বৃহস্পতিবার সকাল হতে না হতেই একটি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে গরম খবর, এক ক্যারিবীয় ক্রিকেটারের সঙ্গে হোটেল রুমে হাতাহাতি হয়েছে। একটি মিডিয়ায় এসেছিল শুধু ঘটনাটি। অন্য কোনো মিডিয়া রিপোর্ট করছিল না, নিশ্চিত হতে পারছিল না বলে।
Advertisement
সবাই অপেক্ষায় ছিল, দুপুর ১টার দিকে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুশীলন করতে আসার কথা রংপুর রাইডার্সের। তখন দলটির দায়িত্বশীল কারও কাছ থেকে হয়তো ঘটনার পুরোপুরি চিত্র পাওয়া যাবে কিংবা এ নিয়ে তাদের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানা যাবে।
দুপুর ১টায় অনুশীলন শুরু হওয়ার পর মাঠেই এ নিয়ে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেন রংপুর রাইডার্সের ম্যানেজার শানিয়ান তানিম। তিনি নুরুল হাসান সোহান এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ক্যারিবীয় ক্রিকেটারের মধ্যে কোনো ধরনের হাতাহাতি বা ধাক্কাধাক্কি হয়নি বলেই নিশ্চিত করেন।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সেই ক্যারিবীয় ক্রিকেটার খুব সম্ভবত উইলিয়াম ফোর্ড। শানিয়ান তানিম ফোর্ডের নাম একবার উচ্চারণও করেন। তবে, তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, নুরুল হাসান সোহানের সঙ্গে সেই ক্যারিবীয় ক্রিকেটারের বড় ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। দুই দেশের কথা বলার সংস্কৃতি ভিন্ন। এ কারণে তাদের মধ্যে যে কথা হয়েছে, সেটাকে ভিন্ন শোনা গেছে এবং ওটাকেই কথা কাটাকাটি মনে করা হয়েছে।
Advertisement
শানিয়ান তানিম দাবি করেন, যে ঘটনার কথা বলা হচ্ছে ওই সময় তিনি নিজেই সামনে ছিলেন এবং দলীয় ম্যানেজার হিসেবে সেটা সামাল দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, নুরুল হাসান সোহান এবং সেই ক্যারিবীয় ক্রিকেটারের (উইলিয়াম ফোর্ড) শরীরে যে শক্তি, দু’জনের মধ্যে যদি ধাক্কাধাক্কি বা কথা কাটাকাটি হতো, তাহলে যে কোনো একজনকে হাসপাতালে থাকতে হতো।
শানিয়ান তামিমের কাছে জিজ্ঞাসা করা হয়, প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা গেছে, দুই ক্রিকেটারের মধ্যে নাকি ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতি হয়েছে। আসলে এমন কিছু ঘটেছে নাকি? তিনি বলেন, ‘এমন কিছুই হয়নি। দু’জনের নিজেদের কালচারের কারণে হয়তো কথা বলার ধরনটা ভিন্ন ছিল। কিন্তু হাতাহাতি হলো তো- ওদের দু’জনের যে পরিমাণে শক্তি, তাহলে কেউ না কেউ হাসপাতালে থাকতো। তাহলে আপনাদের হয়তো হাসপাতালেই যেতে হতো রিপোর্ট করার জন্য।’
তাহলে মূলত ওই সময় ওখানে সোহান এবং ক্যারিবীয় ক্রিকেটারের মধ্যে কী ঘটেছিলো? আপনি নিজে যেহেতু দাবি করছেন, তখন সামনে ছিলেন। শানিয়ান তানিম বলেন, ‘ডিটেইলসটা যদি জানতে চান, তাহলে ঘটনাটা এটাই হয়েছে যে, আমাদের কালচার আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ বলেন, ইউরোপ কিংবা ব্রিটিশ কালচার বলেন, এক নয়। ওদের কথার ধরন একরকম, আমাদের কথার ধরন আরেকরকম। ’
‘সোহান আমার রুমে আসতে চাচ্ছিলো, সে কারণে সে রুম খুঁজছিলো। তখন অন্য পাশ থেকে হয়তো ওই খেলোয়াড়টা তাকে (সোহানকে মজা করার উদ্দেশ্যে) ভিন্ন কোনো কথা বলেছিলো। আবার সে অন্য দলের খেলোয়াড়, এটাও একটা ভিন্ন ব্যাপার ছিল। আমরা সেখানে চারজন-পাঁচজন ছিলাম, সবাই এটা নিয়ে মজা করেছে। মজা করার পর ওই খেলোয়াড় তার রুমে চলে গেছে, সোহান আমার রুমে চলে এসেছে। আর আমার কাছে মনে হয়, এটা খুবই অপ্রয়োজনীয় একটি বিষয়, নিউজ করার মত নয়। কারণ, এই মুহূর্তে টুর্নামেন্টের পিক সময়। সবাই সবার পারফরম্যান্সের ওপর মনোযোগী হওয়া উচিত।’
Advertisement
আরও এক প্রশ্নের জবাবে শানিয়ান তানিম বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে যে, এটা খুবই অপ্রয়োজনীয় একটা বিষয়, যেটা বাইরে ছড়িয়েছে। এটা কোনোভাবেই ছড়ানো ঠিক হয়নি। এটা খুবই পরিষ্কার যে, অন্য দলের সব ক্রিকেটারের সঙ্গেই আমাদের সম্পর্ক ভালো। আমার কাছে মনে হয়েছে, ফোর্ড (উইলিয়াম) হোক বা অন্য যে কোনো খেলোয়াড়ই হোক, তিনি যে দলেরই হোন না কেন, আমাদের সবার দায়িত্ব তাকে সুরক্ষা দেয়া। কারণ, সে শুধু বিদেশি একজন ক্রিকেটারই নন, তিনি আমাদের এখানে অতিথি।’
‘আমি জানি, সোহানের সঙ্গে এমন কিছু হয়নি, যতটা ছড়ানো হয়েছে, ততটা মোটেই নয়। মিডিয়াতে আসার মতো কোনো ঘটনাই নয় এটা। আমরা ৫টা দল হোটেল শেয়ার করছি। সব ক্রিকেটারের মধ্যেই মজা-ঠাট্টা হয়। এমনকি আমরা একই ফ্লোরও শেয়ার করি। সুতরাং, একটা খেলোয়াড় এদিক থেকে ওদিকে যায়, এ একটা কথা বলে, ও একটা কথা বলে। কিন্তু যেসব কথা বলা হচ্ছে যে, রুমের ভিতরে ঢুকে মারামারি করা হয়েছে বা হাতাহাতি হয়েছে- সত্যি বলছি, আমি একদম ওই জায়গায়ই ছিলাম, এমন কোনো কিছুই হয়নি।’
তাহলে এ ঘটনা বাইরে আসলো কিভাবে? এ ঘটনা তো কুমিল্লা বা রংপুরের কেউ বাইরে দেয়নি? তাহলে যারা সিকিউরিটির সঙ্গে জড়িত, নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা সত্যতাও স্বীকার করেছে। এ বিষয়গুলো ক্রিকেট বোর্ডকে জানাবেন কিনা?
শানিয়ান তানিম বলেন, ‘প্রথমত এমন কিছু হয়নি যে, যেটা সামলানো সম্ভব না। তবুও, আমরা দুই ম্যানেজার মিলে বিষয়টাকে মিটমাট করে দিয়েছি। ৫ মিনিটের মধ্যেই সব সমাধান হয়ে গেছে। ওই খেলোয়াড় চলে গেছে তার রুমে, সোহান চলে এসেছে। আমরা বিষয়টাকে খুব সহজেই সমাধান করে দিয়ে চলে গিয়েছি। আমাদের প্রতিদিন ব্রেকফাস্টে দেখা হচ্ছে, কথা হচ্ছে। কিন্তু এটা সত্যি, বিষয়টা মিডিয়াতে যাওয়া খুবই অপ্রয়োজনীয় ছিল। আমরা জেনেছি, এ বিষয়ে বিসিবিতে রিপোর্ট গেছে। এটা আসলে বিসিবিতে রিপোর্ট করার মতো কাজই না। যারাই রিপোর্ট করুক, এটা তাদের কাজও ছিল না। তবুও মিডিয়াকে রিকোয়েস্ট করবো, যেন আমাদের খেলোয়াড়ই নয় শুধু, তারা যেন আমাদের অতিথি খেলোয়াড়দেরও প্রটেক্ট করেন।’
কালচারের কথা বলছিলেন, যে কারণে কথার ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে; কিন্তু সেখানে কী বাংলাদেশকে নিয়ে কোনো কটু কথা হয়েছে? শানিয়ান তানিম বলেন, ‘অ্যাবসুলেটলি নট। এখানে যারাই আসে, ইংলিশ খেলোয়াড় আসে, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়রা আসে- এরা সবাই এখানে খেলতে উপভোগ করে। বিপিএলকে ভালোবাসে তারা। তারা এখানে অনেক বেশি সম্মান পায়। অন্য কোথাও এই সম্মান পায় বলে আমার মনে হয় না। আমি ২০১৭ সাল থেকে দেখছি, কোনো ইন্টারন্যাশনাল প্লেয়ার কোনো সময় কিন্তু বাংলাদেশকে নিয়ে ছোট করে কোনো মন্তব্য করেনি।’
আইএইচএস/এমএমআর/জিকেএস