দেশজুড়ে

সুবর্ণচরে ইটভাটায় দেদারছে পুড়ছে কাঠ, নীরব প্রশাসন

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় ইটভাটাগুলোতে ভ্রাম্যমাণ করাতকল স্থাপন করে বাংলা চুল্লিতে দেদারছে বনের কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এসব ইটভাটা শত শত গাছ কেটে পরিবেশের ক্ষতিসহ প্রকাশ্যে ফসলি জমির মাটি লুটে নিলেও স্থানীয় প্রশাসনের নির্লিপ্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুবর্ণচর উপজেলায় মোট ১৭টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে নয়টির অবস্থান চর আমানউল্যাহ ইউনিয়নে। এখানে উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রহমানের মালিকানাধীন একতা ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং (এবিএম), সাধারণ সম্পাদক বাবলু চন্দ্র কাহারের সুভাষ ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং (এসবিএম) ও মো. আহসান উল্যাহ হাছানের মালিকানাধীন সততা ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে করাতকল স্থাপন করে গাছ পোড়াতে দেখা গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটাগুলো বনের কাঠ ধ্বংসের পাশাপাশি ফসলি জমির মাটি লুটে নিচ্ছে। এসব দেখেও প্রশাসনের কর্মকর্তারা না দেখার ভান করছেন। এছাড়া ঘনবসতি এলাকায় স্থাপিত এসব ইটভাটার ধোঁয়ায় আশপাশের বাড়িঘরে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। বাগানের গাছপালা শুকিয়ে যাচ্ছে। খেতের ফসল জ্বলে যাচ্ছে। পরিবেশ ও কৃষির এমন ক্ষতিতে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জাগো নিউজকে বলেন, স্থানীয় মাস্তানদের ব্যবহার করে ইটভাটার মালিকরা ইচ্ছামতো দাম দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ বাধা দিলে তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়। ইট পোড়ানোর ধোঁয়ায় অনেকে নানা রোগে আক্রান্ত হলেও এর প্রতিকারে কেউ এগিয়ে আসছে না।

Advertisement

সরেজমিনে জানা গেছে, এসব ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তরের হালনাগাদ ছাড়পত্র না নিয়ে এবং বনবিভাগের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হচ্ছেন মালিকরা। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ভাড়াটে মাস্তান দিয়ে এসব ইটভাটা পরিচালনা করছেন তারা।

সুভাষ ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে (এসবিএম) গিয়ে দেখা যায়, ভাটার চারপাশে শত শত মণ (এক মণে ৪০ সের) গাছের টুকরা এনে রাখা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ করাতকল দিয়ে তা টুকরো করে ড্রাম চিমনীতে (বাংলা) ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে প্রচণ্ড কালো ধোঁয়ায় আশপাশের এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। প্রতিবেদকের উপস্থিতিতেই বেশ কয়েকটি পাওয়ার টিলারে গাছ এনে মজুত করা হয়।

এসবিএম’র মালিক সুভাষ চন্দ্র সাহা জাগো নিউজকে বলেন, উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবলু চন্দ্র কাহার আমার ব্যবসায়ীক অংশীদার। আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে ব্যবসা করে আসছি।

কিন্তু দেখাতে বললে তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরের ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর মেয়াদোত্তীর্ণ একটি ছাড়পত্র দেখান।

Advertisement

এর পাশেই উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রহমানের মালিকানাধীন একতা ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং (এবিএম)। সেখানেও করাতকলে গাছ টুকরো করে জ্বালোনো হচ্ছে। তবে খোঁজ করে সভাপতি আবদুর রহমানকে পাওয়া যায়নি। পরে বার বার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী জাগো নিউজকে বলেন, কয়লার দাম বেশি হওয়ায় এখানকার সবাই শুরু থেকে গাছ দিয়ে ইট পোড়াচ্ছেন। প্রশাসনও বিষয়টি অবগত। মালিকরা সমিতির মাধ্যমে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর, সাংবাদিক ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাসোহারা দিয়ে ম্যানেজ করে ইটভাটা চালিয়ে আসছেন।

চর আমানউল্যাহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এসব বিষয়ে আমরা বার বার অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। আমার ইউনিয়নের বাসিন্দারা খুব কষ্টে আছেন। এর প্রতিকার হওয়া দরকার।

উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবলু চন্দ্র কাহার সুভাষ ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং (এসবিএম) তার মালিকানায় চলছে বলে নিশ্চিত করেন। কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, কয়লা সঙ্কট থাকায় আগুন জ্বালাতে কাঠের ব্যবহার করা হয়। তবে আস্তে আস্তে কাঠ পোড়ানো কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি আমরা।

সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আল-আমিন সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ করাতকল ব্যবহারসহ কাঠ পোড়ানোর অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে বনবিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালালে আমরা সহযোগিতা করবো।

নোয়াখালী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিহির লাল সরদার জাগো নিউজকে বলেন, ইটভাটাগুলোতে আমাদের অভিযান চলছে। ভবিষ্যতেও অভিযান অব্যাহত থাকবে।

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু ইউসুফ জাগো নিউজকে বলেন, ভ্রাম্যমাণ করাতকল এ প্রথম দেখলাম। এ বিষয়ে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, অভিযোগের বিষয়ে বনবিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এফএ/এএসএম