরে যেতে চাইলো। বইমেলা থেকে ফেরার পথে মেয়ের আবদার শুনতে তাই লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে জাদুঘরে প্রবেশ করেছি।

জাতীয় জাদুঘর একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। যা বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য তৈরি করা হয়েছে। ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই জাদুঘরটিতে প্রাগৈতিহাসিক, প্রোটোহিস্টোরিক এবং ইসলামিক সময়কালসহ বিভিন্ন সময়কাল এবং সভ্যতার প্রায় ৮৬ হাজারটিরও বেশি বস্তুর একটি বিশাল সংগ্রহ রয়েছে।

হাজার হাজার বছর আগের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতির মাধ্যমে জাদুঘরটি বাংলাদেশের জনগণ এবং সারা বিশ্বের দর্শকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। জাদুঘরটি চারটি প্রধান বিভাগে বিভক্ত। প্রত্নতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, প্রাকৃতিক ইতিহাস এবং সমসাময়িক শিল্প ও বিশ্ব সভ্যতা।

সরেজমিনে দেখা যায়, দর্শনার্থীদের বেশির ভাগই শিশু-কিশোর। তারা বাবা-মা ভাই-বোনের সঙ্গে এসেছে। তাদের উচ্ছ্বাস দেখে মনে হচ্ছে বাসার চাল দেয়ালের বন্দিজীবন থেকে যেন মুক্তি পেয়েছে।

Advertisement

সাত বছরের শিশু সিফাত উচ্ছ্বাস নিয়ে বলে, বাবা-আর ভাইয়ার সঙ্গে জাদুঘরে এসেছি। আজ শুধু ঘুরবো, খাবো। এর আগে বইমেলায় ঘুরেছি। এই দেখো চারটা টিকিট কিনেছি।

সিফাতের ভাই ১৫ বছর বয়সী সিয়াম বলে, এবারের বইমেলায় এসে অনেক মজা হয়েছে। আব্বু-আম্মুর সঙ্গে অনেক ঘুরেছি। আমি এর আগে এখানে আসিনি। পুরো মিউজিয়াম ঘুরে দেখবো। আমাদের মতো স্কুলপড়ুয়াদের সব দর্শনীয় স্থানে যাওয়া উচিৎ। এসব জায়গায় গেলে যেমন ঘোরা যায়, ইতিহাসও জানা যায়।

সিয়ামের বাবা কাজী সিহাবুল হক। তিনি ব্যবসা করেন। থাকেন দক্ষিণ বনশ্রী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমি তো ব্যবসার কাজে বেশিরভাগ সময় ঢাকার বাইরে থাকি। তবে ওদের মা ওদের সময় বেশি দেয়। সময় পেলেই ঘুরতে বের হয়। আমি আজ ওদের নিয়ে প্রথমে বইমেলায় আর এখন জাতীয় জাদুঘরে ঘুরতে নিয়ে আসছি। ওরা সঙ্গে করে ডায়েরি নিয়ে এসেছে। বিভিন্ন ইতিহাস লিখে নেবে। ওদের আমি অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছি। এভাবে ঢাকায় বসবাসরত সব শিশু-কিশোরকে জাদুঘর একবার হলেও ঘোরানো উচিৎ।

ধানমন্ডি থেকে আসা শাকিলা আফরোজ জাগো নিউজকে বলেন, আজ ছুটির দিন বইমেলায় দুই বাচ্চাকে নিয়ে ঘুরতে আসলাম। বিকেলে বেরিয়েছি। এসে বেশিক্ষণ ঘুরতে পারিনি। তবে ওরা ভেতরে গিয়ে একটু ঘুরতে পেরেছে, তাতেই খুশি। এরপর দাবি করে তারা জাদুঘর দেখবে, এরপর লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বইমেলায় ঘুরতে এসেছেন কলেজপড়ুয়া সাতজন শিক্ষার্থী। তারা সকাল থেকে বইমেলা ঘুরে এসেছেন জাদুঘরে। আগে থেকে তারা অনলাইনে টিকিট কেটে রেখেছিলেন বলে কোনো লাইনে না দাঁড়িয়ে সহজে গেট দিয়ে জাদুঘরে প্রবেশ করেন।

নারায়ণগঞ্জ থেকে তিন বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে বইমেলায় এসেছেন হাসান জাহিদ সরকার। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বাচ্চারা অনেক দিন ধরে জাদুঘরে যাওয়ার কথা বলেছিল। আজ বইমেলায় এসে সুযোগ পেয়ে জাদুঘরে এলাম। জাদুঘর থেকে বাচ্চারা ইতিহাস-ঐতিহ্য জানতে পারবে।

জাদুঘরের গেটে দায়িত্বরত আনসার সদস্য হাবিব জাগো নিউজকে বলেন, বইমেলা চলাকালীন জাদুঘরে ভিড় বেশি থাকে। আজ যেহেতু শুক্রবার ছুটির দিন, তাই সকাল থেকেই ভিড় লেগে আছে।

জাতীয় জাদুঘরের টিকিট মূল্য

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের টিকিট মূল্য ৪০ টাকা। সেই সঙ্গে ৩-১২ বছরের সব শিশুদের জন্য ২০ টাকা। সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থীদের জন্য ৩০০ টাকা এবং অন্যান্য দেশের দর্শনার্থীদের জন্য ৫০০ টাকা।

অনলাইনে টিকিট কাটবেন যেভাবে

জাতীয় জাদুঘর অনলাইন টিকেট কাটার জন্য প্রথমে nationalmuseumticket.gov.bd এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে Buy Ticket অপশনে তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তারপর লগইন করে Purchase eTicket অপশনে ক্লিক করুন। জাদুঘরে ভ্রমণের তারিখ, টিকিট সংখ্যা লিখে Add বাটনে ক্লিক করুন। Make Payment বাটনে ক্লিক করে বিকাশ/ নগদ/ রকেট দিয়ে আপনার পেমেন্ট সম্পন্ন করে অনলাইন টিকিট ডাউনলোড করা যাবে।

জাতীয় জাদুঘর কবে বন্ধ থাকে

জাতীয় জাদুঘর সপ্তাহের সব দিন খোলা থাকে না। এটি প্রতি বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে। এছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকে। সরকারি ছুটির দিনও বন্ধ থাকে না। শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

টিটি/জেডএইচ/এএসএম