আইন-আদালত

কোনো রাজনীতিক আপনার মতো বক্তব্য দেননি: নুরকে হাইকোর্ট

বিচারকদের নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যের কারণে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে আনা আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয়ে হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন নুর। কিন্তু তার ক্ষমা প্রার্থনা যথাযথভাবে না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

Advertisement

সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে আগামী ৬ মার্চ পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করা হয়। এর মধ্যে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন এফিডেভিট আকারে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে শুনানির নির্ধারিত দিনে বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে এদিন ভিপি নুরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ। রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।

Advertisement

এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি বিচারকদের নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যের কারণে নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে আনা আদালত অবমাননার অভিযোগের ব্যাখ্যা ও রুলের শুনানির জন্য ১৫ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেন হাইকোর্ট। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সেটি শুনানি হয়।

তবে, আজ বিচারকদের নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যের কারণে আদালত অবমাননার ঘটনায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ক্ষমা চেয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট হননি হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, নুরুল হক নুর লিখিত ব্যাখ্যায় ভবিষ্যতে আদালত অবমাননামূলক বক্তব্য না দেওয়ার বিষয়ে কোনো অঙ্গীকার করেননি।

আদালত বলেন, ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে জুডিশিয়ারির মর্যাদা রক্ষায় যে আদেশ দেওয়া দরকার উচ্চ আদালত সেই আদেশ দেবেন। এর আগে সকালে হাইকোর্টে হাজির হন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর। তার পক্ষে আদালতে লিখিত ব্যাখ্যা পড়ে শোনান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী।

লিখিত ব্যাখ্যায় নুরুল হক নুর আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তার পক্ষে আইনজীবী বলেন, তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিচারপতিদের নিয়ে বক্তব্য দেননি। সেদিনের বক্তব্যের জন্য আদালতের কাছে নুর নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।

Advertisement

এসময় হাইকোর্ট প্রশ্ন রেখে বলেন, তার বক্তবব্যের কারণে বিচার বিভাগের যে ক্ষতি হয়েছে, বিচার বিভাগের যে মর্যাদা নষ্ট হয়েছে তার কী হবে? আইনজীবী বলেন, বিচার বিভাগের মর্যাদা অনেক ওপরে। কারও বক্তব্যে এত সহজে বিচার বিভাগের মর্যাদা নষ্ট হয় না।

এসময় হাইকোর্ট সাবেক ভিপি নূরকে ডায়াসের কাছে ডাকেন। তাকে উদ্দেশ্যে করে হাইকোর্ট বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যর অক্সেফোর্ড বলা হয়। আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। ডাকসুর ভিপি ছিলেন। এখন রাজনীতি করেন। কিন্তু আপনি আদালতকে নিয়ে, বিচারপতিদের নিয়ে যে আদালত অবমাননামূলক বক্তব্য দিয়েছেন এ রকম বক্তব্য পৃথিবীর কোনো রাজনীতিক আজ পর্যন্ত দেননি। আপনি দেখাতে পারবেন না। আদালত বলেন, আপনার যে ইমেজ, যে ক্যারিয়ার তার সঙ্গে আপনার বক্তব্য যায় না।

এসময় নুরুল হক নুর বলেন, তখন পরিস্থিতি এমন ছিল যে সরকারেরবিরোধী সবাইকে আদালত কারাগারে পাঠাচ্ছিলেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। সেই ক্ষোভের কথা গুলো বলেছি।

তখন হাইকোর্ট বলেন, আপনি রাজনৗীতি করেন, অথচ এতটুকু জ্ঞান নেই যে আদালত কোনো ব্যক্তিকে জেলে পাঠাতে পারে না।

হাইকোর্ট বলেন, পৃথিবীর বিখ্যাত রাজনীতিকদের জীবনী পড়ে দেখেন, নেতার কাজ কর্মীদের উসকানো না। আদালত মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। রাষ্ট্রপতি ছাড়া কেউ আদালতেরও আওতার বাইরে না।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান বলেন, নুরুল হক নুর বিচারপতিদের নিয়ে উদ্ধর্তপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি এত সাহস পান কোথায়? তিনি আজ যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেখানেও তার বক্তব্যর জন্য অনুতপ্ত হননি, অনুশোচনা করেননি।

এরপর আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেন, যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন এ ব্যাখ্যায় আমরা সন্তুষ্ট নয়। তখন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা নতুন করে ব্যাখ্যা দাখিল করবো। এ জন্য সময় প্রয়োজন। আদালত এ মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৬ মার্চ দিন ধার্য করে বলেন, আদালত বলেন, নতুন করে আবেদন দিতে চাচ্ছেন সেটা দেন। ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে জুডিশিয়ারির মর্যাদা রক্ষায় আমরা যা করার তাই করবো।

এর আগে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর বিচারকদের নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যের কারণে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হককে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। তাকে আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন আদালত।

ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে নুরুল হক নুরের বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিজয়নগর পানির ট্যাংক মোড়ে এক সমাবেশে আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে নুরুল হক নুর আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। সেই প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনা হয়।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কালীপদ মৃধা জানান, হাইকোর্ট নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল দিয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে তাকে আদালতে তলব করেন।

এফএইচ/এমআইএইচএস/এমএস