স্বাস্থ্য

টুথপেস্ট-হ্যান্ডওয়াশে বিপজ্জনক ‘প্যারাবেন’, ক্যানসারের ঝুঁকি

বাংলাদেশের টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশে বিপজ্জনক মাত্রায় প্যারাবেন পাওয়া গেছে। অ্যানভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশনের (এসডো) এক গবেষণায় এ তথ্য জানানো হয়।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) এসডোর প্রধান কার্যালয়ে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান ওনজিন ইনস্টিটিউট ফর অকুপেশনাল অ্যান্ড অ্যানভায়রনমেন্টাল হেলথের (ডব্লিউআইওইএইচ) সহযোগিতায় এ গবেষণাকর্ম পরিচালনা করা হয়েছে।

এসময় জানানো হয়, সাধারণত অধিক কার্যকরী ও সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে পারসোনাল কেয়ার প্রোডাক্টে প্রিজারভেটিভ হিসেবে প্যারাবেন ব্যবহার করা হয়। তবে এ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ আমাদের হরমোন নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরত্বপূর্ণ অ্যান্ড্রোকাইন সিস্টেমের কার্যক্রম ব্যাহত করে। এ কারণেই বেশ কয়েকটি দেশ এ ধরনের পণ্যে প্যারাবেনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।

মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির এ আশঙ্কার কথা বিবেচনা করেই এসডো এ গবেষণা পরিচালনা করে। এখানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশগুলোতে প্যারাবেনের ব্যবহারের মাত্রা অনুসন্ধান করা হয়। গবেষণা পরিচালনার জন্য ঢাকার বিভিন্ন দোকান থেকে টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশের ৩০টি নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষার জন্য ডব্লিউআইওইএইচ ল্যাবে পাঠানো হয়।

Advertisement

গবেষণায় দেখা গেছে, টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশের সব নমুনাতেই নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রার রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। নমুনাগুলোতে ফ্লোরাইড (শুধু টুথপেস্টে) ও সোডিয়াম ডাইক্লোরাইডের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে।

আরও ভয়াবহ তথ্য হলো, প্রাপ্তবয়স্কদের পারসোনাল কেয়ার প্রোডাক্টে ২২টি নমুনার মধ্যে ৫টি পণ্যে সর্বোচ্চ মাত্রায় প্যারাবেনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বিশেষ করে একটি টুথপেস্টে ১৮২৩ মাইক্রোগ্রাম/গ্রাম ও দুটি হ্যান্ডওয়াশের নমুনায় ১৪০৩-১৮৩৪ মাইক্রোগ্রাম/গ্রাম প্যারাবেনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এমনকি শিশুদের একটি টুথপেস্টেও ৬৫৯ মাইক্রোগ্রাম/গ্রাম মিথাইল প্যারাবেন এবং ৫০.৫ মাইক্রোগ্রাম/গ্রাম বিউটাইল প্যারাবেনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

এ গবেষণায় আরও সাতটি দেশের নমুনাও বিশ্লেষণ করা হয়। কিন্তু দেখা গেছে, বাংলাদেশি পণ্যেই সবচেয়ে বেশি মাত্রায় প্যারাবেন ব্যবহার করা হয়। গবেষণাটিতে মানবস্বাস্থ্যের ওপর এসব রাসায়নিক পদার্থের সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাবের বিষয়গুলোও তুলে আনা হয়েছে। এ প্যারাবেনের কারণে হরমোন নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত, প্রজনন সমস্যা এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিও সৃষ্টি হয়।

অন্যদিকে ফ্লোরাইডের অতিরিক্ত ব্যবহার হাড়ের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং দাঁতের অ্যানামেল গঠনে সমস্যা তৈরি করে। তাছাড়া অতিরিক্ত সোডিয়াম ডাইক্লোরাইড ব্যবহারের ফলে উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনির সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে।

Advertisement

এসডোর চেয়ারপাসরন সাবেক সচিব সৈয়দ মারগুব মোর্শেদ দৈনন্দিন ব্যবহৃত ব্যক্তিগত পরিচর্যা পণ্যতে প্যারাবেনের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি এ রাসায়নিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশে প্যারাবেনের উপস্থিতি সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

এসডোর সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. আবুল হাশেম বলেন, আমাদের দৈনন্দিন পণ্যে এত উচ্চমাত্রায় এ বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার দেখে আমি অনেক উদ্বিগ্ন। এগুলো নীরবে আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে যাচ্ছে এবং আমাদের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

এসডোর টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ও সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার অ্যান্ড প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসের ডিরেক্টর ড. হাসনাত এম. আলমগীর মনে করেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ভোক্তাদের পণ্যে প্যারাবেন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে নীতিনির্ধারকদের আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন।

এনএইচ/বিএ/এমআইএইচএস/এমএস