বিশ্বব্যাপী ভালোবাসা দিবস পালিত হয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। আমাদের দেশে এ দিবসটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঋতুরাজ বসন্তের শুরুর মাস পহেলা ফাল্গুনের উৎসব। এমন আনন্দময় দিন পার করে আজ (১৫ ফ্রেব্রুয়ারি) স্ত্রীর কাছে খোলাচিঠি লিখেছেন অভিনেতা-নির্মাতা আফজাল হোসেন।
Advertisement
ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুনের বিশেষ সময় পার করে পরদিন কেন আফজাল তার স্ত্রীকে এমন খোলাচিঠি লিখেছেন-এমন প্রশ্ন সংগত কারণেই সবার মনে উদয় হতে পারে। এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর তার চিঠিতে দেননি। তবে পুরো চিঠি পাঠ করলে মিলবে এর জবাব।
আরও পড়ুন: আরও কাজ করে যেতে চাই: আফজাল হোসেন
আফজাল হোসেন তার চিঠির শুরুতে লিখেছেন, ‘কিছু কিছু প্রশ্নের স্বভাবই হচ্ছে, হঠাৎ হঠাৎ তিমি মাছের মতো ভুশ করে পানির উপর পিঠ ভাসিয়ে দেওয়া। বসন্ত এসে গেছে। রাস্তাভরা ফাগুনের রং লাগা মানুষ দেখি। বাতাসে আনন্দের গন্ধ। কলকাতা আজ অন্যরকম। সুখী সুন্দর মানুষেরা ঝলমলাচ্ছে যেনো। মনে একটা পুরানো প্রশ্ন জাগে। মনার (আফজাল হোসেনের স্ত্রী) প্রতি জন্মদিনেও এই প্রশ্নটা তিমি মাছের পিঠ দেখানোর মতো ভুশ করে জেগে ওঠে। আমি স্বামী হিসেবে কেমন? উত্তরটা ভালো কিংবা মন্দ নয়- ভাবায়। উন্নত স্বামী হওয়ার উপাদান আমার মধ্যে কম সেটা বুঝি। উপযুক্ত স্বামী হয়ে ওঠার জন্য কেমন কেমন গুণ থাকতে হয় জানলে- গুণে মানে অনন্য একখান স্বামী হয়ে ওঠার উদ্যোগ কি গ্রহণ করতাম? সোজাসাপ্টা উত্তর হচ্ছে- না।’
Advertisement
আরও পড়ুন: ৩৫ নায়িকার সঙ্গে আফজাল হোসেন
নিজের কথা বলতে গিয়ে আফজাল লিখেছেন, ‘আমি সৃষ্টিকর্তার সুনজরে থাকা মানুষ, তিনি কপালে লিখে দিয়েছেন, এই বান্দা চিরকাল তাইরে নাইরে জীবন কাটাইতে চায়, তাহা মঞ্জুর করা হইলো। তারপর তিনি জোড়া বানানোর জন্য খাতা খুলে তালিকা দেখেন। খুঁজতে থাকেন বিপরীত পক্ষের অশেষ সহনশীল, ঠান্ডা মাথার, অতি গোছালো, কম কথা বলা, প্রেমময় কিন্তু মনে খুব জোর অলা কাকে পাওয়া যায়! তখনই পাওয়া যায়নি। অতপর ঐসব উপাদানে সমৃদ্ধ একজনকে সৃষ্টি করার প্রয়োজন অনুভব করিলেন। সৃজন শেষ হইলে দেখিলেন পুরুষটি উত্তরের হইলে নারী রত্নটি দক্ষিণের- শুধু ধরনে নয়, দুইজনের বয়সের মধ্যেও বিস্তর তফাৎ হইয়া গিয়াছে ‘
নারী সম্পর্কে সরসভাষায় আফজাল হোসেন লিখেছেন, ‘সৃষ্টিকর্তা ভাবিলেন, হউক। নারী রত্নটিকে অনেক গুণসমৃদ্ধ করিয়া প্রস্তুত করা হইয়াছে, সমস্যা হইবে না। সমস্যা হয়নি। বত্রিশ বছরে আমার অস্থিরতা কমেছে, হঠাৎ মাথা গরম হওয়া কমেছে, ঠান্ডা মাথায় ভাববার অভ্যাস তৈরি হয়েছে। অনেক অনেক কিছু বিনা চেষ্টায় এইরকম ভালোর দিকে বদলে গেছে। অগোছালো স্বভাবটার কোনোই উন্নতি হয়নি। হয়নি বলেই অপরপক্ষের ঠান্ডা মাথা প্রায়ই গরম হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। ভাগ্যিস হয়। হয় বলেই বোঝা যায়, সংসারে প্রাণ আছে।’
বিবাহত জীবন নিয়ে আফজালের ভাষ্য, ‘কত মানুষকে বলতে শুনি, অবিবাহিত থেকে বিবাহিত হওয়া, শুধু অ এর পার্থক্য নয়- জীবন বদলাতে হয়। ঘরে আমরা প্রায়ই মিনতির সুরে গাওয়া আমাকে আমার মতো থাকতে দাও… গানটা শুনি। শচীন দেব বর্মনের তুমি আর নেই সে তুমিও বাজে। এগুলো মনের কথার প্রতিধ্বনি নয়, আমাদের প্রিয় গান। প্রিয় বলেই বারবার শুনতে ভালো লাগে। বিবাহিত জীবন নিয়ে কত মানুষের বিচিত্র রকমের হাঁসফাঁস রয়েছে। আমার বা মনার হাস নেই, ফাঁসও নেই। সে তার মতো, আমি আমার মতো। কেউ কখনোই কারও ঘাড়ে চড়ে বসতে চাইনি।’ সংসার জীবনের দীর্ঘযাত্রার কথা নিয়ে আফজাল লেখেন, ‘বত্রিশ বছর ধরে আমাদের ঘাড় স্বাধীন। বত্রিশ বছর ধরে সে আমাকে বিশেষ কোনো পরিচয়ের নয়, মানুষ বিবেচনা করে- এ দুয়ের চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে! রোজ ঘরে ঘরে ঘুরঘুর করুক ফাগুনের রং, বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস।’
Advertisement
এমএমএফ/জিকেএস