মতামত

মিয়ানমারের সেনারা কেন বাংলাদেশে ঠাঁই পাবে?

মিয়ানমার নামক দেশটির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ এলাকায় গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। ক্ষমতাসীনদের হাতছাড়া হয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। ২০২১ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চির নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে। ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষে দিকে, মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে। এই দলগুলো হলো তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (TNLA), আরাকান আর্মি (AA) এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (MNDAA)।

Advertisement

এরা শান, রাখাইন, চীন ও কায়া রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। বিদ্রোহীরা সফলভাবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও সেনা পোস্ট দখল করে নিয়েছে। সেনাবাহিনী এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে এবং যুদ্ধ শুরুর পর মিয়ানমার থেকে সবচেয়ে বেশি সামরিক ও বেসামরিক জনগোষ্ঠীর আগমন ঘটেছে বাংলাদেশে। তবে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে তাতমাদোর নিয়ন্ত্রণ এখনো নিরঙ্কুশ। মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের প্রভাব এখন বাংলাদেশকে ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ জানুয়ারির (২০২৪) মধ্যভাগ থেকে পার্শ্ববর্তী রাখাইন প্রদেশে আরাকান আর্মি ও বার্মিজ সামরিক জান্তা বাহিনীর মধ্যে চলে আসা সংঘর্ষে অদ্যাবধি প্রায় ৩৫০ জন জান্তা বাহিনীর সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে এসে সীমান্তবর্তী তমব্রু অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে। পালিয়ে আসা এই জান্তা সদস্যদের মধ্যে মূলত বার্মিজ সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বা বিজিপির সদস্যই সর্বাধিক।

অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এই বিজিপি বাহিনীর নেতৃত্বসহ পুরো বাহিনীটাই বার্মিজ জান্তা দ্বারা পরিচালিত। জান্তা বাহিনীর সদস্যদের এদেশে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে চলছে নানা তর্ক-বিতর্ক। ২০১৭ সালের ২৪ ও ২৫ আগস্টে বার্মিজ সামরিক জান্তা বাহিনী এবং বিজিপি বাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে অংশ নিয়েছিল রোহিঙ্গা নিধনে। ফলে এখনো বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসে আছে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা।

২০২১ সাল থেকে আজ অবধি (২০২৪) মিয়ানমার সেনাবাহিনী তার শাসনের বিরোধিতাকারী লক্ষাধিক লোকের ওপর দেশব্যাপী নৃশংস দমন-পীড়ন চালিয়েছে। জান্তা নিরাপত্তা বাহিনী গণহত্যা, নির্বিচারে গ্রেফতার, নির্যাতন, যৌন সহিংসতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, যা মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য। এজন্য জান্তা বাহিনীর সদস্যদের আশ্রয় দেওয়ার আগে ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করতে পারলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সহজ হতে পারে।

Advertisement

পালিয়ে আসা এই সদস্যদের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে সেসব ব্যক্তি যারা অংশ নিয়েছিল আগস্ট ২০১৭-এর রোহিঙ্গা নিধনে অথবা তারা জানে কারা অংশ নিয়েছিল ওই গণহত্যায়, তাদের নাম-পরিচয় কি? এদের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার গুপ্তচর যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন কাজ করে আসছে। এজন্য পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সামরিক সদস্যদের নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের গভীরভাবে ভাবনার অবকাশ আছে। বের করা দরকার রোহিঙ্গা নিধনে অংশগ্রহণকারীদের।

সামরিক বার্মিজ জান্তা সরকারের সঙ্গে সমঝোতা না করে বরং সরকারের উচিত হবে পালিয়ে আসা বার্মিজ সেনা সদস্যদের পরিচয় নিশ্চিত করা। ২০১৭ সালের ২৪ ও ২৫ আগস্টে তাদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা। তারপর কেবল ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করা। উপরন্তু বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনে এই বিষয়ে জাতিসংঘ অথবা আইসিজে বা আইসিসি এর সহায়তাও চাইতে পারে। লেখক ও গবেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. বায়েজিদ সরোয়ার লিখেছেন- ‘‘দক্ষিণ-পূর্ব কোণ থেকে ঝড় ধেয়ে আসছে দেখে সতর্কতা ও প্রস্তুতি প্রয়োজন। বলা হয়, মিয়ানমার একটি খোলা বই, যা বাঙালি খুব কমই পাঠ করেছে।

গত ৫০ বছরে বিভিন্ন সময়, আরাকান তথা মিয়ানমারে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক-সামরিক ঘটনার বিস্ফোরণের আগে (যেমন রোহিঙ্গা ঢল) আমরা তেমনটা বুঝতে পারিনি। তাই প্রতিবেশী মিয়ানমারের ঘরের ভেতরের পরিস্থিতি সম্পর্কে সরেজমিনে খোঁজখবর বাড়ানো প্রয়োজন। জান্তা বাহিনীর ‘গ্লাস প্যালেস বা কাচের প্রাসাদ’ কিন্তু ভেঙে পড়ছে। ‘বার্মার ট্রেন’ এবারও মিস করলে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে সামনে আরও বিপদে পড়তে পারে বাংলাদেশ।’

আরাকান আর্মি রাখাইন জাতিগত সংখ্যালঘুদের সামরিক শাখা যারা মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে স্বায়ত্তশাসন চায়। নভেম্বর থেকে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যে সেনা চৌকিতে হামলা চালাচ্ছে। তার আগে অক্টোবরে আক্রমণ শুরু করে এবং চীনের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের উত্তর-পূর্বে কৌশলগত অঞ্চল লাভ করে। সেই সাফল্য সামরিক সরকারের জন্য একটি বড় পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। আগেই বলেছি, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে জান্তা সরকার ক্ষমতা দখল করেছিল আর এখন একটি বিস্তৃত গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীনরা।

Advertisement

অন্যদিকে মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মো. শামসুদ্দীন লিখেছেন- ‘‘বাংলাদেশের ঘুমধুম সীমান্তের শূন্যরেখার কাছে থাকা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) প্রায় সব কটি ক্যাম্প বিদ্রোহী গোষ্ঠী দখল করে নিয়েছে এবং বাকি কয়েকটি দখলের চেষ্টা চলছে। আরাকান আর্মি ২৮ জানুয়ারি রাখাইন রাজ্যের মিনবিয়া শহরে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ৩৮০ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তর দখলে নিয়েছে। আরাকান আর্মি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, জান্তার এ এ’র সঙ্গে লড়াই করার সামর্থ্য নেই। তারা এখন আর্টিলারি ও মর্টার হামলার পাশাপাশি বিমান হামলা চালাচ্ছে। জান্তার ক্ষমতা দখলের তৃতীয় বার্ষিকী সামনে রেখে মিয়ানমার সেনাবাহিনী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান শুরু করেছে। জান্তা একযোগে বিমান, নৌ এবং স্থল অভিযান চালানোর পর ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটছে।’

প্রকৃতপক্ষে ‘‘মিয়ানমারে সামরিক জান্তার সঙ্গে আরাকান আর্মির চলমান সংঘর্ষে নতুন মাত্রা লাভ করেছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনের রামরি শহরে বোমারু বিমান দিয়ে এ এ’র ওপর হামলা চালায় রাখাইনের বুচিডং ও ফুমালিতে রোহিঙ্গা–অধ্যুষিত এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের কারণে রোহিঙ্গারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। সংঘর্ষ চলাকালীন অনেক সময় রোহিঙ্গাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে।

রাখাইনের চলমান সংঘর্ষে রোহিঙ্গাদের বসতিতে নিয়মিত অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে বলে জানা যায়। এ এ’র সদস্যরা রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছে এমন সন্দেহ থেকে হেলিকপ্টারে অনবরত গুলিবর্ষণ করা হচ্ছে। সীমান্তের এপারের জনগোষ্ঠীর মধ্যেও রাখাইনে এ এ ও সেনাবাহিনীর সাথে চলমান যুদ্ধের প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশের ভেতরে গুলি এসে পড়ছে এবং সীমান্ত এলাকায় গোলাগুলির আওয়াজে স্থানীয়রা আতংকে রয়েছে। ২৭ থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমার দিক থেকে ফায়ার করা বেশ কিছু মর্টার শেল ও গুলি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়েছে। এতে সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সময় কাটাচ্ছে।’

গৃহযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিত বর্ণনা করে লেখক ও গবেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. বায়েজিদ সরোয়ার মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ-ভেঙে পড়ছে ‘কাচের প্রাসাদ’’নিবন্ধে লিখেছেন- ‘দীর্ঘ সময় ধরে কারেন, কাচিন, কায়াহ, মন, শান, রাখাইন ও চিন প্রদেশে অসংখ্য জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী মিয়ানমার কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারির পর থেকে গৃহযুদ্ধ নতুন পর্যায়ে মোড় নিয়েছে। ২০২১ সালেই জান্তা সরকারের নৃশংস দমনমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য দল-মত নির্বিশেষে সরকারবিরোধী ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ ঐক্যের মধ্য থেকেই অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন এনএলডি নেতারা সমান্তরালভাবে জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি) গঠন করে। তারা ২০২১ সালে ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্স’ গড়ে তোলে, যা মূলত বামারদের নিয়ে গঠিত। ২০২৩-এর অক্টোবরের শেষ ভাগে জাতিগত সংখ্যালঘু তিনটি গোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠন নিয়ে ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ নামে জোট গঠন করে ২৭ অক্টোবর জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত অভিযান শুরু করে। তাদের এ অভিযান শুরুর দিন স্মরণীয় করে রাখতে নামকরণ করা হয় ‘অপারেশন ১০২৭’।’

উপরের উদ্ধৃতি থেকে স্পষ্ট যে, মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় হুমকি রাখাইন থেকেই এসেছে। এসব নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে ও ব্যবস্থা নিতে হবে। ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল’ গঠন, ‘আরাকান আর্মি’ ও ‘এনইউজি’ সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ করা জরুরি। মিডিয়ায় মিয়ানমারের বিষয়গুলো যথাযথ বিশ্লেষণেও তুলে ধরতে হবে।

মনে রাখতে হবে, প্রথমবারের মতো একটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াইয়ের সময় মিয়ানমারের বাহিনী বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। তারা প্রধানত এসেছে আরাকান রাজ্য হয়ে। কক্সবাজার এবং বান্দরবান জেলা আবারও ঝুঁকিতে পড়েছে। যদিও বলা হচ্ছে, ‘তাদের নিরস্ত্র করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সীমান্তের ওপারে উত্তেজনা মোকাবিলায় সামরিক ও আধাসামরিক সীমান্তরক্ষীদের ধৈর্য ধরতে নির্দেশ দিয়েছেন। সংবাদপত্রের সূত্র দিয়ে বলা হচ্ছে, ‘বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

শরণার্থীদের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সরকারের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলে সীমান্তের কাছে একজন বাংলাদেশি নারী ও একজন রোহিঙ্গা নিহত এবং একজন শিশু আহত হয়েছে।’ সীমান্তে বাংলাদেশের পাশের অনেক বাসিন্দা ভয়ে সহিংসতা থেকে দূরে আত্মীয়দের বাড়িতে পালিয়ে গেছে। সীমান্তের ওপারে সংঘাতের প্রভাব বাংলাদেশি পক্ষের বাসিন্দারাও অনুভব করছেন। কিন্তু সামরিক বাহিনীর যারা এদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের বিষয়ে উদারতা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই।

সব মিলে সরকারকে মনে রাখতে হবে, ২০২১ সাল থেকে আজ অবধি (২০২৪) মিয়ানমার সেনাবাহিনী তার শাসনের বিরোধিতাকারী লক্ষাধিক লোকের ওপর দেশব্যাপী নৃশংস দমন-পীড়ন চালিয়েছে। জান্তা নিরাপত্তা বাহিনী গণহত্যা, নির্বিচারে গ্রেফতার, নির্যাতন, যৌন সহিংসতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, যা মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য। এজন্য জান্তা বাহিনীর সদস্যদের আশ্রয় দেওয়ার আগে ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করতে পারলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সহজ হতে পারে।

লেখক : বঙ্গবন্ধু গবেষক, বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

এইচআর/ফারুক/এএসএম