অন্তর আত্মা, যেটি জাগ্রত অবিরাম। এর সঠিক দিক্ষাই একজন মানুষকে মানুষ করে তোলে। আবার এ অন্তর আত্মা যদি মানুষকে সঠিক দিক্ষা দিতে না পারে তাহলে বিপথের যাত্রী হয়ে যায় সেই মানুষ। সকল প্রাণির মধ্যে একমাত্র মানবকূলেরই এ শক্তি রয়েছে। স্রষ্টা প্রদত্ত এ আত্মাই মানুষকে ভাবাতে শেখায়। শেখায় ভালো মন্দের বিচার, অন্ধকার আর আলোর ব্যবধান। যা অনৈতিক সব কর্মকাণ্ড ত্যাগে মানুষের সহায়ক শক্তি। আর এ অন্তর আত্মাকেই জাগাতে হবে। দেখাতে হবে ‘এটি ঠিক নয়, ওটা ঠিক’। যা প্রচলিত সব কিছুর ঊর্ধ্বে নিয়ে যায় মানুষকে। সে অন্তর আত্মাকে জাগ্রত করতেই বিশ্বকবি লিখেছেন- “অন্তর মম বিকশিত করো, অন্তরতর হে।” বিশ্বকবির এ উক্তিটিকেই এবার বাংলা ১৪২৩ নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।মানব মনে সচেতনতা জাগ্রত করতে প্রতি নববর্ষেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদ থেকে বের হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রার একটি প্রতিপাদ্য থাকে। যেটি হয়ে থাকে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে। অনিয়ম থেকে মানুষকে বের করে আনতে নববর্ষের প্রথম দিনেই বার্তা দিয়ে থাকে এ প্রতিপাদ্যটি। এবারের প্রতিপাদ্যটিও এর ব্যতিক্রম নয়।প্রতিপাদ্যটিতে অন্তরযামিকে বলছে, ‘তুমি জাগ্রত হও। খোল তোমার সচেতন বিবেক।’ মূলত সম্প্রতি সময়ে দেশে চলমান শিশু হত্যাসহ বেশ কিছু ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঞ্চিয়িতা কাব্যগ্রন্থ থেকে এটি গৃহিত। প্রতিপাদ্যটি শিক্ষা, প্রচলিত যে কোনো আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্র অনিয়ম বন্ধ করতে যতটুকু সফলতা অর্জন করে, তার চেয়ে বেশি সফলতা অর্জন করা যায় প্রত্যেক হৃদয়ের আত্মশুদ্ধি দিয়ে। কারণ মানুষ যখন তার সচেতন হৃদয় দিয়ে কোনো কিছুর উপলব্ধি করতে পারবে, তখন সমাজ থেকে সব কুলষিত উঠে যাবে। চারুকলা অনুষদের ডিন ও মঙ্গল শোভাযাত্রা উদযাপন উপ-কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক নিসার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, “মানুষের অন্তর আত্মাকে যদি জাগ্রত করতে না পারে তাহলে কোনোভাবেই সমাজ থেকে অনিয়মগুলো মুছে ফেলা সম্ভব নয়। সে জন্য আমাদের অন্তর আত্মাকেই জাগ্রত করতে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার এ প্রতিপাদ্য।”তিনি আরো বলেন, “এছাড়া, বর্তমান সমেয় মা ও সন্তানের সম্পর্কটা ফিকে হয়ে পড়ছে বলে মনে হয়। সে জন্য এবারের শোভাযাত্রায় মায়ের হাতে সন্তান যে নিরাপদ সেটিই দেখানো হবে। পাশাপাশি সারাদেশে ক্রমাগত শিশু নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। আমাদের চারপাশের এসব বিষয়কে সামনে রেখেই এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে পরিবেশ রক্ষায়ও দিক্ষা দেয়া হবে।”এমএইচ/আরএস/এএইচ/এবিএস
Advertisement